ভারতীয় অর্থনীতি, ব্যবসা, শিল্পোদ্যোগের জন্য কেমন ছিল 2024 ? বিস্তারিত জানুন

By Bangla News Dunia Desk Bappaditya

Published on:

Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘প্রতিটি সংকটেই নতুন সুযোগের সম্বাবনা লুকিয়ে থাকে ৷’ ভারতের শেয়ারবাজার, ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্র, বিনিয়োগ বাজার, নির্মাণ শিল্প, গাড়ির বাজার, নতুন উদ্যোগ— সব মিলিয়ে নানা উত্থান-পতন, চমক-বিপর্যের সম্মুখীন হয়েছে ভারত ৷ শেষ হতে চলল 2024 সাল ৷ আর কয়েকটা দিন পরেই শুরু হচ্ছে নতুন বছর ৷ ভারতীয় অর্থনীতি, ব্যবসা, শিল্পোদ্যোগের জন্য কেমন ছিল 2024 ? নানা ঘটনায় তার আভাস নেওয়া যাক…

বিমানে 999 বার বোমার হুমকি:

এই বছর দুটি এয়ারলাইন্স বন্ধ হয়ে গেছে এবং একটি এয়ারলাইন দেউলিয়া হওয়ার পথে রয়েছে। অন্যদিকে, বিমান যাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে৷ এর জেরে দৈনন্দিন অভ্যন্তরীণ বিমান যাত্রীর সংখ্যা পাঁচ লাখ ছাড়িয়ে গিয়েছে ৷ এই বছরের 14 নভেম্বর পর্যন্ত বিমান দেশে পরিষেবা দেওয়া বিমান সংস্থাগুলি 999 বার ভুয়ো বোমার হুমকি মেল/ফোন পেয়েছে ৷ দিল্লি বিমানবন্দরের টার্মিনাল-1-এর ছাদ ধসে পড়ার মতো দুর্ঘটনাও ঘটেছে এ বছর ৷

আরো পড়ুন:– ধোনির রাঁচির বাড়িতে বেআইনি কার্যকলাপ? বিস্তারিত জানতে পড়ুন …

 

বাজারে 90টি কোম্পানির IPO:

এই বছর 90টি কোম্পানি আইপিওর মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে 1.6 লাখ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে। হুন্দাই মোটর ইন্ডিয়া, সুইগি, এনটিপিসি গ্রিন এনার্জি, বাজাজ হাউজিং ফাইন্যান্স, ওলা ইলেকট্রিক মোবিলিটির মতো অনেক কোম্পানি আইপিওর মাধ্যমে বাজার থেকে লক্ষ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে ৷ পাশাপাশি, বিনিয়োগ এবং মুনাফার সুযোগ পেয়েছেন শেয়ারকারবারী থেকে সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও ৷ গত বছর অর্থাৎ 2023 সালে, 57টি কোম্পানি আইপিও থেকে 49,436 কোটি টাকা সংগ্রহ করেছিল। 2021 সালে, 63টি কোম্পানি আইপিও থেকে 1.2 লাখ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছিল। 2024 সালে 2021 সালের সেই রেকর্ডকেও ছাপিয়ে গিয়েছে ৷

সোনা-রুপোর দামের রেকর্ড বৃদ্ধি:

2024 সালে সোনার দাম রেকর্ড 30 শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে । ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের (ডব্লিউজিসি) সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। এই বছর রুপোর দাম কেজি প্রতি 1 লক্ষ টাকার গণ্ডি ছাড়িয়ে গিয়েছে। পাশাপাশি, প্রতি 10 গ্রাম সোনার দাম 80 হাজার টাকা সর্বকালীন রেকর্ড দর ছাড়িয়ে যায়। এই দর বৃদ্ধিতে ক্রেতারা সমস্যায় পড়লেও সোনা-রুপোয় যাঁরা বিনিয়োগ করেছেন, তাঁরা অনেকটাই (18-20 শতাংশ) বৃদ্ধির মুখ দেখেছেন ৷

গাড়ির বাজারে বিক্রি বেড়েছে:

এ বছর অটোমোবাইল খাতে অনেক নতুন রেকর্ড তৈরি করেছে। কোম্পানিগুলি বাজারে অনেক নতুন গাড়ি লঞ্চ করেছে, যা বাজারে বেশ চাহিদা সৃষ্টি করেছে। কিছু নতুন ইলেকট্রিক গাড়িও চলতি বছরে বেশ চর্চায় রয়েছে। কিছু গাড়ির মডেল গাড়ির যাত্রী নিরাপত্তায় এ বছর বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অনেক বৈদ্যুতিক দুই চাকার গাড়িও বাজারে এসেছে যা বাজারে ব্যাপক চাহিদার সৃষ্টি করেছে। একটি রিপোর্ট বলছে, 2023-2024 অর্থবর্ষে, অটোমোবাইল শিল্পে যাত্রীবাহী, বাণিজ্যিক এবং দুই-চাকার গাড়ি-সহ বিভিন্ন বিভাগে প্রায় 2 কোটি 32 লক্ষ 80 হাজার (23.28 মিলিয়ন) ইউনিট যানবাহন তৈরি করেছে।

আরো পড়ুন:– এও তাহলে সম্ভব হল, ইতিহাস লিখে সূর্যকে ছুঁল পার্কার

আবাসন-নির্মাণ শিল্প ক্ষেত্র:

এ বছর, 2024 সালে আবাসন-নির্মাণ শিল্প ক্ষেত্রে (রিয়েল এস্টেট সেক্টর) দুর্দান্ত বৃদ্ধি দেখা গিয়েছে ৷ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এর সুফল 2025 সালেও পাওয়া যাবে ৷ নাইট ফ্রাঙ্ক ইন্ডিয়া এবং NAREDCO-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, মাঝারি বাজেটের সম্পত্তি এবং বিলাসবহুল সম্পত্তির চাহিদা এ বছর ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। দেখা গিয়েছে, চলতি বছরে 1 কোটি টাকারও বেশি মূল্যের সম্পত্তিতে বিনিয়োগ বেড়েছে ৷ মেট্রো শহর থেকে দ্বিতীয় স্তরের শহরে সম্পত্তির দাম 30 শতাংশ থেকে 50 শতাংশ বৃদ্ধির দিকে এগিয়েছে ৷

ইক্যুইটি মিউচুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগ এবং রিটার্ন বৃদ্ধি:

এ বছরও বিনিয়োগকারীরা ইক্যুইটি মার্কেট থেকে বেশ ভালো আয় করেছেন। অনেক ইকুইটি মিউচুয়াল ফান্ড বিনিয়োগকারীদের ধনী করেছে। সেক্টরাল, মিড ক্যাপ, ইএলএসএস, ফ্লেক্সি ক্যাপ, স্মল ক্যাপ, মিড এবং লার্জ ক্যাপ ফান্ডগুলি এই বছর দুর্দান্ত রিটার্ন দিয়েছে। ইকোনমিক টাইমসের খবর অনুযায়ী, চলতি বছরের 1 জানুয়ারি থেকে 17 ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় সাতটি ইক্যুইটি মিউচুয়াল ফান্ড 50 শতাংশেরও বেশি রিটার্ন দিয়েছে।

এ বছর ভারত যে শীর্ষস্থানীয় শিল্পপতিদের হারিয়েছে:

  • চলতি বছরে দেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের বিভিন্ন বিভাগে উন্নতি ও অগ্রগতি হলেও ভারত তার কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় শিল্পপতিদের হারিয়েছে ৷ দেশের সবচেয়ে হৃদয়বিদারক ক্ষতির মধ্যে রতন টাটার প্রয়াণ, যার চলে যাওয়ায় ভারতীয় শিল্প ও উদ্যোগের ক্ষেত্রে স্বর্ণযুগের অবসান ঘটেছে। টাটা গ্রুপের 86 বছর বয়সী ইমেরিটাস চেয়ারম্যান বয়সজনিত স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণে 9 অক্টোবর প্রয়াত হন।
  • রুইয়া পরিবারের অন্যতম শিল্পপতি এবং এসার গ্রুপের চেয়ারম্যান শশীকান্ত রুইয়া দীর্ঘ অসুস্থতার পর 25 নভেম্বর 81 বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি ছিলেন দেশের একজন অন্যতম উদ্যোক্তা এবং শিল্পপতি ৷ শশীকান্ত রুইয়া 1969 সালে তার ভাই রবিকান্ত রুইয়ার সঙ্গে এসারের প্রতিষ্ঠা করেন।
  • জনপ্রিয় স্টেশনারি ব্র্যান্ড ক্যামলিনের প্রতিষ্ঠাতা সুভাষ দান্ডেকর এই বছরের 15 জুলাই 86 বছর বয়সে প্রয়াত হন। মৃত্যুর সময় তিনি কোকুয়ো ক্যামলিনের চেয়ারম্যান ইমেরিটাস হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। 1931 সালে সুভাষ দান্ডেকরের পিতা দিগম্বর দান্ডেকর এবং তার কাকা জিপি দান্ডেকর প্রতিষ্ঠিত সংস্থা, ক্যামলিন দান্ডেকর অ্যান্ড কোং নামে একটি কালি উৎপাদনের ব্যবসা শুরু করে ৷ এরপর 1946 সালে এটি একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে পরিণত হয় এবং 1998 সালে এটি একটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে পরিণত হয়। সুভাষ দান্ডেকরের নেতৃত্বে, ক্যামলিন শিল্প সামগ্রী, লেখার উপকরণ এবং অফিসের প্রয়োজনীয় সামগ্রী অন্তর্ভুক্ত করে এই সংস্থার ব্যবসাকে প্রসারিত করে, যা দ্রুত ভারতজুড়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
  • রঘুনন্দন শ্রীনিবাস কামাথ, ‘ভারতের আইসক্রিম ম্যান’ এবং ন্যাচারাল আইসক্রিমের প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে পরিচিত এই উদ্যোগপতি, মে মাসে 75 বছর বয়সে একটি অসুস্থতার জেরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। 1984 সালে, কামাথ মাত্র চারজন কর্মচারী এবং বারোটি স্বাদের সম্ভার নিয়ে আইসক্রিম ব্যবসায় প্রবেশ করেন। তিনি ন্যাচারাল আইসক্রিমকে একটি জনপ্রিয় ব্র্যান্ডে পরিণত করেছেন যার আয় প্রায় 300 কোটি টাকা এবং দেশের 15টি রাজ্যে এর 165টিরও বেশি আউটলেট রয়েছে ৷

 

Bangla News Dunia Desk Bappaditya

মন্তব্য করুন