Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- এক বছরে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে প্রায় সাড়ে সাতগুণ। শুধু তা-ই নয়, আর এক পড়শি দেশ পাকিস্তানের তুলনায় চলতি বছরে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর হিংসার ঘটনা প্রায় ২০ গুণ বেশি। রাজ্যসভায় বিদেশ মন্ত্রকের তরফে পেশ করা তথ্যে এমনই উদ্বেগজনক ছবি উঠে এল।
কেন্দ্রীয় বিদেশ প্রতিমন্ত্রী কীর্তিবর্ধন সিং রাজ্যসভায় এক লিখিত প্রশ্নের জবাবে যে তথ্য-পরিসংখ্যান পেশ করেছেন, সেই অনুযায়ী, গত ৫ অগস্ট বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরে হিন্দু সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের ঘটনা সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। সংখ্যালঘু নির্যাতনের একের পর এক ঘটনা, রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় হিন্দু সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর গ্রেপ্তারি— এই রকম বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে বারবার মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উপর চাপ তৈরি করেছে ভারত।
আরো পড়ুন:– হাওড়া শাখায় ১ মাসের বেশি বাতিল বহু লোকাল, ভোগান্তি এড়াতে দেখে নিন তালিকা
গত ৯ অগস্ট ঢাকা সফরে গিয়ে ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রিও সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছেন। ইউনূসের প্রশাসন প্রথমে এই সব অভিযোগকে সে ভাবে গুরুত্ব দেয়নি। বরং ভারতীয় মিডিয়ার একাংশের ‘বাড়াবাড়ি’ বলে মন্তব্য করতে শোনা গিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের একাধিক উপদেষ্টাকে। এই আবহে বিদেশ মন্ত্রকের পরিসংখ্যান যথেষ্ট উদ্বিগ্ন করার মতো বলে মনে করছেন কূটনৈতিক মহলের একাংশ।
বিদেশ মন্ত্রকের তথ্য বলছে, ২০২২-এ যেখানে বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতনের ৪৭টি ঘটনা ঘটেছিল, ২০২৩-এ তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩০২-এ। আর চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত সংখ্যাটা ২২০০, যার মধ্যে বেশির ভাগই হাসিনা সরকারের পতনের পরে। উল্টো দিকে, পাকিস্তানে এই তিন বছরে হিন্দুদের উপর হিংসার ঘটনার সংখ্যা যথাক্রমে ২৪১, ১০৩ ও ১১২।
মিস্রির ঢাকা সফরের পরে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম পরিসংখ্যান দিয়ে জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশে আওয়ামি লিগ সরকারের পতনের পর ৫ আগস্ট থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত সংখ্যালঘুদের উপর হামলার ঘটনায় ৮৮টি মামলা হয়েছে। এ সব মামলায় ৭০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই গ্রেপ্তারি ধারাবাহিক ভাবে চলছে বলেও তিনি দাবি করেছিলেন। যদিও ভারতের বিদেশ মন্ত্রক বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী ও মানবাধিকার সংগঠনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে যে পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে, তা শফিকুলের দেওয়া পরিসংখ্যানের তুলনায় যে অনেক বেশি, তা বলাই বাহুল্য।
আরো পড়ুন:– Instagram ও Threads-এ বড় বদল আনল মেটা, কী সুবিধা হবে এ বার? জেনে নিন
কংগ্রেস, তৃণমূলের মতো বিরোধী দলগুলি বারবারই কেন্দ্রকে জানিয়েছে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে ঢাকার উপর চাপ বাড়ানো প্রয়োজন। পাশাপাশি সংসদে এ নিয়ে আলোচনা করা এবং মিস্রির সফর নিয়ে বিস্তারিত জানানোর দাবি তুলেছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রের তরফে রাজ্যসভায় জানানো হয়েছে, ‘বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের ঘটনাগুলিকে ভারত সরকার অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছে এবং এই উদ্বেগ বাংলাদেশ সরকারকে জানানো হয়েছে। হিন্দু ও সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা এবং তাঁদের উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ সরকার সবরকম প্রচেষ্টা চালাবে বলে বলে ভারত প্রত্যাশা করে।’
কীর্তিবর্ধনের সংযোজন, ‘ভারত সরকার এই ঘটনাগুলিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিদেশ সচিব বাংলাদেশ সফরে গিয়ে ভারত সরকারের এই বক্তব্য স্পষ্ট জানিয়ে এসেছেন।’ পাশাপাশি বিদেশ মন্ত্রকের তরফে এ-ও বলা হয়েছে, ‘পাকিস্তানেও সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে ডিপ্লোমেটিক চ্যানেলে ভারত সরকার তার উদ্বেগ জানিয়েছে এবং ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা, সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন ও হিংসা রুখতে পাকিস্তান সরকারকে পদক্ষেপের আর্জি জানানো হয়েছে। উপযুক্তি আন্তর্জাতিক ফোরামেও ভারত সরকার বিষয়টি উত্থাপন করেছে।’
ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের পেশ করা তথ্যের প্রেক্ষিতে শুক্রবার আর নতুন করে বাংলাদেশের তরফ থেকে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। তবে শুধু হিন্দু সংখ্যালঘু নয়, যে ভাবে পড়শি দেশে আওয়ামি লিগের সমর্থক মুসলিম নেতা-কর্মীদেরও হত্যার অভিযোগ উঠে আসছে, তা নিয়েও উদ্বিগ্ন কূটনৈতিক মহলের বড় অংশ।
আরো পড়ুন:- হেয়ার অয়েল নাকি ভোজ্য তেল? নারকেল তেল নিয়ে বড় রায় সুপ্রিম কোর্টের