Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- ২০২৫ সালের ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয়বার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিতে যাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর তার ঠিক একদিন আগে, অর্থাৎ, ১৯ জানুয়ারি আমেরিকায় নিষিদ্ধ হতে চলেছে সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ ‘টিকটক’। এক নতুন আইনের মাধ্যমে তাদের শর্ত দেওয়া হয়েছে, মূল চিনা সংস্থা ‘বাইটড্যান্স’-এর থেকে বিচ্ছিন্ন হতে হবে এই সংস্থাকে। না হলে নিষেধাজ্ঞার কোপে পড়তে হবে। গত শুক্রবার, মার্কিন ফেডারেল বিচারকদের একটি প্যানেল সর্বসম্মতিক্রমে আইনটি বহাল রেখেছে। এদিকে, ১ কোটি ৭০ লক্ষেরও বেশি মার্কিনি এই সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করেন। অনেকের রোজগার নির্ভর করছে এই অ্যাপের উপর। এই নিষেধাজ্ঞা নিঃসন্দেহে তাদের কাছে একটা খুব বড় ধাক্কা হতে চলেছে।
টিকটক অবশ্য জানিয়েছে, তারা এই রায়ের বিরুদ্ধে মার্কিন সুপ্রিম কোর্টে আপিল করবে। তাদের ভরসা আমেরিকার বাকস্বাধীনতাকে প্রাধান্য দেওয়ার ইতিহাস। টিকটকের মার্কিন মুখপাত্র মাইকেল হিউজ বলেছেন, ‘আমেরিকানদের বাকস্বাধীনতার অধিকার রক্ষার জন্য সুপ্রিম কোর্টের সুপ্রতিষ্ঠিত ইতিহাস রয়েছে। আমরা আশা করি এই গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক ইস্যুতে তারা সেটাই করবে। টিকটকের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে না নিলে ১ কোটি ৭০ লক্ষেরও বেশি আমেরিকার কণ্ঠরোধ করা হবে।’ তবে এখনও পর্যন্ত বাইটড্যান্স থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার কোনও ইঙ্গিত তারা দেয়নি।
টিকটকের মারফত, মার্কিন জনতার অনেক সংবেদনশীল তথ্য আদায় করে চিন সরকার। এটাই মার্কিনিদের ভয়। যদিও, এর কোনও বাস্তব প্রমাণ নেই। তবে, মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট সম্ভবত বিষয়টিকে জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন হিসেবেই দেখবে। ট্রাম্প তাঁর আগের জমানাতেই দেশের শীর্ষ আদালত রক্ষণশীল বিচারকে ভরিয়ে দিয়েছিলেন। তাদের প্রভাব এখনও অটুট। তাই আইন বহাল রাখার পক্ষেই রায় দিতে পারে সুপ্রিম কোর্ট। আবার, মামলাটি পর্যালোচনা না করার সিদ্ধান্তও নিতে পারে। সেই ক্ষেত্রে টিকটকের দ্বিতীয় ভরসা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প, আমেরিকায় টিকটক নিষিদ্ধ করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু, তাঁর সাম্প্রতিক অবস্থান পুরো উল্টো।
আরো পড়ুন:- চাপে পড়ে নতিস্বীকার, সব ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক ইউনূসের, জানতে পড়ুন বিস্তারিত
গত জুনে তিনি টিকটকেই একটি ভিডিয়ো পোস্ট করে বলেছিলেন, ‘আমি কখনও টিকটককে নিষিদ্ধ করব না।’ আর সেপ্টেম্বরে ভোট এগিয়ে আসার পর বলেছিলেন, ‘যাঁরা আমেরিকায় টিকটককে বাঁচাতে চান, তাঁরা সকলে আমায় ভোট দিন। টিকটককে নিষিদ্ধ করার অর্থ, শুধু মেটা এবং মার্ক জুকেরবার্গকে সাহায্য করা।’ তবে তিনি ক্ষমতায় আসার একদিন আগেই এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হতে চলেছে। তাই সরাসরি তাঁর পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়।
তিনি মার্কিন কংগ্রেসকে আইনটি বাতিল করতে বলতে পারেন। যদিও রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, মার্কিন কংগ্রেস রাজি হবে না। সেই ক্ষেত্রে তাঁর হাতে আরও দুটি বিকল্প রয়েছে। তিনি তাঁর নতুন অ্যাটর্নি জেনারেলকে আইনটি প্রয়োগ না করার নির্দেশ দিতে পারেন। দ্বিতীয় বিকল্পটি এই আইনেরই একটি ফাঁক। আইন অনুযায়ী, চিনা মালিকের থেকে টিকটকের বিচ্ছেদ ঠিকঠাক হয়েছে কি না তা যাচাই করতে পারেন প্রেসিডেন্ট। এই যুক্তিতে বিষয়টি নিজের হাতে নিতে পারেন ট্রাম্প। তার পর, সত্যি যদি নাও হয়, তা সত্ত্বেও ঘোষণা করতে পারেন যে, সত্যিই তাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে গিয়েছে।
তবে, সমস্যায় পড়তে পারে অ্যাপ স্টোরগুলি। আইনে বলা হয়েছে, টিকটক যদি চিনা মালিকানা মুক্ত না হয় এবং অ্যাপ স্টোরগুলিতে ১৯ জানুয়ারির পরও টিকটক থেকে যায়, সেই ক্ষেত্রে তাদের মোটা অর্থ জরিমানা দিতে হবে। তাহলে ইউজ়ারদের কী হবে? তাঁরা কি অন্য কোনও সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম বেছে নেবে?
সেটা সমস্যার। প্রতিটি প্ল্যাটফর্মের নিজস্ব অ্যালগরিদম থাকে। সেই অনুযায়ী অর্থ উপার্জন করা যায়। কাজেই, টিকটকে যিনি কন্টেন্ট নির্মাতা হিসেবে সফল, তিনি অন্য কোথাও সেই সাফল্য নাও পেতে পারেন। যেমন লাইফস্টাইল কন্টেন্ট নির্মাতা ক্যারি বার্ক জানিয়েছেন, তাঁর আয়ের একটা বড় অংশ আসে টিকটক থেকে। তাই আমেরিকায় এটি বন্ধ হয়ে যাক, তিনি চান না।
তবে, অধিকাংশ আমেরিকান টিকটকারই আশাবাদী, শেষ পর্যন্ত সেটা হবে না। তারা বলছে, ২০২০ সাল থেকে টিকটক নিষিদ্ধ হওয়ার নিয়ে অনেক আলোচনা শুনেছে। এখনও পর্যন্ত কিছুই হয়নি। তাই, আগামী দিনেও হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। হয়তো কিছুটা সীমাবদ্ধ করা হবে। কিন্তু, পুরোপুরি বাতিল হবে না বলে আশাবাদী তারা।
ক্যারি বার্কের মতো লক্ষ লক্ষ মার্কিনির আয় নির্ভর করে এই অ্যাপটির উপর। তাদের রোজগার কি বন্ধ হয়ে যাবে? আরও কয়েক লক্ষ রোজ অ্যাপটিতে আসে তথ্যের খোঁজে। বিনোদনের খোঁজে। কোথায় যাবে তারা? ট্রাম্পেরও টিকটকে ১ কোটি ৪৬ লক্ষের মতো ফলোয়ার রয়েছে। তিনি কি এত সহজে তা হারাতে দেবেন? না কি শেষ পর্যন্ত আপোষের রাস্তায় হাঁটবে টিকটক? আমেরিকায় টিকটকের ভবিষ্যৎ ঘিরে অনেকগুলো প্রশ্ন ঘুরছে। উত্তরগুলো কুয়াশাবৃত।