ইন্দিরার এক সিদ্ধান্তে বন্ধ হয় সারা দেশে একসঙ্গে ভোট ! জানুন অজানা ইতিহাস

By Bangla News Dunia Dinesh

Published on:

 

Bangla News Dunia , দীনেশ : দেশে একসঙ্গে লোকসভা ও বিধানসভা ভোট (One Nation, One Election) করাতে মরিয়া নরেন্দ্র মোদির সরকার। সেই কারণে প্রবল বিরোধিতার মধ্যেই মঙ্গলবার লোকসভায় দুটি বিল পেশ করেছে কেন্দ্র। সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে মোদি সরকারের পক্ষে এক দেশ, এক ভোট ব্যবস্থা পুনরায় কায়েম করা খুব একটা কঠিন কাজ নয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যদি সত্যিই দেশের এক দেশ, এক ভোট ব্যবস্থা কায়েম করতে সফল হন তাহলে দীর্ঘ পাঁচ দশকের বেশি সময় পর ভারতে ফের একসঙ্গে নির্বাচন হতে পারে।

আরো পড়ুন:- তৈরি হয়ে গিয়েছে ক্যান্সারের টিকা, বড় দাবি রাশিয়ার। কবে থেকে দেওয়া হবে, জানিয়ে দিলো

দেশের নির্বাচনি ইতিহাস বলছে, স্বাধীনতার পর ১৯৫১-৫২ সালের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে লোকসভা এবং রাজ্যগুলির বিধানসভা ভোট একসঙ্গেই হয়েছিল। স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু এবং তাঁর উত্তরসূরী লালবাহাদুর শাস্ত্রীর আমল পর্যন্ত এই ব্যবস্থা দিব্যি চলেছিল। ১৯৬৭ সালে শেষবার দেশে একসঙ্গে লোকসভা এবং বিধানসভাগুলির ভোট হয়েছিল। কিন্তু সেবার কেন্দ্রে ক্ষমতা দখল করে রাখতে সমর্থ হলেও পশ্চিমবঙ্গ সহ একাধিক রাজ্যের বিধানসভা ভোটে ভরাডুবি ঘটে কংগ্রেসের। আদি বনাম নব কংগ্রেসের দ্বন্দ্ব ক্রমশ মাথাচাড়া দিতে শুরু করে। যা ইন্দিরা গান্ধির পক্ষে মেনে নেওয়া কঠিন ছিল।

কংগ্রেসে ভাঙনের পর কেন্দ্রে কোনওরকমে সরকার টিকিয়ে রাখলেও ইন্দিরা চাইছিলেন একচ্ছত্র ক্ষমতা। ফলে ১৯৭২ সালে লোকসভা ভোট হওয়ার কথা থাকলেও তা ১৫ মাস এগিয়ে আনেন তিনি। ১৯৭০ সালের ২৭ ডিসেম্বর রাতে লোকসভা ভেঙে দিয়ে নতুন করে নির্বাচনে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেন ইন্দিরা গান্ধি (Indira Gandhi)। একসঙ্গে লোকসভা ও বিধানসভা ভোট করানোর রীতিতে সেই প্রথম ধাক্কা। প্রয়াত নেত্রী সেসময় ঘোষণা করেছিলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা আমাদের প্রস্তাবিত কাজগুলি এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছি না। মানুষের কাছে যে অঙ্গীকারগুলি করেছিলাম তাও পালন করতে পারছি না। আমরা শুধুমাত্র ক্ষমতায় টিকে থাকতে চাই না। বরং সেই ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে আমাদের জনসাধারণের বিপুল অংশ যাতে ভালোভাবে বাঁচতে পারে তা সুনিশ্চিত করতে চাই।

আরো পড়ুন:- পশ্চিমবঙ্গে শুরু চাকরির মেলা। নিজে গিয়ে ইন্টারভিউ দিয়ে কাজের সুযোগ, কবে কোথায়, জেনে নিন

ইন্দিরা গান্ধির বিরুদ্ধে সেইসময় আদি কংগ্রেসের বাঘা বাঘা সমস্ত নেতারা ছিলেন। মোরারজি দেশাই, কে কামরাজ, নিজলিঙ্গাপ্পা, অতুল্য ঘোষ, নীলম সঞ্জীব রেড্ডির মতো আরও কত নাম। আদি কংগ্রেসের সঙ্গে তলে তলে যোগাযোগ রাখছিল জনসংঘ, সোস্যালিস্ট পার্টির মতো শক্তিগুলিও। ফলে ১৯৭১ সালের নির্বাচনি লড়াইয়ে ইন্দিরার হাতে পুঁজি বলতে ছিল সামান্যই। ১৯৬৭ সালে তিনি ডাক দিয়েছিলেন গরিবি হটাওয়ের। এরপর ব্যাংক জাতীয়করণ, কয়লা খনিগুলির জাতীয়করণ, রাজন্যভাতা বিলোপের মতো একাধিক সমাজতান্ত্রিক এবং জনপ্রিয় সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁর এই সিদ্ধান্তগুলি ভালো চোখে নেননি সিন্ডিকেট কংগ্রেসের সদস্যরা। তাঁর এহেন স্বাধীনচেতা চিন্তাভাবনা এবং পদক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করেছিল সিন্ডিকেট। ফলে কংগ্রেসে ভাঙন ধরেছিল। দেশে যখন কংগ্রেস বিরোধী সুর ক্রমশ চড়ছে তখন নব কংগ্রেসকে নিয়ে কীভাবে সাফল্য আসবে তা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন ইন্দিরা।

শেষমেশ তাঁর সচিব পিএন হাকসারের পরামর্শে ১৯৭১ সালে অন্তর্বর্তী নির্বাচনের পথে হাঁটেন ইন্দিরা। তাতে বিপুল জয় পায় তাঁর দল। ৩৫২টি আসনে জয়ী হয়েছিল নব কংগ্রেস। আদি কংগ্রেস জিতেছিল মাত্র ১৬টি আসন। একসঙ্গে ভোট করানোর প্রথা ভারতের সংবিধানে কোথাও বলা নেই। কিন্তু নেহরুর আমলে প্রথম সাধারণ নির্বাচন থেকে যে রেওয়াজ শুরু হয়েছিল নিজের পায়ের তলার মাটি শক্ত করতে গিয়ে সেই প্রথা ভেঙেছিলেন নেহরু-কন্যা। দীর্ঘ পাঁচ দশক পর হারানো পরম্পরাকে ফিরিয়ে আনাটাই এখন প্রবল নেহরু-গান্ধি পরিবার বিরোধী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রধান চ্যালেঞ্জ।

আরো পড়ুন:- সুখবর! ১৯,৯০০ টাকা বেতন, মাধ্যমিক পাশে ভারতীয় পোস্ট অফিসে প্রচুর কর্মী নিয়োগ! শীঘ্রই এভাবে আবেদন করুন

 

 

Bangla News Dunia Dinesh

মন্তব্য করুন