Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- দেশের কৃষক বন্ধুদের আর্থিক অবস্থার উন্নতির জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কিষাণ ক্রেডিট কার্ড (Kisan Credit Card) প্রকল্পের সূচনা করা হয়েছে। ভারতবর্ষের বহু কৃষক অর্থনৈতিক দিক থেকে উপকৃত হয়েছেন এই কিষাণ ক্রেডিট কার্ড প্রকল্পের মাধ্যমে। তবে এবারে ২০২৫ সালে এই দুর্দান্ত প্রকল্পে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। মূলত দেশের দরিদ্র কৃষকদের প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে এই প্রকল্পকে আরো বেশি সহজ করে তোলা হচ্ছে।
Apply online Kisan Credit Card Scheme Yojana
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধি (PM Kisan) প্রকল্পের অন্তর্গত Kisan Credit Card বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই প্রকল্পের মাধ্যমে মূলত কৃষি ও সংশ্লিষ্ট কার্যকলাপের জন্য অত্যন্ত সহজে কোনরকম বন্ধক ছাড়াই ঋণ দেওয়া হয়। এতদিন পর্যন্ত কিষান ক্রেডিট কার্ড (KSS) প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের কৃষকেরা সর্বোচ্চ ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত Loan নিতে পারতেন। তবে এবারে সেই অর্ধের পরিমাণ বাড়িয়ে ৫ লক্ষ টাকা করা হয়েছে। দেশের কৃষকদের আর্থিক চাহিদার বিষয়টিকে মাথায় রেখে কোনরকম জামানত ছাড়াই অত্যন্ত সহজ পদ্ধতির মাধ্যমে এই ঋণ (Loan) দেওয়া হবে।
কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের সুযোগ সুবিধা
২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে কেন্দ্রীয় সরকারের পিছন ক্রেডিট কার্ড প্রকল্পটিকে নতুন করে পর্যালোচনা করা হয়েছে। যার ফলে এই প্রকল্পের ঋণের পরিমাণ ৩ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ লক্ষ টাকা করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সহ সমগ্র দেশের কৃষক বন্ধুদের (Krishak Bandhu) বীজ, সার, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদির জন্য বিপুল পরিমাণে অর্থের প্রয়োজন হয়।
কৃষিভিত্তিক দেশ হওয়ার কারণে ভারতবর্ষে এই ধরনের খরচ গুলি নির্বাহের জন্য কিষান ক্রেডিট কার্ড প্রকল্প চালু করা হয়েছে। এক্ষেত্রে কোনরকম জামানত বা গ্যারান্টার ছাড়াই ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারেন দেশের কৃষকেরা। তবে এর উপরে ঋণ গ্রহণের জন্য জমি বা অন্যান্য সম্পত্তি বন্ধক রাখতে হতে পারে। ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে কৃষকদের তিন লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণের জন্য বার্ষিক মাত্র ৭ শতাংশ হারের সুদ দিতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো কৃষক সময় মতো ঋণ পরিশোধ করলে ৩ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত ছাড় দেওয়া হবে। সুদের হার কমে ৪ শতাংশ হয়ে যাবে।
অন্যান্য ক্রেডিট কার্ডের তুলনায় কিষান ক্রেডিট কার্ড অন্য রকম ভাবে কাজ করে থাকে। এক্ষেত্রে রিভলভিং ক্যাশ ক্রেডিট একাউন্ট (Revolving Cash Credit Account) হিসাবে কাজ করে এই Kisan Credit Card Yojana. কৃষকরা নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী তাদের নির্দিষ্ট ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা তুলতে পারেন। পরবর্তী সময়ে ফসলের ফলনের উপর নির্ভর করে পরিশোধের সময় নির্ধারিত হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে কৃষকেরা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হলে, নতুন করে পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানো হয়।
কিষাণ ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের জন্য ডেবিট কার্ড, প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনা (PMFB) ও ব্যক্তিগত দুর্ঘটনা বীমা (PAIS) সুরক্ষা দেওয়া হয়। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ফসলের ক্ষতি হলে সরকারি সাহায্য ও পাওয়া যায়। মোট কথা এই ক্রেডিট কার্ড থাকলে কৃষকদের যাবতীয় দায়িত্ব সরকার বহন করে।
কিষাণ ক্রেডিট কার্ডে আবেদনের যোগ্যতা
কিষাণ ক্রেডিট কার্ড প্রকল্পে আবেদনের জন্য আবেদনকারী প্রার্থীকে অবশ্যই ভারতবর্ষের স্থায়ী কৃষক হতে হবে। এক্ষেত্রে কৃষক, ভাড়াটে চাষি, শেয়ার ক্রপার, স্বনির্ভর গোষ্ঠী (SHG) এবং যৌথ দায়বদ্ধ গোষ্ঠী (JLG) এর অন্তর্ভুক্ত সমস্ত কৃষকেরাই এই প্রকল্পের আবেদন জানাতে পারবেন। তবে এই ক্ষেত্রে আবেদনকারীর বয়স অন্ততপক্ষে ১৮ বছর হওয়া আবশ্যক।
প্রয়োজনীয় নথিপত্র
Kisan Credit Card প্রকল্পে আবেদনের জন্য নিম্নলিখিত নথিগুলি জমা করতে হবে-
- আবেদনকারীর আধার কার্ড বা ভোটার কার্ড,
- আবেদনকারীর প্যান কার্ড ডিটেলস,
- জমির মালিকানার প্রমাণপত্র,
- চাষের ফসলের ধরন,
- জমির পরিমাণ সংক্রান্ত তথ্য,
- বয়স ও ঠিকানায় প্রমাণপত্র ইত্যাদি।
কিষাণ ক্রেডিট কার্ডে আবেদন পদ্ধতি
Kisan Credit Card বা KCC প্রকল্পের আবেদনের জন্য যোগ্য কৃষকেরা তাদের নিকটবর্তী যে কোন ব্যাংকের শাখায় গিয়ে যোগাযোগ করতে পারেন অথবা অনলাইনে আবেদন জানাতে পারেন। কেন্দ্রীয় সরকারের এই প্রকল্পের সুযোগ সুবিধা স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (SBI), ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া, আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক, এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির তরফে পেয়ে থাকেন দেশের কৃষকেরা। অফলাইনের ক্ষেত্রে কৃষকদের ব্যাংকে গিয়ে প্রয়োজনীয় আবেদনপত্র পূরণ করে নথিপত্র গুলি জমা করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে আবেদন জমা দেওয়ার তিন থেকে চার দিনের মধ্যে ব্যাংকের পক্ষ থেকে কৃষকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।
উপসংহার
ভারতবর্ষের মতো কৃষিভিত্তিক দেশে বহুকাল ধরেই কৃষকদের অবস্থা সমাজের দরিদ্র শ্রেণীর মধ্যে পড়ে। যে মানুষেরা গোটা দেশের মানুষের মুখে অন্ন তুলে দিচ্ছেন, তাদেরকেই অনেক সময় অনাহারে দিন কাটাতে হয়। এই সমস্ত সমস্যার সমাধান এবং কৃষকদের দৈনিক জীবন যাপনের মান উন্নয়নের কারণেই কৃষক ক্রেডিট কার্ড প্রকল্পটি শুরু করা হয়। বর্তমানে এই প্রকল্পের মাধ্যমে মধ্যস্থতাকারীদের সহায়তা ছাড়াই দেশের কৃষকেরা নিজে নিজে ক্ষেত্রে উন্নতি করতে সক্ষম হচ্ছেন। নতুন করে এই স্কিম পর্যালোচনা করার ফলে একাধিক সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে কৃষক বন্ধুদের উন্নতির পথের দিশারী হয়ে উঠতে পারে কিষান ক্রেডিট কার্ড প্রকল্প।
আরও পড়ুন:- উত্তরবঙ্গ-সিকিমের ৩ অফবিট ডেস্টিনেশন ঘোরার সুযোগ মাত্র ১৫০০ টাকায়।
আরও পড়ুন:- মুখ্যমন্ত্রীর নামে সোশ্যাল মিডিয়ায় কুকথা পোস্ট করে শাস্তির মুখে চুঁচুড়ার ব্যক্তি, কি লিখেছিলেন ? দেখুন