লৌহযুগের শুরু তামিলনাড়ুতে, 5,300 বছরের পুরনো তরোয়াল হাতিয়ার স্ট্যালিনের

By Bangla News Dunia Desk Bappaditya

Published on:

Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- শুধু ভারতে নয়, তামাম দুনিয়ার মধ্যে লৌহযুগ প্রথম শুরু হয়েছে আজকের তামিলনাড়ুতে। আদতে পৃথিবীকে লৌহযুগ উপহারই দিয়েছে তামিল-ভূম। এমনই দাবি প্রকাশ্যে এল ।

লোহা গলিয়ে তা থেকে নানা সামগ্রী নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল তামিলনাড়ুতে। তাও আজ থেকে প্রায় 5,300 বছর আগে। এমনই দাবি করলেন মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন। রাজ্যের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ প্রকাশিত ‘অ্যান্টিকুইটি অফ আইরন’ নামে একটি বইয়ের উদ্বোধন করে বৃহস্পতিবার এমন দাবি করেন করুণানিধি-তনয়। বইটি লিখেছেন অধ্যাপক কে রাজন এবং অধ্যাপক আর শিবান্নাথম। অধ্যাপক রাজন তামিলনাড়ু প্রত্নতত্ব বিভাগের পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করেন। আর অধ্যাপক শিবান্নাথম ওই দফতরের যুগ্ম অধিকর্তা ।

শুরুর কথা

তুত্থুকুড়ি জেলায় একটি প্রত্নতাত্বিক অভিযান চালায় দফতর । সেখানে খননের সময় সমাধি থেকে একটি সুপ্রাচীন তরোয়াল পাওয়া যায় । সেই তরোয়ালটি পরীক্ষার জন্য দেশ-বিদেশের একাধিক গবেষণা সংস্থায় পাঠানো হয়। সেই সমস্ত সংস্থার দেওয়া রিপোর্ট থেকেই এই তথ্য পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি স্ট্যালিনের।

গবেষণার গতি-প্রকৃতি

তরোয়াল সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য অনুসন্ধান করতে সেটিকে ফ্লোরিডার বেটা অ্যানালিটিক্স নামে একটি সংস্থায় পাঠানো হয়েছিল। পাশাপাশি লখনউয়ের বিরবল সাহানি ইন্সটিটিউট অফ প্যালিয়সায়েন্স এবং আমেদাবাদের ফিজিক্যাল রিসার্চ ল্যাবোরেটরিতেও তরোয়ালটি পাঠানো হয়েছিল । আমেরিকার এই গবেষণা সংস্থা কোনও জিনিসের বয়স কত তা জানতে রেডিও-কার্বন প্রযুক্তির সাহায্য নেয় । এর পাশাপাশি লখনউয়ের সংস্থাটি ভূ-তাত্বিক অতীতকে বিশ্লেষণ করে কোনও জিনিস কতটা পুরনো তা খুঁজে বের করে থাকে । আমেদাবাদের সংস্থাও কয়েকটি পদ্ধতিকে সামনে রেখে যাচাইয়ের কাজ করেছে। আরও জানা গিয়েছে, ভারতের দুটি সংস্থাই অপটিক্যালি স্টিমুলেটেড লুমিনেন্সের সাহায্য নেয়। এই পদ্ধতিতে আলো বা রশ্মির মাধ্যমে একটি পদার্থয় কত শতাংশ লোহা আছে তা খুঁজে বের করা হয় । তিনটি সংস্থার দেওয়া রিপোর্টে কী কী তথ্য আছে তার উল্লেখ রয়েছে তামিলনাড়ু সরকার প্রকাশিত বইটিতে।

তামিল সভ্যতা ও বিজ্ঞান চর্চা

তামিল দেশ তথা বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন ও সমৃদ্ধ সভ্যতা । ভাষা থেকে শুরু করে সাংস্কৃতিক পরিসরে এই সভ্যতা এবং তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা ইতিহাস আজও চর্চার বিষয় । বিজ্ঞান চর্চাও এই কর্মকাণ্ডর গুরুত্বপূর্ণ অংশ ।

স্ট্যালিন বলেন, “অনেকেই তামিল সভ্যতার প্রাচীনত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন । লোহা গলানো নিয়ে এখন যে তথ্য আমাদের হাতে এসে পৌঁছেছে তা থেকে স্পষ্ট প্রাচীণ ভারতে লৌহযুগের সূচনা হয়েছিল তামিলনাড়ু থেকে । “এখানেই তাঁর দাবি 5,300 বছর আগে লোহাকে ব্যবহার করার নানা কৌশল রপ্ত করেছিল এখনকার তামিলনাড়ু । লোহার ব্যবহার কবে থেকে শুরু হয়েছে তা নিয়ে বেশ কয়েকটি গবেষণাপত্র ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে । সেই গবেষণার খুঁটিনাটি বিশ্লেষণ করে প্রত্নতত্ব বিভাগ এই তরোয়ালের বয়স নির্ণয় করেছে বলে জানান স্ট্যালিন।

অন্য একটি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সমস্ত তথ্য বিশ্লেষণ করলে বলতেই হয় অধুনা দক্ষিণ ভারতে যিশুর জন্মেরও সাড়ে তিন হাজার বছর আগে লোহার নানা ধরনের ব্যবহার শুরু হয়ে গিয়েছিল । এটা আমাদের সকলের কাছে গর্বের বিষয় । আমরা দেশ-দুনিয়াকে লৌহযুগ উপহার দিয়েছি । ” জানা গিয়েছে, এই বইতে যে সমস্ত তথ্য পাওয়া গিয়েছে তা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা প্রথিতযশা প্রত্নতত্ববিদদের দেখানো হয়েছিল। তাঁরা তাদের বক্তব্যও জানিয়েছেন । সে কথাও স্থান পেয়েছে বইতে ।

বই-প্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয় প্রত্নতত্ব বিভাগের অধ্যাপক দিলীপকুমার চক্রবর্তী। তিনি জানান, এই বইটি ছুঁয়ে দেখাই তাঁর কাছে বিরাট ব্যাপার। এই বইতে যে সমস্ত তথ্য প্রকাশিত হয়েছে তা সুদীর্ঘকালের গবেষণা ও প্রাসঙ্গিক বিশ্লষণের ফসল । এখানে উল্লিখিত তথ্য আগামিদিনে গবেষকদের পথ দেখাবে বলেও মনে করেন অধ্যাপক চক্রবর্তী।

Bangla News Dunia Desk Bappaditya

মন্তব্য করুন