‘আইআইটি বাবা’ থেকে ‘রাবড়ি বাবা’, মহাকুম্ভে হইচই ফেলে দিয়েছেন এই বিচিত্র সাধুরা

By Bangla News Dunia Desk Bappaditya

Published on:

Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে শুরু হয়ে গিয়েছে মহাকুম্ভ মেলা ২০২৫। সমাজের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এসেছেন এই ধর্মীয় উদযাপনে অংশ নিতে। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের পাশাপাশি, মহাকুম্ভের অন্যতম আকর্ষণ বিভিন্ন বিচিত্র এবং আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব। এই মুহূর্তে সঙ্গমে উপস্থিত ভারত ও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত সাধুরা।

তাঁদের মধ্যে, অনন্য বেশভুষা, বিচিত্র পছন্দ-অপছন্দ এবং বিশেষ আধ্যাত্মিক যাত্রা কাহিনির জন্য, সোশ্যাল মিডিয়ায় বিশেষ জায়গা করে নিয়েছেন বেশ কয়েকজন বাবাজি। তাঁদের কেউ চলাফেরা করেন ‘হার্লি ডেভিডসন’ মোটরবাইকে। আবার কেউ আইআইটি-র পড়াশোনা ছেড়ে বেছে নিয়েছেন তপস্বীর জীবন। আর এঁরা সকলেই এসে মিশে গিয়েছেন প্রয়াগরাজের সঙ্গমে। আসুন চিনে নেওয়া যাক মহাকুম্ভের এই ধরনের কয়েকজন বিচিত্র সাধুবাবাকে।

চা-ওয়ালা বাবা

এক সময় উত্তরপ্রদেশের প্রতাপগড়ে চা বিক্রি করে সংসার চালাতেন দীনেশ স্বরূপ ব্রহ্মচারী। বর্তমানে তিনি পরিচিত ‘চাওয়ালা বাবা’ নামে। ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি বিনামূল্যে সিভিল সার্ভিস পরিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেন। তবে, তিনি মৌনি বাবা, অর্থাৎ কোনও কথা বলেন না। আর তাঁর ভক্তদের দাবি অনুযায়ী, সারা দিন তিনি মাত্র দশ কাপ চা খান। আর কোনও খাবার বা পানীয় গ্রহণ করেন না।

লাল চা নয়, দুধ দেওয়া চা। তাঁর মতে, চায়ের কাপের ওই দুধটুকুই তাঁকে বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয় সকল পুষ্টির জোগান দেয়। কিন্তু কথা না বললে, তিনি তাঁর শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেন কী করে? রাজেশ সিং নামে তাঁর এক ছাত্র জানিয়েছেন, বাবাজিকে যে কোনও সময় লিখে লিখে প্রশ্ন করা যায়। তিনিও হোয়াটঅ্যাপে লিখিত বার্তায় বা হাত-পায়ের অঙ্গভঙ্গি করে সেই সব প্রশ্নের জবাব দেন। রাজেশের মতে, কথা না বলেই বাবাজি বাদবাকি কাজকর্ম করার শক্তি সঞ্চয় করেন।

আরও পড়ুন:– লস অ্যাঞ্জেলেসে ছড়ানো হচ্ছে পিঙ্ক পাউডার, কী ভাবে রাক্ষুসে আগুন সামলাচ্ছে এই উপাদান?

বাবা মোক্ষপুরী

বাবা মোক্ষপুরী এক সময় নিযুক্ত ছিলেন মার্কিন সেনাবাহিনীতে। নাম ছিল মাইকেল। স্ত্রী এবং ছেলের সঙ্গে তিনি ভারতে বেড়াতে এসে প্রথম আধ্যাত্মিকতার সংস্পর্শে এসেছিলেন। সেই ভারত সফরের সময় ধ্যান, যোগব্যায়াম এবং হিন্দু ধর্ম দর্শনের সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলেন তিনি।

ছেলের আকস্মিক মৃত্যুর পর, তিনি যার ফলে তিনি ধ্যানের মধ্যে হিন্দু ধর্মের মধ্যে স্বান্ত্বনার খোঁজ শুরু করেছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, একটা সময় তাঁর সঙ্গে আর পাঁচজন সাধারণ মানুষের কোনও পার্থক্য ছিল না। ঘোরাঘুরি করতে, স্ত্রী এবং পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে ভালোবাসতেন। কিন্তু ছেলের মৃত্যুর পর তিনি বুঝেছিলেন কোনও কিছুই চিরস্থায়ী নয়। এর পরই তিনি মোক্ষ অর্জনের অন্তহীন যাত্রা শুরু করেছিলেন। এখন তিনি জুনা আখড়ার সঙ্গে যুক্ত।

চাবিওয়ালা বাবা

হরিশচন্দ্র বিশ্বকর্মা কবিরা বেশি পরিচিত চাবিওয়ালা বাবা নামে। মহাকুম্ভে তিনি এসেছেন একটি ২০ কেজি ওজনের বিশাল চাবি নিয়ে। তাঁর মতে এটা ‘রামনামের চাবি’।

অ্যাম্বাস্যাডর বাবা

মহাকুম্ভ ২০২৫-এ বেশ কয়েকজন বাবার যানবাহনও মানুষের নজর কেড়েছে। এমনই একজন হলেন ‘অ্যাম্বাস্যাডর বাবা’, অর্থাৎ, মোহান্ত রাজ গিরি নাগা বাবা। মধ্যপ্রদেশের ইন্দোর থেকে, এই ৫০ বছর বয়সী সাধু মহাকুম্ভে এসেছেন ১৯৭২ সালের একটি গেরুয়া রঙের অ্যাম্বাস্য়াডর গাড়ি চড়ে। গত ৩০-৩৫ বছর ধরে তিনি এই গাড়িতেই সব জায়গায় যাতায়াত করেন।

স্প্লেন্ডর বাবা

‘স্প্লেন্ডর বাবা’ নামে পরিচিত আরও এক সাধুবাবা এসেছেন মহাকুম্ভে। সংবাদ সংস্থা এএনআই-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, গুজরাট থেকে একটি মোটরসাইকেলে চড়ে ১৪ দিনে এক লক্ষ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে প্রয়াগরাজে পৌঁছেছেন তিনি। ‘হার্লি ডেভিডসন’ মোটরবাইকে চড়ে তাঁর মহাকুম্ভের তাঁবু-শহরে প্রবেশ ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে।

আইআইটিয়ান বাবা

মহাকুম্ভের প্রথম দিনই সোশ্যাল মিডিয়ার নজর কেড়েছিল অভয় সিং ওরফে আইআইটিয়ান বাবা। আইআইটি বম্বেতে একটা সময় তিনি অ্য়ারোস্পেস এঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করতেন। তবে আধ্যাত্মিক টানে তিনি সেই পড়াশোনা ছেড়ে দেন।

তিনি জানিয়েছেন, এঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময় তিনি জীবনের অর্থের খোঁজ শুরু করেছিলেন। এর জন্য তিনি পোস্ট মডার্নিজ়ম, সক্রেটিস, প্লেটোদের দর্শন নিয়ে চর্চা শুরু করেছিলেন। পরে তিনি বুঝতে পারেন, জীবনের মূল বিষয় হলো জ্ঞান অর্জন। আধ্যাত্মিকতার মাধ্যমেই মনকে বোঝা যায় বলে জানিয়েছেন তিনি।

রাবড়ি বাবা

পঞ্চায়েতি আখড়ার মোহান্ত দেবগিরি, মহাকুম্ভে প্রতিদিন সকালে এক বিশাল কড়াইয়ে দুধ জাল দিতে দেখা যাচ্ছে। সকাল আটটা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তিনি তাঁর ভক্তদের রাবড়ি খাওয়ান। সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে তিনি জানিয়েছেন, সকাল আটটায় চুল্লিতে ওই কড়াই চাপানোর আগেই তিনি স্নান, ধ্যান এবং পূজাপাঠের মতো তাঁর দৈনন্দিন কাজকর্ম সেরে ফেলেন। তাঁর দাবি, প্রচার পাওয়ার জন্য নয়, পরমাত্মার সঙ্গে আত্মিক সংযোগ স্থাপনের জন্যই তিনি ভক্তদের মধ্যে রাবড়ি বিতরণ করেন।

পরিবেশ বাবা

২০১৬ সালের অগস্টে, বৈষ্ণো দেবী থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত যাত্রা করেছিলেন আচার্য মহামণ্ডলেশ্বর অরুণ গিরি। যাত্রাপথে ২৭টি রাজ্য জুড়ে তিনি ২৭ লক্ষ গাছ লাগিয়েছিলেন। সেই থেকে তাঁর অনুগামীরা তাঁকে পরিবেশ বাবা বলে ডাকেন। মহাকুম্ভে এসেছেন তিনিও। তিনি তাঁর অনুগামীদের বলেন অন্তত দুটি করে গাছ লাগাতে। একটি গাছ শেষকৃত্যের জন্য এবং অপরটি বেঁচে থাকাকালীন অক্সিজেনের জন্য।

আরও পড়ুন:– অবশেষে সিদ্ধান্ত হয়ে গেল! ডিএ পাচ্ছেন রাজ্য সরকারি কর্মীরা। কবে, কতটা বাড়ছে ডিএ ? জেনে নিন

 

Bangla News Dunia Desk Bappaditya

মন্তব্য করুন