ভবিষ্যতের জন্য শিশুদের এটা শেখান। জানুন কি মত হার্ভার্ড অধ্যাপকের ?

By Bangla News Dunia Desk Bappaditya

Published on:

Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- আপনার সন্তান বড় হয়ে কী হবে? ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার নাকি সফটওয়্যার ডেভেলপার? বেশিরভাগ ভারতীয় ও বাংলাদেশি অভিভাবকরা এখনো মনে করেন, সফল হতে গেলে এসব পেশাই বেছে নিতে হবে। কিন্তু হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলের অধ্যাপক ভারত এন. আনন্দ বলছেন, ভবিষ্যতে শুধুমাত্র প্রযুক্তিগত দক্ষতা থাকলেই হবে না। বরং শেখাতে হবে সৃজনশীলতা, আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা ও বাস্তব জীবন দক্ষতা।

কেন শুধুমাত্র প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল থাকা ঠিক নয়?
সম্প্রতি India Today Conclave 2025-এ ‘Future.Ai: The New Classroom’ শীর্ষক আলোচনায় অধ্যাপক আনন্দ ব্যাখ্যা করেন— আজকের যুগে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এবং অটোমেশন দ্রুত উন্নতি করছে। ফলে, যে কাজগুলো একসময় শুধুমাত্র মানুষের পক্ষে সম্ভব ছিল, এখন এআই সহজেই সেগুলো করে ফেলছে।

অধ্যাপক আনন্দ বলেন, “অনেক টেক এক্সপার্ট আজ তাদের সন্তানদের কম্পিউটার সায়েন্স শেখানোর পরিবর্তে নাচ, অভিনয়, নলসাজির কাজ (Plumbing), এবং সামাজিক দক্ষতা শেখাতে উৎসাহিত করছেন। কারণ, ভবিষ্যতে প্রোগ্রামিং বা সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের কাজ হয়তো সম্পূর্ণরূপে এআই দ্বারা পরিচালিত হবে। কিন্তু সৃজনশীলতা, সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণ— এগুলো কখনোই রোবট বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পুরোপুরি আয়ত্ত করতে পারবে না।”

আরও পড়ুন:- মোবাইল গেমে মেতে সন্তান ! ওদিকে বাবা-মায়ের অ্যাকাউন্ট থেকে খোয়া গেল 25 লাখ, বিস্তারিত জানুন

শিশুদের কী শেখানো সবচেয়ে জরুরি?
অধ্যাপক আনন্দের মতে, ভবিষ্যতে মানুষের সফলতার জন্য যেসব দক্ষতা গুরুত্বপূর্ণ হবে, সেগুলো হলো—

১. সৃজনশীলতা (Creativity)
নতুন চিন্তাধারা ও উদ্ভাবনী আইডিয়া তৈরির ক্ষমতা। চলচ্চিত্র, সাহিত্য, শিল্প, ডিজাইন, সংগীতের মতো ক্ষেত্রে সৃজনশীলতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

২. সিদ্ধান্ত গ্রহণের দক্ষতা (Judgment & Critical Thinking)
পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা I এআই ডাটা বিশ্লেষণ করতে পারে, কিন্তু মানবিক বুদ্ধিমত্তা প্রয়োজন বাস্তব জীবনের সমস্যার সমাধানে।

৩. আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা ও সহানুভূতি (Emotional Intelligence & Empathy)
অন্যের অনুভূতি বোঝার ও সম্পর্ক গড়ার দক্ষতা | ডাক্তার, শিক্ষক, নেতৃত্বস্থানীয় পেশার জন্য এটি অপরিহার্য।

৪. মানসিক স্থিতিশীলতা ও অভিযোজন ক্ষমতা (Resilience & Adaptability)
নতুন পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়ানোর দক্ষতা। প্রযুক্তি যতই পরিবর্তন হোক, মানসিক দৃঢ়তা থাকলে যেকোনো ক্ষেত্রেই সফল হওয়া সম্ভব।

৫. কলা ও সংগীত (Arts & Music)
সৃজনশীল দক্ষতা বাড়াতে সংগীত, অভিনয়, নাচ শেখা গুরুত্বপূর্ণ। এটি মানুষের আত্মবিশ্বাস ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়।

৬. দক্ষতাভিত্তিক কাজ (Skill-Based Work)
নলসাজি (Plumbing), কাঠের কাজ (Carpentry), রান্না, বাগান করা— এসব বাস্তব জীবনের কাজে দক্ষ হওয়া। এই ধরনের কাজ সবসময় মানুষের প্রয়োজন হবে, যা এআই বা রোবটের দ্বারা সহজে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব নয়।

কেন শুধুমাত্র ইঞ্জিনিয়ারিং-মেডিকেল নয়?
অধ্যাপক আনন্দ ব্যাখ্যা করেন, আগামী ১০-১৫ বছরে প্রযুক্তি এত দ্রুত বদলাবে যে আজকের জনপ্রিয় স্কিল তখন অপ্রয়োজনীয় হয়ে যেতে পারে। যারা আজ কোডিং শিখছে, তারা হয়তো ১০ বছর পর দেখবে, সেই কাজ রোবট করে দিচ্ছে। তাই শুধু প্রযুক্তির উপর নির্ভর না করে জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় বাস্তব দক্ষতা অর্জন করা জরুরি। তিনি বলেন, “আপনার সন্তান যেটা শিখতে ভালোবাসে, সেটাই তাকে শিখতে দিন। কারণ প্রকৃত শিক্ষা আসে জিজ্ঞাসা (Curiosity) ও আত্ম-অনুপ্রেরণা (Intrinsic Motivation) থেকে।” অধ্যাপক আনন্দ নিজের জীবন থেকে একটি উদাহরণ দেন। তিনি প্রথমে কেমিস্ট্রি নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেছিলেন, কিন্তু পরে এক শিক্ষক তাকে অর্থনীতি (Economics) পড়তে অনুপ্রাণিত করেন।
সেই অনুপ্রেরণার কারণেই তিনি অর্থনীতিতে নিজের ক্যারিয়ার গড়েছেন এবং হার্ভার্ডের অধ্যাপক হয়েছেন।

অভিভাবকদের জন্য নতুন বার্তা – চাকরির জন্য নয়, শেখান জীবনের জন্য
বেশিরভাগ ভারতীয় ও বাংলাদেশি অভিভাবক মনে করেন— সফলতার জন্য ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা আইটি পেশায় যাওয়া জরুরি। কিন্তু আজকের বাস্তবতা বলছে, শুধু ডিগ্রি থাকলে চলবে না, বাস্তব দক্ষতা ও সৃজনশীলতা থাকাটাই আসল সফলতা।

তাহলে কীভাবে সন্তানের ভবিষ্যৎ গড়বেন?

* সন্তানের আগ্রহ ও প্রতিভাকে গুরুত্ব দিন।
* শুধুমাত্র পরীক্ষার ফলাফলের দিকে তাকাবেন না, বরং সৃজনশীল দক্ষতা বিকাশে সাহায্য করুন।
* স্কুলের পড়াশোনার পাশাপাশি বাস্তব জীবনের শিক্ষা দিন।
* শেখান “কীভাবে চিন্তা করতে হয়” (How to Think), “কী ভাবতে হবে” (What to Think) নয়।
* আত্মবিশ্বাস ও আবেগ নিয়ন্ত্রণ শেখান।

সন্তানের ভবিষ্যৎ গড়ার দায়িত্ব আপনার হাতে!
শুধু কোডিং, ডাক্তারি বা ইঞ্জিনিয়ারিং শেখানোর জন্য সন্তানদের চাপ দেবেন না। বরং তাদের এমন দক্ষতা অর্জনে সাহায্য করুন, যা ভবিষ্যতে যেকোনো পরিস্থিতিতে কাজে আসবে।

আরও পড়ুন:- স্বাস্থ্যসাথীর আওতায় হাসপাতাল পরিষেবা না-দিলে কী করবেন ? জানালেন চন্দ্রিমা

আরও পড়ুন:- গ্রীষ্মে প্রচুর পরিমাণে লেবু খান, এই রোগগুলি ছুঁতেও পারবে না

Bangla News Dunia Desk Bappaditya

মন্তব্য করুন