Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- চিনের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে আত্মনির্ভরতার পথে হাঁটতে চাইছে ভারত। বিশেষ করে, লিথিয়াম ও কোবাল্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজের ক্ষেত্রে, যেগুলি স্মার্টফোন থেকে বৈদ্যুতিক গাড়ি পর্যন্ত বহু অত্যাধুনিক প্রযুক্তির জন্য অপরিহার্য। এই লক্ষ্যেই ভারত এখন অস্ট্রেলিয়া ও আফ্রিকায় বিকল্প উৎসের সন্ধানে নেমেছে।
ভারতের খনন সচিব ভি.এল. কান্তা রাও বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, দেশটি জাম্বিয়া, কঙ্গো এবং অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ আহরণের জন্য নতুন সুযোগ খুঁজছে। সরকারের লক্ষ্য চীনের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে স্বল্প এবং দীর্ঘমেয়াদে নিজস্ব সরবরাহ শৃঙ্খলা তৈরি করা।
কেন এত গুরুত্বপূর্ণ এই খনিজ?
বর্তমান প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বে লিথিয়াম, কোবাল্ট, তামা, নিকেল ও রেয়ার আর্থ মিনারেল অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। বৈদ্যুতিক যানবাহন, মোবাইল ফোন এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি সংরক্ষণের জন্য এই খনিজ অপরিহার্য। কিন্তু সমস্যা হল, বিশ্বের বেশিরভাগ লিথিয়াম ও অন্যান্য খনিজ প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে চীন শীর্ষস্থানীয়।
এই পরিস্থিতিতে ভারত সরাসরি আফ্রিকার দেশগুলির সঙ্গে যুক্ত হতে চাইছে, যাতে চীনের একচেটিয়া দাপট থেকে বেরিয়ে আসা যায়।
আরও পড়ুন:- IDBI ব্যাংকে প্রচুর কর্মী নিয়োগ চলছে! আবেদন পদ্ধতি সহ বিস্তারিত দেখে নিন
আফ্রিকায় ভারতের পরিকল্পনা
কান্তা রাও জানিয়েছেন, জাম্বিয়া সরকার সম্প্রতি ভারতকে ৯,০০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে কোবাল্ট ও তামার অনুসন্ধানের অনুমতি দিয়েছে। এই অনুসন্ধান শেষ হতে ২-৩ বছর লাগবে, এরপর সাফল্য এলে ভারত সেখানকার খনন কার্যক্রম শুরু করতে পারবে। এছাড়া, কঙ্গোতেও ভারত কোবাল্টের অনুসন্ধান চালাচ্ছে, যেখানে এই খনিজের বিপুল পরিমাণ মজুদ রয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ায় ভারতের বিনিয়োগ
লিথিয়ামের সবচেয়ে বড় উৎপাদনকারী দেশগুলির মধ্যে অন্যতম হল অস্ট্রেলিয়া। ভারত এই দেশটির সঙ্গেও কৌশলগত অংশীদারিত্ব গড়তে চাইছে, যাতে ভবিষ্যতে লিথিয়ামের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা যায়। ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা KABIL (Khanij Bidesh India Ltd) এরই মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার একাধিক সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ নিয়ে কাজ শুরু করেছে।
ক্রিটিক্যাল মিনারেলসে আত্মনির্ভরতা বাড়াতে ভারতের বড় বিনিয়োগ
চলতি বছরের জানুয়ারিতে ভারত সরকার ১.৯ বিলিয়ন ডলারের ‘ন্যাশনাল ক্রিটিক্যাল মিনারেল মিশন’ অনুমোদন করেছে। এর মূল লক্ষ্য স্বদেশে খনিজ অনুসন্ধান ও বিদেশ থেকে সরাসরি সরবরাহ নিশ্চিত করা।
কেন্দ্রীয় খননমন্ত্রী জি. কিশন রেড্ডি জানিয়েছেন, ভারত ইতিমধ্যেই জম্মু-কাশ্মীর ও ছত্তিশগড়ের মতো রাজ্যে লিথিয়াম ভান্ডারের সন্ধান পেয়েছে। চলতি বছরের এপ্রিল-মে মাস নাগাদ এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে, এরপর ওই লিথিয়াম ব্লকগুলির নিলাম প্রক্রিয়া শুরু হবে।
কতটা চিনের ওপর নির্ভরশীল ভারত?
বর্তমানে ভারতে ব্যবহৃত মোট লিথিয়ামের প্রায় ৭০% চীন থেকে আমদানি করা হয়। কিন্তু চীন-ভারত সীমান্ত উত্তেজনা এবং বিশ্ব রাজনীতির পরিবর্তনের কারণে, ভারত চীনের ওপর থেকে নির্ভরতা সরিয়ে নিতে চাইছে।
বিশ্বের লিথিয়াম মজুদের ৭৫% রয়েছে ‘লিথিয়াম ট্রায়াঙ্গেল’— চিলি, আর্জেন্টিনা এবং বলিভিয়ায়। এদের বেশিরভাগ লিথিয়াম চীনে প্রক্রিয়াকরণ হয়, যা পরোক্ষভাবে ভারতকেও চীনের ওপর নির্ভরশীল করে তুলেছে।
চিনের একচেটিয়া আধিপত্যের পাল্টা চাল দিল ভারত!
বিশ্ব যখন পরিবেশবান্ধব ও টেকসই শক্তির দিকে এগোচ্ছে, তখন লিথিয়াম এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খনিজের চাহিদা আকাশছোঁয়া। ভারত যদি নিজস্ব সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারে, তবে চীনের একচেটিয়া আধিপত্য ভাঙতে পারে।
এই কারণেই ভারত এখন আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে জোট গড়ে চিনের বিকল্প তৈরি করতে চাইছে। যা শুধুমাত্র দেশের অর্থনীতির জন্য নয়, ভবিষ্যতের প্রযুক্তির দুনিয়াতেও ভারতের শক্ত অবস্থান তৈরি করবে।
আরও পড়ুন:- ফিলটার করা জল পানে রয়েছে মারণ রোগের আশঙ্কা, জানুন বিস্তারিত