হার্টের অন্দরেই লুকিয়ে ছোট্ট নিজস্ব ‘ব্রেন’, দাবি গবেষণায়,

By Bangla News Dunia Desk Bappaditya

Published on:

Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- সাহিত্যে হৃদয়কে একাসনে বসানো হয় হার্ট বা হৃদযন্ত্রের সঙ্গে। বিজ্ঞান অবশ্য বরাবরই বলে, হৃদয় আসলে হার্ট নয়, হৃদয় কিংবা মন— সব কিছুর অস্তিত্বই আদতে মস্তিষ্কের অন্দরে। এ বার অবশ্য একটি ইউরো-মার্কিন গবেষণা অনেকাংশে মিলিয়ে দিল সাহিত্য আর বিজ্ঞানকে। বলা ভালো, হার্ট আর ব্রেনকে।

কারণ, বিখ্যাত বিজ্ঞান পত্রিকা ‘নেচার কমিউনিকেশনস’ জার্নালে বেরোনো গবেষণাপত্রে দাবি করা হয়েছে, হৃদযন্ত্রের মধ্যেই থাকে হার্টের একটি নিজস্ব ব্রেন। মাথায় থাকা মস্তিষ্কের নির্দেশ ছাড়াই সে জন্যে বেশ কিছু কাজ নিজে থেকেই করতে পারে হার্ট, তার নিজস্ব ‘ব্রেন’-এর কল্যাণে।

আরো পড়ুন:- ল্যাব থেকে নিখোঁজ ৩০০ প্রাণঘাতী ভাইরাস, ফের মহামারির শঙ্কা?

শরীরের অন্যতম জটিল অঙ্গ হৃদযন্ত্রের কাজকর্মের সব রহস্যের হদিশ এখনও মেলেনি বিজ্ঞানে। এত দিন মনে করা হতো, হার্টের মধ্যে যে স্নায়ুর বিন্যাস রয়েছে, তা কাজ করে মস্তিষ্কের নির্দেশ মেনে।

কিন্তু সুইডেনের ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউট এবং নিউ ইয়র্কের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির একটি সাম্প্রতিক যৌথ গবেষণা বলছে, হৃদযন্ত্রের অভ্যন্তরীণ স্নায়বিক নেটওয়ার্ক শুধু মস্তিষ্কের নির্দেশ মেনে হৃদস্পন্দনের ছন্দ বজায় রাখে না, আরও অনেক কিছুই করে একেবারে স্বতন্ত্র ভাবে। এবং সে কাজ হার্ট করে তার ‘ইন-বিল্ট’ ব্রেনের সঙ্কেত মোতাবেক। চিকিৎসকেরা বলছেন, এই আবিষ্কার নতুন দিগন্ত খুলে দিল কার্ডিয়োলজিক্যাল চিকিৎসায়।

কারণ, নতুন এই গবেষণায় বলা হয়েছে, হার্টরেট কেমন থাকবে, তা হৃদযন্ত্র নিজেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে মস্তিষ্কের নির্দেশ ছাড়াই এবং নিজস্ব ব্রেন’-এর ইশারায়। এবং সেই সঙ্কেত বহন করে হার্টের একেবারে নিজস্ব ও স্বতন্ত্র স্নায়ুর নেটওয়ার্ক, যার সঙ্গে শরীরের আর কোনও স্নায়ুর মিল নেই। এই স্বাধীন ব্যবস্থার জেরেই হার্টের প্রাকৃতিক পেসমেকার কাজ করে এবং হার্টের এই স্থানীয় স্তরের নিয়ন্ত্রণ মেনেই হৃদযন্ত্রে ছন্দ ঠিক রাখার কাজ নিরন্তর করে চলে অ্যাসিটাইলকোলিন, গ্লুটামেট, সেরোটোনিনের মতো নিউরো-ট্রান্সমিটার রাসায়নিকগুলি।

মানুষের হার্টের গঠন ও কাজকর্মের সঙ্গে প্রায় হুবহু মিল থাকায় জেব্রাফিশের হার্টের উপরে গবেষণা চালিয়ে এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন দুই ঐতিহ্যশালী প্রতিষ্ঠানের গবেষকরা। দেখা গিয়েছে, জেব্রাফিশের হৃদযন্ত্রের সাইনো-আট্রিয়াল প্লেক্সাস, যা কিনা পেসমেকার হিসেবে কাজ করে, তার স্নায়ু–বিন্যাস এক দিকে যেমন মস্তিষ্কের নির্দেশ মানে, পাশাপাশি তেমনই কাজ করে হার্টের নিজস্ব ‘ব্রেন’-এর সঙ্কেত মেনেও।

গবেষকরা অবাক হয়েছেন ওই সব স্নায়ুগুচ্ছকে অনেকটা পেসমেকারের মতো আচরণ করতে দেখে। সেই আচরণের পিছনে বিন্দুমাত্র নিয়ন্ত্রণ ছিল না মগজের। আগামী দিনে হার্টবিট সংক্রান্ত চিকিৎসার অগ্রগতির ক্ষেত্রে এই গবেষণার প্রভূত ভূমিকা থাকবে বলেই মনে করছেন চিকিৎসকরা।

যদিও এ নিয়ে আগেও গবেষণা হয়েছে বলে জানাচ্ছেন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ শুভ্র বন্দোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘মস্তিষ্কের সঙ্কেত ছাড়া যে হার্ট নিজে থেকেও কিছু কিছু কাজ করতে পারে, তা বিজ্ঞানে অজানা ছিল না। জানা ছিল, ভেগাস নার্ভ কেমন ভাবে কাজ করে। তবে এই গবেষণাটিতে পুরো বিষয়টি আরও বিস্তারিত ও সুচারু ভাবে তুলে ধরা হয়েছে জেব্রাফিশের হার্টের কার্যকলাপ ব্যাখ্যার মাধ্যমে। আগামী দিনে তা নতুন চিকিৎসায় দিশা দেখাবে।’

আর এক হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ প্রকাশ হাজরা আবার মনে করেন, এ নিয়ে আরও বিশদে গবেষণা দরকার। কেননা, অটো-রেগুলেশনের বিষয়টি শুধুমাত্র হার্টের ক্ষেত্রেই নয়, প্রকৃতি–নির্ধারিত প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের ক্ষেত্রেই চলে যেখানে মস্তিষ্কের হস্তক্ষেপ ছাড়াই কিছু কিছু কাজ সংশ্লিষ্ট অঙ্গ নিজেই করতে সক্ষম।

আরো পড়ুন:- মাশরুমের উপকারিতা জুরি মেলা ভার ! কি জানালেন পুষ্টিবিদ?

Bangla News Dunia Desk Bappaditya

মন্তব্য করুন