Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- ডাইনিং টেবিলে প্লেটের উপর পড়েছিল খাবারের কয়েকটা টুকরো। কিছুক্ষণ আগেই খাওয়া শেষ হয়েছে কয়েকজনের। তার পর ওঁরা কফির অপেক্ষা করছিলেন। সেই সময়েই কামড়টা অনুভব করলেন একজন। জিনস ভেদ করে হুল ফুটিয়েছে ‘মশা’–টা। বিরক্তির সঙ্গে চাপড় কষাতে সেটা পড়েও গেল। সেই সময়েই দলের একজনের নজর পড়েছিল ওটার উপর। মশা তো এমন হয় না! ভালো করে দেখে ওঁরা বুঝলেন, পতঙ্গটা মশা নয় — মাছি। তবে তার আচরণ অনেকটা মশার মতোই।
অর্থাৎ, প্রাণীর শরীরে হুল ফুটিয়ে রক্ত পান করে সে। আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে অনুসন্ধান চালিয়ে ‘রক্তচোষা’ মাছির এমন ২৩টি প্রজাতির সন্ধান পেলেন জ়ুলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার (জ়েডএসআই) গবেষকরা। এই ২৩টি প্রজাতির মধ্যে ১৩ প্রজাতির মাছিকে এই প্রথম ভারত থেকে পাওয়া গেল—এমনটাই জানা গিয়েছে। ভাইরোলজিস্টদের মতে এই ধরনের রক্তচোষা মাছি গবাদি পশুর ব্লু–টাং ডিজ়িজ়ের কারণ।
জিভটা হঠাৎ নীল হতে শুরু করে। তারপর জ্বর, ফুলো ওঠে মুখচোখ। অতিরিক্ত লালাক্ষরণ এবং অনেক ক্ষেত্রে মৃত্যু পর্যন্ত হয়। গবাদি পশুদের এমন অসুখ প্রায়শই হয়। এই অসুখের জীবাণু পরিবহণ করে উনকি জাতীয় এক রকমের মাছি। ‘কিউলিকয়ডিস’ গোত্রের এই মাছিদের নিয়েই গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা করলেন জ়েডএসআই–এর ডিপ্টেরা বিভাগের বিজ্ঞানীরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, নামে ‘মাছি’ হলেও এই পতঙ্গদের খাদ্যাভ্যাস অনেকটাই মশার মতো। বিভিন্ন প্রাণীর রক্ত পান করেই এরা বেঁচে থাকে।
আরও পড়ুন:– মহিলাদের প্রতিমাসে 32 হাজার টাকা দিচ্ছে কেন্দ্র। চালু হল নতুন প্রকল্প। টাকা পেতে হলে কী করতে হবে?
আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের আয়তন মাত্র আট হাজার বর্গ কিলোমিটার হলেও সেখানকার জীববৈচিত্র্যে অবাক হন প্রাণী ও উদ্ভিদবিজ্ঞানীরা। জ়েডএসআই–এর ডিপ্টেরা বা পতঙ্গ নিয়ে গবেষকরা ২০২২–২৩–এ বিভিন্ন দ্বীপপুঞ্জে অনুসন্ধান চালিয়ে ২৩টি প্রজাতির রক্তচোষা মাছির খোঁজ পেয়েছেন। এই গবেষণার ফল প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক জার্নাল ‘প্যারাসাইটস অ্যান্ড ভেক্টরস’–এ।
এই প্রসঙ্গে জ়েডএসআই–এর ডিরেক্টর ধৃতি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আন্দামান ও নিকোবরে অনুসন্ধান চালিয়ে কিউলিকয়ডিস গোত্রের বেশ কয়েক প্রজাতির মাছির সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। এদের মধ্যে কয়েকটি প্রজাতি ব্লু–টাং ডিজ়িজ়ের বাহক বা ভেক্টর। যেহেতু ওই জায়গা অত্যন্ত ব্যস্ত একটি পর্যটনস্থল, তাই এই ধরনের ভেক্টর নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন রয়েছে। জ়েডএসআই–এর ডিপ্টেরা বিভাগের প্রধান বিজ্ঞানী অতনু নস্কর এবং কৌস্তভ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘এখনও দুই দ্বীপপুঞ্জের অনেক জায়গাতেই গবেষণা চালানো বাকি। আশা করছি আরও নতুন প্রজাতির কিউলিকয়ডিসের সন্ধান পাওয়া যাবে।’
রক্তচোষা এই মাছি নিয়ে ইতিমধ্যেই দেশে–বিদেশে গবেষণা চালাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি অফ অ্যানিম্যাল অ্যান্ড ফিশারি সায়েন্সের (ডব্লিউবিইউএএফএস) অধ্যাপক ও ভাইরোলজিস্ট সিদ্ধার্থ জোয়ারদার এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘উপযুক্ত ব্যবস্থা না নিলে কিউলিকয়ডিস প্রজাতির মাছি গবাদিপশুর মড়কের কারণ হতে পারে। তাই এদের নিয়ে অনেক বেশি করে গবেষণার প্রয়োজন আছে।’ ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে সিদ্ধার্থ জোয়াদার ও অন্য গবেষকদের একটি গবেষণাপত্র মাল্টিডিসিপ্লিনারি ডিজিটাল পাবলিশিং ইনস্টিটিউটে (এমডিপিআই) প্রকাশিত হয়েছে।
আরও পড়ুন:– রহস্যের জট খুলতে কাশ্মীরের গ্রামে এবার কেন্দ্রীয় দল, জানতে বিস্তারিত পড়ুন
আরও পড়ুন:– কলকাতা CNCI ইনস্টিটিউটে কর্মী নিয়োগ চলছে! কিভাবে আবেদন করবেন দেখুন বিস্তারিত