Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:-ফ্রি স্মার্টফোন, সঙ্গে ফ্রি সিমকার্ড। ফ্রি–তে এই সব যখন ব্যাঙ্কই পাঠাচ্ছে, তাতে আর অসুবিধা কী! স্মার্টফোনে সিম কার্ড ব্যবহার শুরু করলেন গ্রাহক। সেখানেই ইনস্টল করলেন ব্যাঙ্কিং অ্যাপ। ট্রানজ়্যাকশনও করছেন দিব্যি। ক ’দিন পরে গ্রাহক দেখলেন, তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে সব টাকা ভ্যানিশ।
ক’দিন আগে ঠিক এমনটাই হয়েছে বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে। তা–ও দু’–পাঁচশো বা হাজার টাকা নয়, প্রায় তিন কোটি টাকা! বিনামূল্যে স্মার্টফোন ও সিম কার্ড পাঠিয়ে প্রতারকরা ওই প্রৌঢ় ব্যবসায়ীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ২.৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ জমা পড়েছে পুলিশের কাছে।
ঘটনার সূত্রপাত মাস কয়েক আগে থেকেই। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জানতে পেরেছে, প্রতারকরা ব্যাঙ্ককর্মী পরিচয় দিয়ে ওই ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে। বিভিন্ন গ্রাহকের ডেটা কোনও ভাবে চুরি করে তারা আগে থেকে দেখেছিল, কাদের প্রতারণার ফাঁদে ফেললে মোটা দাঁও মারা যাবে। সেই মতো এই ব্যবসায়ীকে টার্গেট করা হয় বলেই মনে করছেন তদন্তকারীরা।
ব্যাঙ্কের নাম করে ফোন ও হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে যোগাযোগ করে বিভিন্ন ধরনের ক্রেডিট কার্ড ও অন্যান্য সুবিধার প্রস্তাব দেয় প্রতারকরা। বলা হয়, ‘মোস্ট ভ্যালুড কাস্টমার’ হিসেবে ওই ব্যবসায়ীকে ফ্রি–তে স্মার্টফোন ও সিমকার্ড দেওয়া হবে। সেই স্মার্টফোন থেকে নির্দিষ্ট অ্যাপ ডাউনলোড করে ট্রানজ়্যাকশন করলে তিনি আরও বেশি সুবিধা পাবেন। এরপরে ওই স্মার্টফোনটিতে ব্যাঙ্কিং অ্যাপ–সহ প্রতারকদের কথামতো কিছু রিমোট অ্যাপও ডাউনলোড করে বসেন ব্যবসায়ী।
আরও পড়ুন:– ভরসা কমছে মিউচুয়াল ফান্ডে ! ডিসেম্বরে বন্ধ হয়েছে 45 লক্ষ SIP অ্যাকাউন্ট, রইলো বিস্তারিত
এর পর থেকেই তাঁর ব্যাঙ্কের থেকে বিভিন্ন ট্রানজ়্যাকশন মেসেজ আসা বন্ধ হয়ে যায় ওই মোবাইলে। কয়েক দিন পর তিনি টের পান তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে সমস্ত জমানো পুঁজি গায়েব হয়ে গিয়েছে।
সাইবার বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নতুন যে স্মার্টফোন প্রতারকরা ওই ব্যবসায়ীকে পাঠিয়েছিলেন, সেখানে রিমোট অ্যাপের পাশাপাশি কোনও ম্যালওয়্যার-ও পাঠানো হয়েছিল। সেটির প্রভাবে ব্যাঙ্ক থেকে আসা সমস্ত মেসেজ ব্লক করে দিয়েছিল প্রতারকরা। এমন কী টাকা তোলার জন্য যে ওটিপি আসত তাঁর মোবাইলে, সেটাও বন্ধ হয়ে যায়। বদলে সেই ওটিপি পেয়ে যাচ্ছিল প্রতারকরা। ফলে তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে ধাপে ধাপে টাকা উইথড্র হয়ে গেলেও সেটা টের পাননি ব্যবসায়ী।
সাইবার বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, যে হেতু প্রতারকরা অনেকদিন আগে থেকেই ব্যাঙ্কের আধিকারিক বলে পরিচয় দিয়ে যোগাযোগ করেছিল, এমনকী ব্যাঙ্কিং ট্রানজ়্যাকশনের জন্য ফ্রি–স্মার্টফোন ও সিমকার্ডও দিয়েছিল, তাতে ওই ব্যবসায়ীর বিশ্বাস জন্মায় প্রতারকদের উপর। বিশেষ করে আসল ব্যাঙ্ককর্মী না–হলে তারা ফ্রি স্মার্টফোনই বা দেবে কেন— হয়তো এমনটাই ভেবেছিলেন ওই ব্যবসায়ী।
এই ধরনের প্রতারণার খপ্পরে যে কেউই পড়তে পারেন। তাই সাইবার বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, কোনও রকম ফ্রি গিফট বা লোভনীয় প্রতিশ্রুতিতে ভুলবেন না। যে কোনও ব্যাঙ্কিং ট্রানজ়্যাকশন বা অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত বিষয়ে যোগাযোগ করুন আপনার ব্যাঙ্কের অফিশিয়াল কাস্টমার কেয়ারের সঙ্গে। এবং আপনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে আর্থিক লেনদেন নিয়ম করে মনিটর করুন। কোথাও কোনও অসঙ্গতি ধরা পড়লে সরাসরি ব্যাঙ্কে গিয়ে কথা বলুন। লোভ যে বড় বালাই, জানাই, সঙ্গে অজ্ঞতা জুড়ে বসলে…ঘোর বিপদ যে!