ডেঙ্গির ওষুধ আসা শুধু সময়ের অপেক্ষা, জানুন কবে আসবে

By Bangla News Dunia Desk Bappaditya

Published on:

Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- সারা দুনিয়ায় ডেঙ্গির কোনও প্রত্যক্ষ চিকিৎসা এখনও নেই। মশাবাহিত এই সংক্রমণের চিকিৎসা হয় মূলত উপসর্গভিত্তিক। এ বার সেই ডেঙ্গিরও প্রত্যক্ষ চিকিৎসা হাতের নাগালে পাওয়ার জোর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। সৌজন্যে সিরাম ইনস্টিটিউট।

ডেঙ্গি ভাইরাসকে ‘নিউট্রালাইজ’ করার জন্য মোনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি আনতে চলেছে এই সংস্থা, যে অ্যান্টিবডি সরাসরি হারিয়ে দেবে চার রকম ডেঙ্গি ভাইরাসকে। প্রথম দু’টি পর্বে সাফল্য মেলার পর তৃতীয় ও চূড়ান্ত পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল অচিরেই শুরু হতে চলেছে দেশে।

বাংলার একমাত্র চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান হিসেবে আগামী মাসে সেই ট্রায়ালে সামিল হওয়ার কথা এনআরএস হাসপাতালের। ওষুধটা এলে মোকাবিলা করা যাবে সংক্রমণের জটিলতাকে। সিভিয়ার ডেঙ্গিকেও রুখে দেওয়ার সুফল হিসেবে বহু মৃত্যু এড়ানো যাবে বলেই মনে করছেন চিকিৎসকরা।

আরো পড়ুন:- সুখবর! ১৯,৯০০ টাকা বেতন, মাধ্যমিক পাশে ভারতীয় পোস্ট অফিসে প্রচুর কর্মী নিয়োগ! শীঘ্রই এভাবে আবেদন করুন

প্রতি বছর সারা পৃথিবীর সঙ্গে ভারতেও, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে অসংখ্য মানুষ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হন। উত্তরবঙ্গ থেকে শুরু করে দক্ষিণবঙ্গ, রাঢ়বঙ্গ ও পশ্চিমাঞ্চলে বহু মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। ২০২২–এ বাংলায় মোট ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৬৭,২৭১। গত বছর সেই সংখ্যাটাই ১ লক্ষ টপকেছিল। শতাধিক ডেঙ্গি-মৃত্যু হয়েছিল এই দুই বছরে। এই বছর ডিসেম্বরের মাঝামাঝি রাজ্যে ডেঙ্গি আক্রান্তের সেই সংখ্যাটা ৩০ হাজার পেরিয়েছে। মরশুমের শেষে সংখ্যাটা ৩৫ হাজার ছুঁয়ে ফেলবে বলেই আশঙ্কা।

এ বছরেও অনেক মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গির সংক্রমণে। অতীতের মতো যার নেপথ্যে ছিল সিভিয়ার ডেঙ্গি এবং এই সংক্রমণ সংক্রান্ত নানা জটিলতা। বরাবর যেখানে মশাবাহিত এই সংক্রমণে মূলত কাবু হতো দক্ষিণবঙ্গ, বিশেষত কলকাতা ও সংলগ্ন জেলাগুলি, সেখানে চলতি বছর ডেঙ্গির হানা থেকে মুক্ত নয় উত্তরবঙ্গও। ডেঙ্গির সংক্রমণে জলপাইগুড়ি ও মালদা এ বছর বাড়তি মাথাব্যথার কারণ স্বাস্থ্যকর্তাদের কাছে। আশঙ্কা, আগামী দিনে দক্ষিণবঙ্গের মতো উত্তরবঙ্গেও সমান তালে দাপিয়ে বেড়াবে ডেঙ্গি। ফলে এমন সন্ধিক্ষণে নতুন ওষুধ আসার সম্ভাবনায় আশার আলো দেখছেন চিকিৎসকরা।

সিরামের তৈরি ‘ডেঙ্গি-শিল্ড’ নামের এই মোনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল উতরে গিয়ে অদূর ভবিষ্যতে দেশের ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন পেলে, বহু অকালমৃত্যু আটকে দেওয়া যাবে বলে মনে করছেন অলোকেশ কোলের মতো মেডিসিন এবং রোহিত কাপুরের মতো শিশুরোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। আপাতত বিভিন্ন ট্রায়াল সেন্টারের এথিক্স কমিটিতে এই ট্রায়ালের জন্য অনুমতি নেওয়ার পর্ব চলছে।

স্বাস্থ্য সূত্রে খবর, সারা দেশের ২০টি ট্রায়াল সেন্টারে ৫-১৪ বছরের বেশি বয়সি শিশু এবং ১৮ বছরের বেশি বয়সি প্রাপ্তবয়স্ক মিলিয়ে মোট ৬০০ জনকে এই থার্ড ফেজ় ট্রায়ালে অংশগ্রহণ করানো হবে। জ্বর আসার ৪৮ ঘণ্টার মাথায় চিহ্নিত ডেঙ্গি রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে তাঁদের উপর প্রয়োগ করা হবে এই ডেঙ্গি মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি (Dengue-mAb) থেরাপি।

স্পনসর সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, ভর্তি হওয়া ওই ডেঙ্গি রোগীদের মধ্যে অর্ধেককে এই থেরাপি দেওয়া হবে এবং বাকিদের দেওয়া হবে না। তার পর দুই গোষ্ঠীর রোগীদের স্বাস্থ্যের উন্নতি সংক্রান্ত তুলনামূলক বিচার হবে। তবে এটি যেহেতু একটি ‘ডাবল ব্লাইন্ড’ ট্রায়াল, তাই কোন রোগী এই থেরাপি পাবেন আর কে পাবেন না, তা চিকিৎসক বা রোগী, কেউ-ই জানতে পারবেন না। সেই তথ্য একমাত্র থাকবে স্পনসর সংস্থা সিরামের কাছে।

জানা গিয়েছে, প্রথম পর্বের অ্যানিমাল ট্রায়ালের পর দ্বিতীয় পর্বে হিউম্যান ট্রায়ালের সময়ে প্রথমে এই মোনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি অস্ট্রেলিয়ায় ৪০ জনের উপর এবং পরে ভারতের ২৫০ জনের উপর প্রয়োগ করা হয়েছিল।

দু’টি ট্রায়ালেই এই থেরাপির সুরক্ষা নিয়ে সমস্যা হয়নি। এখন দেখার, ওষুধটি কতটা কার্যকর। একটি বেসরকারি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ফেসিলিটেটর সংস্থার সর্বভারতীয় কর্তা স্নেহেন্দু কোনার বলেন, ‘অ্যান্টিবডি হলো এক ধরনের প্রোটিন যা আমাদের শরীরের প্রতিরক্ষা বা ইমিউনিটি ব্যবস্থায় স্বাভাবিক ভাবে তৈরি হয়। এবং সংক্রমণ কিংবা টিকার প্রতিক্রিয়ায় সেটি তৈরি হওয়ার পরে ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়ার মতো হামলাকারী জীবাণুকে নিকেশ করে। সংক্রমণের শিকার হওয়ার পর অ্যান্টিবডি তৈরি হতে কিছুটা সময় লাগে। সেই সময়টা নষ্ট না-করে বাইরে থেকে মোনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি প্রয়োগ করা হলে দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আসে সংক্রমণ।’ তিনি জানান, এই ট্রায়ালেরও লক্ষ্য সেটাই হওয়া উচিত যে কত তাড়াতাড়ি ও দক্ষ ভাবে সংক্রমণমুক্তি ঘটাতে সক্ষম নতুন এই ওষুধটি।

আরো পড়ুন:- দেশি’ এবং ‘বিদেশি’ মুসলমানদের লড়াই, বিস্ফোরক দাবি যোগীর

 

 

Bangla News Dunia Desk Bappaditya

মন্তব্য করুন