জমির রেজিস্ট্রেশন নিয়ে নয়া নিয়ম ! চালু হচ্ছে কবে ?

By Bangla News Dunia Desk - Pallab

Published on:

Bangla News Dunia, Pallab : ভারতে সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়ের সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল জমির রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া। এতদিন ধরে এই প্রক্রিয়া ছিল কাগজ-কলম নির্ভর ভিত্তিক, জটিল, দালাল-নির্ভর এবং সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। কিন্তু অবশেষে সেই পুরনো ব্যবস্থা বদলাতে উদ্যোগী হল কেন্দ্র সরকার। জানা যায়, ২০২৫ সালের “Registration Bill” নামক নতুন খসড়া বিলের মাধ্যমে জমির রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতিতে আমূল পরিবর্তনের আনতে চাই কেন্দ্র। এই আইন কার্যকর হলে, ১৯০৮ সালের পুরানো Registration Act-এর স্থলাভিষিক্ত হতে পারে বলে জানা যাচ্ছে।

নতুন আইন কেন আনা হচ্ছে?

এদিকে সরকার তথ্য সুত্র অনুযায়ী, একবিংশ শতাব্দীর এই ডিজিটাল যুগে জমির মত গুরুত্বপূর্ণ সম্পদের লেনদেন প্রক্রিয়া এখনও পুরনো নিয়মে হয়ে আসছে। বহু রাজ্যে এখনও জমির রেজিস্ট্রি করতে হলে তহসিল অফিসে বা রেজিস্ট্রি অফিসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে কাজ করতে হচ্ছে, পাশাপাশি দালালের সাহায্য নিতে হয়, ঘুষের অভিযোগও শোনা যায় নানা দিক থেকে।

নতুন Registration Bill, 2025-এর মূল উদ্দেশ্য হল:

  • গোটা দেশে একজাতীয় ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম চালু  (One Nation, One Registry)
  • রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়াকে পুরোপুরি অনলাইন ও স্বচ্ছ করে তোলা
  • জালিয়াতি, দুর্নীতি ও জমি সংক্রান্ত মামলা কম করার চেষ্টা
  • সাধারন নাগরিকদের জন্য সময়, খরচ ও ঝঞ্ঝাট কম করানো

কী কী গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন থাকছে নতুন নিয়মে?

১. ঘরে বসেই জমির রেজিস্ট্রি

এর ফলে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হল – এখন থেকে আপনি ঘরে বসেই জমির রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন। কোনও রেজিস্ট্রি অফিস বা তহসিল অফিসে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।

  • অনলাইনে ডকুমেন্টস আপলোড, ভেরিফিকেশন এবং ফি পেমেন্ট করতে হবে
  • আবেদনকারী পাবেন ডিজিটাল সিগনেচার সহ রেজিস্ট্রি কপিও
  • সময়, টাকা এবং শ্রম তিনটি ক্ষেত্রেই সাশ্রয় হতে পারে

২. আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ দলিলের বাধ্যতামূলক রেজিস্ট্রি

যেখানে আগে শুধু সেল ডিড (Sale Deed) রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক ছিল। কিন্তু এখন অনেক দলিলই বাধ্যতামূলকভাবে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে, যেমন:

  1. Agreement to Sell
  2. Power of Attorney (PAO)
  3. Sale Certificate
  4. Equitable Mortgage
  5. Judicial Order (আদালতের আদেশ)

এই নিয়ম চালু হলে জমি সংক্রান্ত জটিলতা ও ফেক ডকুমেন্টস তৈরি অনেকটাই রোধ করা যাবে বলে জানা যায় ।

৩. আধার ও বায়োমেট্রিক যাচাইকরণ

ব্যক্তিগত পরিচয় প্রমাণে নতুন রেজিস্ট্রেশন আইনে আধার ভিত্তিক বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন বাধ্যতামূলক করা হতে পারে। এর পাশাপাশি ভোটার কার্ড ও পাসপোর্টও ব্যবহার করা যাবে, তবে আধারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে।

এর ফলে—

  1. নকল পরিচয় দেখিয়ে রেজিস্ট্রি বন্ধ হবে
  2. জালিয়াতির আশঙ্কা কমবে অনেকটা
  3. এরফলে প্রতিটি জমির প্রকৃত মালিকের রেকর্ড ডিজিটাল আকারে সংরক্ষিত থাকবে

৪. ভিডিও রেকর্ডিং ও ডিজিটাল পেমেন্ট বাধ্যতামূলক

প্রত্যেকটি রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ায় এখন ভিডিও রেকর্ডিং বাধ্যতামূলক। এটি ডিজিটাল প্রমাণ হিসেবে আদালতেও গ্রহণযোগ্য হতে পারে।

এছাড়াও সমস্ত স্ট্যাম্প ডিউটি ও রেজিস্ট্রি ফি দিতে হবে—

  1. UPI
  2. Net Banking
  3. Debit/Credit Card-এর মাধ্যমে

নগদ লেনদেন নিষিদ্ধ করা হবে, যার ফলে দুর্নীতি ও ঘুষ দেওয়া-নেওয়া কঠিন হয়ে দাড়াবে।

“One Nation, One Registry” কী?

এটি একটি কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগ, যেখানে পুরো দেশব্যাপী একই ধরণের রেজিস্ট্রেশন ব্যবস্থা চালু করা হবে। অর্থাৎ—

  1. রাজ্য ভেদে আলাদা নিয়ম থাকবে না এর ফলে
  2. এক রাজ্যে বসে অন্য রাজ্যের জমিও রেজিস্ট্রি করা সম্ভব হবে
  3. জমির সব তথ্য থাকবে একক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মধ্যে 

এই ব্যবস্থায় পুরো দেশে রিয়েল এস্টেট লেনদেন আরও সহজ, নিরাপদ ও দ্রুত করবে।

কবে থেকে চালু হচ্ছে নতুন আইন?

  • খসড়া Registration Bill, 2025 তৈরি হয়ে গেছে এমনটাই জানা যাচ্ছে
  • জানা যায় ২৫ জুন ২০২৫ পর্যন্ত জনমত গ্রহণ করা হয়েছে
  •  ২০২৫ এর শেষে সংসদের অধিবেশনে বিল পেশ হতে পারে
  • সম্ভাব্য বাস্তবায়নের সময়সীমা – ডিসেম্বর ২০২৫ থেকে নতুন আইন চালু হতে পারে বলে জানা যায়

একই সঙ্গে লক্ষ্য রাখা হয়েছে – ২০২৫ সালের মধ্যেই দেশের ১০০% জমির রেকর্ড ডিজিটাল করতে নিতে হবে। তবে উত্তর-পূর্ব ভারতের কিছু রাজ্য এবং লাদাখ এই প্রকল্পে আপাতত অন্তর্ভুক্ত হবে না ।

Bangla News Dunia Desk - Pallab

মন্তব্য করুন