Soil Health Card : এবার মাটির স্বাস্থ্য কার্ড প্রকল্প (Soil Health Card Scheme) ভারতের কৃষকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারী উদ্যোগ হতে চলেছে, যা প্রথমবারের মতো ফেব্রুয়ারি ২০১৫ সালে কৃষি ও কৃষক কল্যাণ মন্ত্রণালয় দ্বারা চালু করা হয়েছিল। এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হল কৃষকদের হাতে বেশ কিছু কৃষি বিষয়ক সহায়তা প্রদান করা, আসুন তাহলে আরও বিস্তারিত তথ্য দেখে নেওয়া যাক।
এই প্রতিবেদনের এই সংক্রান্ত আরও বিস্তারিত তথ্য আলোচনা করা হচ্ছে। এই প্রকল্পের সুবিধা নিতে শেষ পর্যন্ত পড়বেন –
সম্পর্কিত পোস্ট
মহিলাদের ঘরে বসে রোজকার সরকারের! মাসে 5,000-7,000 পাবেন – Government BS Scheme
এই প্রকল্পের মূল বৈশিষ্ট্য
- প্রথমত দেশের সমস্ত কৃষকেরা এই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন।
- তিন বছরে একবার করে জমির মাটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে সরকারের পক্ষ থেকে এবং একটি মাটির স্বাস্থ্য কার্ড দেওয়া হবে।
- এই কার্ডে মাটির পিএইচ মান, নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশ, জৈব কার্বনের উপস্থিতি ইত্যাদি বিস্তারিত তথ্যের রিপোর্ট দেওয়া হবে।
- দেশের কৃষকরা এই কার্ড দেখে বুঝতে পারেন তাঁদের জমির জন্য কোন সার প্রয়োজন এবং কোন ফসল সবচেয়ে উপযোগী হতে পারে।
মাটির স্বাস্থ্য কার্ড প্রকল্পের সুবিধা
১. মাটির নিয়মিত পর্যবেক্ষণ
এই প্রকল্পের অধীনে প্রতি ৩ বছর অন্তর কৃষকদের জমির মাটি পরীক্ষা করা হয়ে থাকবে। এতে কৃষক বুঝতে পারেন তাঁদের জমির অবস্থা পরিবর্তন হচ্ছে না একই রয়েছে এবং সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
২. হালনাগাদ তথ্য
এর নিয়মিত মাটি পরীক্ষা করার ফলে কৃষকরা সবসময় মাটির সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে অবগত থাকবেন, এর ফলে তাঁরা উৎপাদন পরিকল্পনা করতে পারবে এবং সার প্রয়োগ আরও ভালোভাবে করতে পারেন, টাকা বাঁচবে।
৩. বিশেষজ্ঞদের সহায়তা
সরকার নিযুক্ত কৃষি বিশেষজ্ঞরা কৃষকদের মাটি উন্নয়নে সহায়তা করে থাকেন এবং সঠিক ফসল ও সার ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
৪. নির্ভরযোগ্য রেকর্ড
মাটির স্বাস্থ্য কার্ড কৃষকদের সেই জমির একটি রেকর্ড সংরক্ষণ করে রাখে যা পরবর্তী সময়ে উন্নয়নের পরিকল্পনা তৈরিতে সহায়ক হয়ে থাকে।
৫. পুষ্টির ঘাটতি চিহ্নিতকরণ
এই কার্ড দেখিয়ে দিবে মাটির মধ্যে কোন পুষ্টির অভাব রয়েছে কিনা। যেমন: নাইট্রোজেন, ফসফরাস বা পটাশের ঘাটতি বা বৃদ্ধি। এরপর কৃষকদের সেই অনুযায়ী সারের ব্যবহার বাড়াতে বা কমাতে বলা হবে।
৬. সঠিক ফসল নির্বাচন
মাটির গঠন ও পুষ্টি অনুযায়ী কোন ফসল উপযুক্ত সেই জমির জন্য উপযুক্ত তার পরামর্শ দেওয়া হয়। এতে উৎপাদন বাড়ে ও লাভ বেশি হয়ে থাকে।
৭. পরিবেশ বান্ধব চাষাবাদ
এই প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকদের জৈব সার ব্যবহারে উৎসাহিত করা হয়ে থাকে এবং কেমিক্যাল সার নির্ভরতা কমানো হয়ে থাকে। এর ফলে পরিবেশের উপর খারাপ প্রভাব পড়ে না।
কারা এই প্রকল্পের জন্য যোগ্য?
এই প্রকল্পের জন্য আলাদা কোনও যোগ্যতার প্রয়োজন নেই। ভারতের যেকোনও রাজ্যের নাগরিক যিনি কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে বা জমি রয়েছে, তিনি এই প্রকল্পের সুবিধা নিতে পারেন।
তবে কিছু সাধারণ নথিপত্র প্রয়োজন হতে পারে:
- আধার কার্ড
- বসবাসের প্রমাণ (রেশন কার্ড, ভোটার কার্ড)
- ব্যাঙ্কের পাসবুক কপি
কীভাবে মাটির স্বাস্থ্য কার্ড প্রকল্পের জন্য আবেদন করবেন?
অফলাইনে আবেদন পদ্ধতি:
১. আপনার জেলা বা ব্লকের কৃষি অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
২. অফিসার যাচাই করে দেখবেন যে, আপনার গ্রাম বা এলাকা রাজ্যের বার্ষিক অ্যাকশন প্ল্যানে রয়েছে কি না।
৩. এর পর কৃষি সহায়ক আপনার জমিতে এসে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করবে ও মোবাইল অ্যাপে জমি জিও-ট্যাগ করবে।
৪. মাঠে গুসে মাটির নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ল্যাবরেটরিতে পাঠাবে।
৫. মাটি পরীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী আপনি একটি স্বাস্থ্য কার্ড পেয়ে যাবেন যেখানে উল্লেখ থাকবে কিসের অভাব রয়েছে এবং কোন সার কতটুকু প্রয়োগ করলে ভালো ফলন হবে।
অনলাইনে আবেদন পদ্ধতি:
১. Soil Health Card প্রকল্পের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যান – https://soilhealth.dac.gov.in
২. “Registration” ট্যাব-এ ক্লিক করতে হবে।
৩. অনলাইন ফর্ম পূরণ করে জমা দিতে হবে। একটি ইউনিক রেজিস্ট্রেশন নম্বর জেনারেট হয়ে যাবে।
৪. আপনি পরবর্তীতে সেই ওয়েবসাইট থেকে নিজের মাটির নমুনা স্ট্যাটাস দেখা, রিপোর্ট দেখা এবং কার্ড প্রিন্ট করে নিতে পারবেন।
সবশেষে বলাই বাহুল্য যে, মাটির স্বাস্থ্য কার্ড প্রকল্প কৃষকদের জন্য একটি আশীর্বাদ স্বরূপ প্রকল্প হতে চলেছে। এটি শুধু মাটির গুণমান রক্ষা করে না, বরং কৃষকের আয়ও বৃদ্ধি করবে। যেকোনও কৃষক চাইলে এই প্রকল্পের আওতায় এসে তাঁর জমির সঠিক পরিচর্যা করে নিতে পারবেন এবং পরিবেশ বান্ধব চাষাবাদে যুক্ত করতে পারবেন। আপনার জমির সঙ্গে সঙ্গে নিজের স্বাস্থ্যের প্রতিও সচেতন থাকার সুযোগ পাবেন এবং আর্থিক নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনে স্বাস্থ্য বীমাও বিবেচনা করতে পারেন।