Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- ১৬ বছর আগে যে কারণ দেখিয়ে কলকাতা ছেড়েছিল ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ়, একই কারণ দেখিয়ে এ বার কলকাতা থেকে পাততাড়ি গোটাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া। অভিযোগ একই — বিমানের ইকনমি ক্লাসে যাত্রী হলেও বিজ়নেস বা ফার্স্ট ক্লাসে নেই। তাই, কলকাতা থেকে উড়ান চালাতে কার্যত ক্ষতি হচ্ছে তাদের।
সূত্রের খবর, ৩১ মার্চের পরে কলকাতা থেকে এয়ার ইন্ডিয়ার পরিবর্তে এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের উড়ান চলবে। এটি আসলে টাটা গোষ্ঠীর অধীনস্থ সস্তার একটি উড়ানসংস্থা। দু’টির অস্তিত্ব আলাদা বলেই দাবি সংস্থার কর্মীদের।
সরকারি এয়ার ইন্ডিয়ার দায়িত্ব টাটা গোষ্ঠীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল ২০২৩–এর এপ্রিলে। এয়ার ইন্ডিয়া এয়ারবাস চালায়। সেখানে ইকনমি ছাড়াও বিজ়নেস ক্লাসও রয়েছে। অভিযোগ, কলকাতা থেকে উড়ানে বিজ়নেস ক্লাসের পর্যাপ্ত যাত্রী নেই। সংস্থার এক পাইলটের কথায়, ‘স্বাধীনতার পরে ৯০ দশকের গোড়া পর্যন্ত কলকাতাই ছিল ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের মূল বেস। কোনও পাইলটকে কম্যান্ডার হতে গেলে কলকাতা বেস–এ ফ্লাই করতে হতো। সেই কলকাতা এখন ব্রাত্য হয়ে গিয়েছে।’
এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস যে বোয়িং চালাবে, তাতে সব আসন ইকনমি শ্রেণির। ঠিক যে মডেলে ইন্ডিগো তাদের উড়ান চালায়। টাটা গোষ্ঠীর তরফে এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। তবে, সংস্থা সূত্রের দাবি, তাঁরা ভারত থেকে আন্তর্জাতিক উড়ান চালানোর জন্য এয়ার ইন্ডিয়াকে আরও বেশি ব্যবহার করতে চাইছেন।
তাই, দেশীয় বা ডোমেস্টিক সেক্টর থেকে ধীরে ধীরে তুলে নেওয়া হচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়াকে। সেখানে পূর্ণমাত্রায় এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের ব্যবহার শুরু হচ্ছে। শুধু কলকাতা নয়, চেন্নাই ও হায়দরাবাদ থেকেও এয়ার ইন্ডিয়া নাকি আগামী দিনে বেস তুলে নিতে পারে। তবে, বর্তমান বিমানমন্ত্রী কে রামমোহন নাইডু নিজে অন্ধ্রপ্রদেশের লোক। ফলে, হায়দরাবাদ থেকে বেস তোলা কতটা সহজ হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
দু’দিন আগেই কলকাতায় বেঙ্গল গ্লোবাল বিজ়নেস সামিট থেকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, শহর থেকে ইউরোপে সরাসরি উড়ান চালানোর জন্য তিনি কথা বলেছেন টাটা সন্সের চেয়ারপার্সন এন চন্দ্রশেখরনের সঙ্গে।
কলকাতা থেকে এয়ার ইন্ডিয়ার বেস তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তে ইউরোপের সেই উড়ানের সম্ভাবনাতেও প্রশ্নচিহ্ন দেখা দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে, এ রাজ্যের যত টাকার লগ্নি প্রস্তাব এসেছে, তা বাস্তবায়িত হলে আগামী দিনে এ শহর থেকেও নিয়মিত বিজ়নেস শ্রেণির যাত্রী পাওয়া যাবে বলে দাবি এ রাজ্যের শিল্প মহলের একাংশের।
কলকাতা থেকে এখন প্রতিদিন এয়ার ইন্ডিয়ার ২৬টি উড়ান চলে। সূত্রের দাবি, ৩১ মার্চের পরে সেগুলি সব বন্ধ হয়ে যাবে। পরিবপর্তে শুরু হবে এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের উড়ান। পাইলটদের দাবি, কলকাতা থেকে বেস তোলার সিদ্ধান্তের পরে কতৃর্পক্ষ তাঁদের এয়ার ইন্ডিয়া থেকে পদত্যাগ করে এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসে যোগ দিতে বলেন।
তাতে নতুন কী সুবিধা দেওয়া হবে এবং নতুন সংস্থার টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশন নিয়েও তাঁরা অন্ধকারে বলে অভিযোগ পাইলটদের একাংশের। কলকাতা বেস–এ ছিলেন প্রায় ১৫০ পাইলট। তাঁদের মধ্যে অনেকেই চাকরি ছেড়ে ইন্ডিগোতে যোগ দিয়েছেন বলে সূত্রের খবর।
অভিযোগ, পাইলটদের মধ্যে যাঁরা এক্সপ্রেসে যেতে চাননি, তাঁদের বদলি করে দেওয়া হয়েছে দিল্লি–সহ অন্য বেস–এ। বাকি ৫০–৬০ জন পাইলট এয়ার ইন্ডিয়ার চাকরি ছেড়ে যোগ দিয়েছেন এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস–এ। কলকাতা বেস–এ সংস্থার আর যত কর্মী রয়েছেন, সবার কাছেই একই অফার দেওয়া হয়েছে। এক কর্মীর কথায়, ‘কলকাতা থেকে এতদিন এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের খুব কম উড়ান চলত। এত বড় পরিকাঠামো তাদের নেই। কম খরচ হবে না।’
সম্প্রতি এয়ার ইন্ডিয়া ২২টি নতুন এয়ারবাস ৩২০ বিমান অর্ডার দিয়েছিল। সেগুলিও ছিল সমস্ত ইকনমি আসনের। এ বার সেই বিমানগুলি এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসকে ভাড়া দেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে। কর্মীদের দাবি, দু’টি সংস্থার অস্তিত্ব আলাদা। তাই, এক সংস্থা থেকে অন্য সংস্থায় সরাসরি কর্মীদের বা বিমান ট্রান্সফার করা যায় না।
আরও পড়ুন:- কলকাতা টু বারাণসী 6 ঘণ্টায় ! তৈরি হচ্ছে নয়া এক্সপ্রেসওয়ে