Bangla News Dunia, Pallab : পুলিশ যতই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বলে দাবি করুক, নববর্ষ মোটেই ভালো কাটল না ধুলিয়ান, সামশেরগঞ্জে। এটা ঠিকই যে, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে অপ্রীতিকর কিছু ঘটেনি। খানিকটা হলেও ছন্দে ফিরছে মুর্শিদাবাদ (Murshidabad) জেলার এই এলাকাগুলি। তবে পরিবেশ এখনও থমথমে। সকাল থেকে পণ্যবাহী যানবাহন চলছে। কোথাও কোথাও অল্প কিছু দোকানপাট খুললেও সাধারণ মানুষের আতঙ্ক কাটেনি। ধুলিয়ানে (Dhuliyan) ৫০ বছরের মিষ্টির দোকান সঞ্জয় সাহার। কয়েকদিন ধরে বন্ধ। নববর্ষের দিনও খুলতে সাহস পাননি। তাঁর কথায়, ‘বিশেষ কিছু মিষ্টি প্রতিবার পয়লা বৈশাখে তৈরি করা হয়। এবার সবকিছু মাটি করে দিল শুক্রবারের ঘটনা। দোকান খুলতে ভয় লাগছে।’ শহরের অন্যতম সেরা মিষ্টির দোকান শেখ মুজিবের। হালখাতার জন্য এই দোকানের মিষ্টির চাহিদা প্রতিবার ভালোই থাকে।
আরও পড়ুন : স্মার্টফোনের এই ৭ টিপস না জানলে বিপদ, কমতে পারে ডিভাইসের জীবন
অত্যন্ত পরিচিত সেই দোকানটিও হামলা থেকে রেহাই পায়নি। সোমবার পর্যন্ত তাই বন্ধই রেখেছিলেন শেখ মুজিব। নববর্ষের সকালে দোকানের ভাঙাচোরা অংশকে সরিয়ে মিষ্টি সাজানো হয়েছে। কিন্তু ক্ষতি যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। দোকানটির কর্মচারীর কথায়, হালখাতার জন্য এবার আগে থেকে অনেক অর্ডার ছিল। সব বাতিল করে দিতে হয়েছে। আজ সকালে কিছু অর্ডার এসেছে, তাই দোকান খুললাম।’
পুলিশের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহল থাকলেও আশ্বস্ত হতে পারছেন না সাধারণ বাসিন্দারা। যদিও স্পর্শকাতর এলাকাগুলোতে রয়েছে বিশেষ নজরদারি। শান্তিরক্ষা কমিটি মাইকে শান্তি ও সম্প্রীতি রক্ষার আর্জি জানিয়েছে। ইতিমধ্যে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার নিশ্চিত হয়েছে, পরিকল্পনামাফিক মুর্শিদাবাদে হিংসা ছড়ানো হয়েছে সীমান্তের ওপার থেকে। মুর্শিদাবাদ লাগোয়া বাংলাদেশে বসে পরিকল্পনা করা হয়েছে। বিশেষ করে সে দেশের রাজশাহি ও চাপাই নবাবগঞ্জে বসে গোলমাল পাকানোর ছক কষা হয়েছিল। সেখান থেকে এ রাজ্যে সক্রিয় জেএমবি, সিমি এবং এবিটি’র স্লিপার সেলকে সক্রিয় করে বাংলাদেশি দুষ্কৃতীদের মদতে এই অশান্তি ঘটানো হয়েছে বলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে রিপোর্ট দিয়েছে গোয়েন্দা দপ্তর। এরপর রাজ্য সরকারের কাছে ঘটনার বিস্তারিত ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দিয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। মন্ত্রকের কাছে পাঠানো প্রাথমিক রিপোর্টে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত থাকলেও পিছন থেকে সমর্থন করেছেন স্থানীয় কিছু তৃণমূল নেতা। গোলমাল ছড়িয়ে যাওয়ার পর ওই নেতারা আর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি।
রাজ্য সরকারের কাছেই একইরকম রিপোর্ট জমা পড়েছে। তাতে ঘটনার আগে কয়েকদিন ধরে প্রচুর অনুপ্রবেশ হয়েছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অনুপ্রবেশের আরও আশঙ্কার উল্লেখও আছে রিপোর্টে। হিংসা কীভাবে ছড়িয়েছে এবং রাজ্য সরকার কেন সাধারণ মানুষের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষা করতে পারেনি, তা জানতে চেয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক চিঠি দিয়েছে নবান্নে। পুলিশের ভূমিকা নিয়েও ওই রিপোর্টে সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে। সামশেরগঞ্জের বেতবোনা এখনও জনশূন্য। এলাকার বাসিন্দারা কেউ ঝাড়খণ্ডে, কেউ মালদায় পালিয়ে গিয়েছেন। তবে এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার জানিয়েছেন, গত তিনদিনে ২২১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর দাবি, ‘পরিস্থিতি এখন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে।’
দু’দিন আগে সামশেরগঞ্জের জাফরাবাদে হরগোবিন্দ দাস এবং তাঁর ছেলে চন্দন দাসকে খুনের ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এডিজি জানান, ওই ঘটনায় গঠিত বিশেষ তদন্তকারী টিম সিসিটিভি ও অন্যান্য জিনিসপত্র দেখে দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করা গিয়েছে। সোমবার রাতভর অভিযানে বীরভূমের মুরারই থানা এলাকা থেকে কালু নাদাব এবং সুতি থানার বাংলাদেশ সংলগ্ন সীমান্ত থেকে দিলদার নবাবকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যারা জাফরাবাদ সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা।
এডিজির দাবি, ‘এরা এই খুনে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। আরও যারা জড়িত, তাদের কাউকে ছাড়া হবে না।’ ধুলিয়ানে এই ঘটনার প্রভাব পড়েছে শিশুমনেও। এলাকার ছোট্ট বাসিন্দা মনসুম বাবার হাত ধরে প্রতিবার হালখাতা করতে যায়। তার বাবা সারিকুল বলেন, ‘সকাল থেকে মেয়ের মন খারাপ, এবার সমস্ত দোকান বন্ধ, তাই হালখাতাও বন্ধ। দোকানে গিয়ে ক্যালেন্ডার আর প্যাকেট নেওয়ার আনন্দটা মাটি হয়ে গেল ওর।’