Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- বিজেপির বিরুদ্ধে ‘ভাষা আন্দোলন’-এর ডাক দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ সোমবার তৃণমূলের শহিদ দিবস পালনের মঞ্চ থেকে এই নিয়ে তিনি তোপ দেগেছেন মোদি-শাহের দলের বিরুদ্ধে ৷ পাশাপাশি 2026-এর বিধানসভা নির্বাচনে বামেদের মহাশূন্যে পাঠানোর ডাক দিয়েছেন মমতা ৷ কলকাতার ধর্মতলায় তাঁর কর্মসূচি শেষ হতে না-হতেই পালটা আক্রমণ শানালো বিজেপি-সিপিএম-কংগ্রেস ৷
বঙ্গ বিজেপির দুই প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষ ও রাহুল সিনহা প্রশ্ন তুলেছেন, বাংলা ভাষার জন্য গত 14 বছরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী করেছেন ? অন্যদিকে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের বক্তব্য, রাজ্যে বাংলা ভাষাকে চৌপাট করে দিয়েছেন মমতা ৷ আর কংগ্রেস প্রশ্ন তুলছে, ভিনরাজ্যে কাজের খোঁজে কেন যেতে হচ্ছে বাংলার মানুষকে ?
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী বলেছেন ?
ভিনরাজ্যে বাংলাভাষীদের উপর অত্যাচারের অভিযোগ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই সরব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তার সঙ্গে জুড়েছে নির্বাচন কমিশনের স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন বা স্যরের বিষয়টি ৷ এই জোড়া বিষয় নিয়েই সোমবার বিজেপির বিরুদ্ধে তোপ দাগেন মমতা ৷ বিজেপির বিরুদ্ধে এবার ভাষা আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন তিনি ৷ পাশাপাশি জানিয়েছেন, দিল্লির মসনদ থেকে বিজেপিকে সরানোর শিলান্যাস এই সভা থেকেই করে দিলেন তিনি ৷
দিলীপ ঘোষের কী প্রতিক্রিয়া ?
বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, “উনি তো জীবনে ভাষা আন্দোলন করেননি । উনি ধার করা আন্দোলন করেন । 21 জুলাইও ধার করা । ভাষা আন্দোলনের শহিদদের উনি কি সম্মান দিয়েছেন ? তাঁদের নিয়ে কোনও অনুষ্ঠান করেছেন ? বাংলায় তৃণমূল কংগ্রেসের 14 বছর হয়ে গেল বাংলা ভাষার জন্য উনি কি করেছেন ? বাংলা ভাষাকে যে ধ্রুপদী ভাষার সম্মান দেওয়া হয়েছে, সেটা মোদি সরকার দিয়েছে । উনি তো কেন্দ্রীয়মন্ত্রী ছিলেন এবং এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী । বাংলা ভাষার জন্য কী করেছেন ? ধার করে কৃতিত্ব নেওয়ার চেষ্টা ।”
বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ
মমতার দিল্লি দখলের ডাক নিয়ে দিলীপ বলেন, “দিল্লি অভি বহুত দূর হ্যায় । দিল্লি অনেক দূর । ইন্ডিয়া জোট উনি গঠন করলেন, আর ওঁকেই এখন ডাকে না । তাই দিল্লির স্বপ্ন না দেখে বাংলায় মহিলাদের উপর যে অত্যাচার চলছে, খুন-ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটছে, মহিলারা উধাও হয়ে যাচ্ছেন, স্বাস্থ্যশিক্ষা প্রশাসন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে তার দিকে দেখুন ।”
রাহুল সিনহা কী বললেন ?
বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি রাহুল সিনহার মতে, ভাষা ভাষা করে 2021 সালের নির্বাচনকে তৃণমূল কংগ্রেস প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছিল । 21 সালের নির্বাচন চলে গেল ভাষা শেষ । এবার আবার দেখছে বিপদ । কিন্তু এতদিন সংখ্যালঘু তোষামোদ করেছে । চরম সাম্প্রদায়িক ‘নোংরামি’ করেছে । এই ধরনের নোংরা সাম্প্রদায়িক তোষামোদ করার পর এবার দেখছে যে 2026 সালে নৌকাকে পার করতে পারবে না । তখনই আবার ভাষার কথা বলছেন মমতা ৷
রাহুলের আরও বক্তব্য, নির্বাচন কমিশন বিহারে 40 লক্ষ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীর নাম বাদ দিয়েছে ৷ পশ্চিমবঙ্গে এই কাজ শুরু হলে প্রায় এক কোটি অনুপ্রবেশকারীর নাম বাদ পড়বে ৷ তাই মমতা এই ভাষার কথা তুলেছেন । ভাষার আড়ালে আসলে মমতা বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারী এবং মায়ানমার থেকে আগত রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের বাঁচানোর চেষ্টা করছেন ।
রাহুল সিনহা বলেন, ‘‘কিন্তু বাংলার মানুষ বুঝে যাবেন যে বিজেপি বাংলার মানুষকে বাংলাদেশ হওয়ার থেকে বাঁচাতে চায় । আর মমতা সেই বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের এখানে রেখে বাংলাকে বাংলাদেশ বানাতে চায় । এই তফাৎ বিজেপিও বাংলার মানুষকে বোঝাবে । বিজেপিও জমি না ছেড়ে লড়াই করবে । এখন থেকে অনুপ্রবেশকারীদের নাম বাদ দিতেই হবে৷ এটা প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন । এবং কমিশনও করবে ।’’
বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা
বিজেপির দিল্লি থেকে বিতাড়িত হওয়া নিয়ে মমতার দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি সরকার দিল্লিতে বহাল তবিয়তে আছে ও আগামিদিনেও থাকবে । উনি প্রত্যেকবারই এই কথা বলেন ৷ প্রত্যেকবারই প্রধানমন্ত্রী হওয়ার লাইনে নাম দিতে চান ৷ কিন্তু প্রতিবারই বেজার মুখ করে আবার বাংলায় ফিরে আসতে হয় ।’’
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের প্রতিক্রিয়া
সোমবার বিকেলে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে সাংবাদিক সম্মেলনে মহম্মদ সেলিম বলেন, “এখন দাঁড়িয়ে ভাষা আন্দোলনের কথা বলছেন । উনি নিজে বাংলা ভাষাকে চৌপাঠ করে দিয়েছেন । লেখক-কবিকে দলে ঢুকিয়ে তাঁদের সৃজনশীলতা নষ্ট করে দিয়েছেন । ভাষা সংক্রান্ত সব প্রতিষ্ঠানকে শেষ করে দিয়েছেন । তিনি এখন জাগোবাংলা করতে চাইছেন । ওঁর দল সংসদে কী ভূমিকা পালন করছে ? বিভিন্ন রাজ্যে যেখানে বাঙালিরা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাঁদের কাছে যাচ্ছেন কি ? তাঁদের সামাজিক সুরক্ষার জন্য কী করছেন ? আমরা দেখব উনি কবে বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি পাঠাচ্ছেন । এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়ার সাংবিধানিক আধিকার আছে । বিধানসভায় এ বিষয়ে কোনও প্রস্তাব পাশ করিয়ে রাজ্যে রাজ্যে বার্তা দিচ্ছেন কি না ।”
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বলেন, “কলকাতা জুড়ে যথারীতি বার্ষিক চুড়ুইভাতি বনভোজন সম্পন্ন হয়েছে পুলিশের বদান্যতায় । যা যা নিষেধ করা হয়, সেগুলো খুল্লাছুট । সারাবছর ধরে খুন, লুঠ, .. তার জন্যে একদিন ডিজে সহকারে সেলিব্রেশন হচ্ছে ।” মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করে সেলিম বলেন, “উনি বলছেন সিপিএম কোটি কোটি টাকা খরচ করছে । কিন্তু সিপিএমকে দোষ দিচ্ছেন । তার মানে ভয় পাচ্ছেন । লাল সেলাম জানাচ্ছি আমাদের ছেলেমেয়েদের, যাঁরা নিজেরই ইচ্ছেয় মিথ্যের বিরুদ্ধে কাজ করছেন ।’’
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম
সেলিম আরও বলেন, ‘‘বামফ্রন্টের আমলে মানুষ ভোট দিতে পারত না বলে উনি বলছেন । উনি কি করে বামফ্রন্ট আমলে জিততেন ? এটা হচ্ছে মিথ্যেচারের নমুনা । এখন তো বোমা-বন্দুক-পিস্তল সহযোগে ভোট লুঠ করা হয় । বড় আকারে । বিধানসভা, লোকসভা তো দূর একটা সমবায় সমিতির নির্বাচনেও ভোট লুঠ করছে । আর আমাদের দোষ দিচ্ছেন ।”
কংগ্রেস কী বলছে ?
প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র সৌম্যআইচ রায় বলেন, “বাঙালি বাংলাভাষীরা বাংলা ভাষা রক্ষা করার জন্য আন্দোলন করেছে । জীবন দিয়েছে এপার বাংলা, ওপার বাংলা – উভয়ক্ষেত্রেই । কিন্তু বাংলা ভাষার অস্মিতাকে কাছে লাগিয়ে বিভিন্ন রাজ্যে যেমন বাঙালিদের উপর অত্যাচার করছে তীব্র ন্যক্কারজনক । কিন্তু রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এটার কি জবাব দেবেন, গত 14 বছরের বাংলা থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ কেন ভিন রাজ্যে গিয়ে কাজ করতে হচ্ছে ?’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী বাংলা ভাষায় মানুষ নিজের রাজ্য ছেড়ে খুশি খুশি অন্য রাজ্যে যান না । আগে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়াররা এই রাজ্য থেকে চলে যেতেন, এখন তাঁদেরই অনুসরণ করে ক্ষিদের তাড়নায় বাংলাভাষী মানুষরা ভিন রাজ্যে যাচ্ছেন । এর ফলে রাজ্য থেকে মেধার পলায়ন হচ্ছে । পুঁজির পলায়ন হচ্ছে। ফলে মানুষকে ভুল বুঝিয়ে বিভ্রান্ত করে রাজনীতির রুটি স্যাঁকা ! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে 2026-এর নির্বাচনে বাংলার মানুষ জবাব দেবেন ।”
আরও পড়ুন:- ৩ বছরে ১১১০% রিটার্ন, সোমবারও লগ্নিকারীদের নজরে রেলের এই স্টক
আরও পড়ুন:- কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছেন ? মুক্তি পেতে সহজ কিছু উপায় জেনে নিন