Bangla News Dunia, Pallab : ঠান্ডা যুদ্ধের উত্তেজনার পারদ যখন তুঙ্গে, ঠিক তখনই এক গোপন পারমাণবিক রহস্যের (Nuclear Mystery) জন্ম হয়েছিল হিমালয়ের বরফাবৃত চূড়ায়। চিনের প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষার (16 অক্টোবর, 1964) পর বিশ্বজুড়ে এক নতুন স্নায়ুযুদ্ধের সূচনা হয়। এই পরিস্থিতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত এক গোপন অপারেশনে হাত মেলায়, যার লক্ষ্য ছিল চিনের পারমাণবিক কার্যকলাপের ওপর নজর রাখা। কিন্তু প্রকৃতির রুদ্র রূপের কাছে হার মেনে হিমালয়ের গভীরে হারিয়ে যায় একটি পারমাণবিক চালিত গুপ্তচর যন্ত্র। সেই যন্ত্র কি আজও ঘুমিয়ে আছে নন্দাদেবীর বরফের গভীরে, নাকি তার তেজস্ক্রিয় প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে স্থানীয় পরিবেশ ও জনজীবনে? এই প্রশ্ন আজও অমীমাংসিত।
আরও পড়ুন : এই সব খাবার খেলে নষ্ট হতে পারে লিভার, জেনে নিন !
গোপন অভিযানের সূত্রপাত:
১৯৬৫ সালে চিনের আকস্মিক পরমাণু বোমা পরীক্ষার পর ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয়েই বিচলিত হয়ে পড়ে। চিনের পারমাণবিক সক্ষমতা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের জন্য একটি উচ্চাভিলাষী এবং ঝুঁকিপূর্ণ পরিকল্পনা গৃহীত হয়। এই পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য ছিল হিমালয়ের নন্দাদেবী পর্বতের প্রায় ২৫,০০০ ফুট উচ্চতায় একটি পারমাণবিক শক্তি চালিত দূরসংবেদী যন্ত্র (Nuclear-powered listening device) স্থাপন করা। এই যন্ত্রটি চিনের লোব নর (Lop Nor) পারমাণবিক পরীক্ষা কেন্দ্রের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম হত। এই যন্ত্রে একটি প্লুটোনিয়াম জেনারেটর ছিল, যা দীর্ঘমেয়াদি বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করত।
নন্দাদেবীর পথে বিপদ:
মার্কিন সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (CIA) এবং ভারতের ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (IB)-এর এক যৌথ দল এই বিপজ্জনক অভিযানের দায়িত্ব নেয়। প্রশিক্ষিত পর্বতারোহী এবং গুপ্তচরদের সমন্বয়ে গঠিত এই দলটি অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে নন্দাদেবী শৃঙ্গের দিকে অগ্রসর হয়। কিন্তু ১৯৬৫ সালের অক্টোবর মাসে অভিযান চলাকালীন এক ভয়াবহ তুষারঝড় (blizzard) তাদের পথ আটকে দেয়। প্রতিকূল আবহাওয়া এবং চরম ঠান্ডায় টিকে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়লে, দলটি বাধ্য হয় পারমাণবিক যন্ত্রটি নন্দাদেবীর ঢালেই ফেলে রেখে ফিরে আসতে। যন্ত্রটি অত্যন্ত সুরক্ষিত কন্টেইনারে রাখা ছিল, কিন্তু সেটি কতক্ষণ অক্ষত থাকবে, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়।
উদ্ধার অভিযান এবং ব্যর্থতা:
পরের বছর, অর্থাৎ ১৯৬৬ সালের মে মাসে, যন্ত্রটি উদ্ধারের জন্য একটি নতুন অভিযান শুরু হয়। কিন্তু তুষারপাত এবং প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে যন্ত্রটির কোনো খোঁজ মেলেনি। এরপর আরও বেশ কয়েকটি অনুসন্ধান অভিযান চালানো হয়, কিন্তু প্রতিবারই ব্যর্থতা আসে। যন্ত্রটি কোথায় হারিয়ে গেল, তা আজও এক রহস্য। এটি কি গভীর বরফের নীচে চাপা পড়ে আছে, নাকি কোনো হিমবাহের সঙ্গে ভেসে গিয়েছে?।
পরিবেশগত উদ্বেগ:
এই পারমাণবিক যন্ত্রটি হারিয়ে যাওয়ার ফলে পরিবেশগত এবং স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ সৃষ্টি হয়। যন্ত্রটিতে থাকা প্লুটোনিয়াম-২৩৮ (Plutonium-238) একটি অত্যন্ত তেজস্ক্রিয় উপাদান, যার অর্ধায়ু (half-life) প্রায় ৮৭.৭ বছর। যদি এই কন্টেইনারটি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং প্লুটোনিয়াম পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে তা স্থানীয় জল সরবরাহ, মাটি এবং জীববৈচিত্র্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। নন্দাদেবীর বরফ গলে গেলে তেজস্ক্রিয় বর্জ্য ভাগীরথী নদীর মাধ্যমে গঙ্গা নদীতে মিশে যেতে পারে, যা লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলবে।
আরও পড়ুন : কীভাবে ডাউনলোড করবেন ২০০২ সালের ভোটার তালিকা ? দেখে নিন