Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- দক্ষিণ এশিয়ায় কূটনৈতিক ও সামরিক সমীকরণ দ্রুত বদলে যাচ্ছে। পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রীর আসন্ন ঢাকা সফর, ভারতের বঙ্গোপসাগর উপকূলে পরমাণু সাবমেরিন ঘাঁটি নির্মাণ এবং বাংলাদেশের লালমনিরহাটে চিনের সম্ভাব্য বিমানঘাঁটি নির্মাণ—এই তিনটি ঘটনাই একে অপরের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ঘটনাগুলি শুধু আঞ্চলিক রাজনীতিকে নাড়িয়ে দিচ্ছে না, বরং ভবিষ্যতের জিও-পলিটিক্সেও বড় প্রভাব ফেলতে চলেছে।
ঢাকার দিকে পাকিস্তানের কূটনৈতিক ঝোঁক
দীর্ঘ ১৩ বছর পর পাকিস্তানের কোনও বিদেশমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে যাচ্ছেন। আগামী ২৪ এপ্রিল ঢাকায় পৌঁছাবেন ইসহাক দার। তার আগে ১৭ এপ্রিল যাচ্ছেন পাকিস্তানের বিদেশ সচিব আমনা বালুচ। এই সফর কেবল সৌজন্যমূলক নয়, বরং দুই দেশের মধ্যে নতুন কিছু সমঝোতা চুক্তিরও ইঙ্গিত মিলেছে। যদিও সরকারিভাবে চুক্তিগুলির বিষয়বস্তু প্রকাশ হয়নি, তবে বিশেষজ্ঞদের অনুমাণ, বাণিজ্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও আঞ্চলিক সহযোগিতা কেন্দ্র করেই আলোচনার মূল ধারা গড়াবে।
বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবেই সংবেদনশীল। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এবং তার পরবর্তী ঘটনাবলী এখনও দুই দেশের মধ্যে একটি মানসিক দূরত্ব তৈরি করে রেখেছে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলেছে আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট, আর এখন পাকিস্তান নতুন করে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে আগ্রহী।
ভারতের পাল্টা প্রস্তুতি: রামবিল্লিতে পরমাণু সাবমেরিন ঘাঁটি
এই কূটনৈতিক সমীকরণের মাঝেই ভারত নিজেকে শক্তিশালী করতে শুরু করেছে সামরিক দিক থেকে। টাইমস অফ ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে জানা গিয়েছে, অন্ধ্রপ্রদেশের রামবিল্লি গ্রামের কাছে ভারত একটি কৌশলগত নৌঘাঁটি নির্মাণ করছে, যেখানে মোতায়েন থাকবে দেশের পরমাণু চালিত ব্যালিস্টিক মিসাইল সাবমেরিন (SSBN)। এই ঘাঁটি ২০২৬ সালের মধ্যে পুরোপুরি চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এটি বিশাখাপত্তনমে ইস্টার্ন নেভাল কমান্ড সদর দফতরের খুব কাছেই, মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
এই ঘাঁটির মাধ্যমে ভারত বঙ্গোপসাগরে তার সামরিক উপস্থিতি আরও মজবুত করতে চাইছে। বিশেষ করে চিনের ক্রমবর্ধমান নৌতৎপরতা এবং পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক ঘনিষ্ঠতা ভারতীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।
লালমনিরহাটে চিনা বিমানঘাঁটির সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বেগ
এরই মধ্যে নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের লালমনিরহাট জেলা। চিন এখানে একটি বিমানঘাঁটি নির্মাণের পরিকল্পনা করছে বলে ভারতীয় গোয়েন্দা মহলে খবর ছড়িয়েছে। এই এলাকা ভারতের ‘চিকেন নেক’ করিডরের খুব কাছেই—যা উত্তর-পূর্ব ভারতকে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত রাখে। ফলে এই অঞ্চলে চিনের যেকোনও সামরিক উপস্থিতিই ভারতের নিরাপত্তার দিক থেকে অত্যন্ত সংবেদনশীল।
যদিও বাংলাদেশ ও চিনের পক্ষ থেকে এ ধরনের কোনও প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি, তবুও ধারণা করা হচ্ছে, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সফরে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ ইউনুস ও চীনা নেতৃত্বের মধ্যে বিষয়টি আলোচনা হয়েছে।
এক নতুন কৌশলগত মানচিত্রের ইঙ্গিত
এই তিনটি ঘটনা মিলিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে যে বড়সড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত মিলছে, তা আর অস্বীকার করার উপায় নেই। পাকিস্তান কূটনৈতিকভাবে বাংলাদেশের দিকে হাত বাড়াচ্ছে, চিন তাদের প্রভাব বিস্তারে আগ্রহী, আর ভারত প্রতিরক্ষাকে সামনে রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই সমীকরণে বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। ভারতের কৌশলগত ‘গেটওয়ে’ হিসেবে এবং চীন-পাকিস্তানের সম্ভাব্য সংযোগস্থল হিসেবেও বাংলাদেশ এখন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায়।