Bangla News Dunia, Pallab : রাজ্য রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্র সরকার উভয়ে দেশের জনগণের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প নিয়ে এসেছে। এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প নিয়ে এসেছে যার সত্যিই দরকার ছিল। রাজ্য এবং কেন্দ্র সরকারের কিছু কিছু প্রকল্পে মানুষ উপকৃত হয়নি এরকম খুঁজে পাওয়াই মুশকিল। ঠিক তেমনই এক প্রগতিশীল উদ্যোগ হল প্রধানমন্ত্রী স্ট্রিট ভেন্ডরস আত্মনির্ভর নিধি, সংক্ষেপে PM Swanidhi Yojana বলা হয়।
এই যোজনার মাধ্যমে সরকার নির্দিষ্ট ব্যবসায়ীকে আত্মনির্ভর হতে সাহায্য করতে চাই। এর মাধ্যমে তারা গ্যারান্টি ছাড়া পায় সহজ শর্তে লোন এবং ব্যবসার উন্নয়নের জন্য ডিজিটাল সহায়তা হতে চলেছে।
এই স্কিমের সূচনা ও উদ্দেশ্য
সাধারণ ভাবে PM Swanidhi Yojana শুরু হয়েছিল ২০২০ সালের ১ জুন তারিখ থেকে, ঠিক তখন যখন গোটা দেশ কোভিড-১৯ মহামারিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। কারন লকডাউনের কারণে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জীবিকা একপ্রকার থমকে গিয়েছিল। তাঁদের সাহায্য করতেই এই প্রকল্প চালু করা হয়ে থাকে।
এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হল — ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সহজে ও স্বল্প সুদে ঋণ দিয়ে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করা এবং দেশের অর্থনীতিতে এই অংশটিকে আরও শক্তিশালী হিসেবে গড়ে তোলা।
সম্প্রসারিত সময়সীমা ও নয়া লোন সীমা
এক্ষেত্রে প্রথমে ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত লোন দেওয়া হলেও এখন তা বাড়িয়ে তিন ধাপে মোট ₹৯০,০০০ পর্যন্ত দেওয়া হয় এবং ভালো কথা হলো এই প্রকল্পের মেয়াদ ৩১ মার্চ, ২০৩০ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
কেন্দ্র সরকারের এই সিদ্ধান্তে প্রায় ১.১৫ কোটি স্ট্রিট ভেন্ডর উপকৃত হতে চলেছেন । এর মধ্যে ৫০ লক্ষ নতুন ভেন্ডর এই প্রকল্পের আওতায় আসবেন বলে আশা জানা যাচ্ছে।
কারা এই প্রকল্পের সুবিধা পেতে পারেন?
জানা যায়, এই স্কিমটি শুধুমাত্র শহরাঞ্চলের এবং আধা-শহর এলাকার রেহড়ি বা পটারি ব্যবসায়ীদের জন্য প্রযোজ্য হবে। বিশেষ করে যারা ফুটপাতে খাবার বিক্রি করেন, জামাকাপড়, চা, ফল, সবজি, চপ-মুড়ি বা অন্যান্য দ্রব্য বিক্রি করে থাকেন — তাঁরা প্রত্যেকেই এই প্রকল্পের আওতায় আসতে চলেছেন।
প্রার্থীর যোগ্যতা:
- প্রার্থীকে শহর বা আধা-শহর এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা হওয়া দরকার।
- তার নিজস্ব ব্যবসা থাকা দরকার (যেমন – হকার, ভেন্ডার, ছোট দোকানি)।
- Aadhaar ও ভোটার কার্ডের মতো পরিচয়পত্র থাকা বাধ্যতামূলক থাকতে হবে।
- আগের লোন সঠিক সময়ে পরিশোধ করলে পরবর্তী ধাপে বেশি লোনের সুযোগ পেতে পারেন।
ঋণ দেওয়ার কিস্তি
নিচে দেওয়া হল PM Swanidhi Yojana-র ধাপে ধাপে ঋণ বিতরণের বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হল:
ধাপ | ঋণের পরিমাণ | শর্ত | সুবিধা |
---|---|---|---|
প্রথম ধাপ | ₹15,000 | প্রথম আবেদন | গ্যারান্টি ছাড়াই ঋণ, ১২ মাসে পরিশোধ |
দ্বিতীয় ধাপ | ₹25,000 | প্রথম লোন সময়মতো পরিশোধ করতে হবে | পূর্বের রেকর্ড ভালো থাকলে অনুমোদন |
তৃতীয় ধাপ | ₹50,000 | দ্বিতীয় লোনও সময়মতো পরিশোধ করতে হবে | সর্বোচ্চ সীমার লোন, EMI সুবিধাসহ |
মোট এই তিন ধাপে মিলিয়ে একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ ₹৯০,০০০ পর্যন্ত লোন পেতে পারেন।
প্রয়োজনীয় নথিপত্র
এই যোজনার আওতায় আবেদন করতে গেলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস প্রয়োজন রয়েছে। নিচে সেগুলি দেওয়া হল:
- আধার কার্ড (Aadhaar Card)
- পাসপোর্ট সাইজ ছবি
- ব্যবসার প্রমাণ বা ডকুমেন্ট (যদি থাকে)
- ঠিকানা ও পরিচয়ের প্রমাণ
- মোবাইল নম্বর (OTP আসার জন্য)
- ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের ডিটেলস ইত্যাদি
কীভাবে আবেদন করবেন?
১. অনলাইনে আবেদন:
- pmsvanidhi.mohua.gov.in ওয়েবসাইটে যেতে হবে।
- “Apply for Loan” অপশন সিলেক্ট করতে হবে।
- আপনার নাম, মোবাইল নম্বর, ব্যবসার ধরন ইত্যাদি তথ্য দিতে হবে।
- Aadhaar ভেরিফিকেশন সম্পন্ন করতে হবে।
- প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট স্ক্যান করে আপলোড করতে হবে
- ফর্ম জমা দিন এবং আবেদন নম্বর সংরক্ষণ করতে হবে।
২. অফলাইনে আবেদন:
যদি আপনার অনলাইনে আবেদন করতে সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে স্থানীয় পৌরসভা, ব্যাংক বা CSC (Common Service Centre)-তে গিয়ে অফলাইন আবেদন জমা করা যাবে।
অন্যান্য বাড়তি সুবিধা
এই প্রকল্প শুধু লোন দেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং ব্যবসায়ীদের ডিজিটাল লেনদেনের জন্য উৎসাহিত করতেও বিশেষ সুবিধাও দেওয়া হবে।
- ডিজিটাল পেমেন্ট ইনসেনটিভ বর্যস্থা: যারা ডিজিটালি পেমেন্ট গ্রহণ করে থাকেন, তাঁদের ₹১,৬০০ পর্যন্ত ক্যাশব্যাক সুবিধা দেওয়া হয়ে থাককে।
- RuPay ক্রেডিট কার্ড সুবিধা: সময়মতো EMI পরিশোধ করলে ডিজিটাল লেনদেনের জন্য RuPay কার্ড দেওয়া হবে।
- ক্রেডিট স্কোর উন্নয়ন:আর সঠিক সময়ে ঋণ পরিশোধ করলে আপনার CIBIL স্কোর বাড়ে, যা ভবিষ্যতে বড় লোন পেতে সাহায্য করে থাকে।
কেন এই প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ?
কেন্দ্র সরকারের PM Swanidhi Yojana হলো একটি আর্থ-সামাজিক প্রকল্প, যা শুধু অর্থনৈতিকভাবে নয়, সামাজিকভাবেও গরিব ব্যবসায়ীদের উন্নত জীবন গঠনে সাহায্য করে থাকে। মহামারীর পরের সময় থেকে এই প্রকল্প দেশে ক্ষুদ্র ব্যবসার এক গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক শক্তি হয়ে দাড়িয়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের অনুমান।
তাউ এটি আত্মনির্ভর ভারত গঠনের পথে একটি কার্যকর পদক্ষেপ হয়েছে। এর মাধ্যমে রোজগার বৃদ্ধি, নগর অর্থনীতি শক্তিশালীকরণ এবং ডিজিটাল ইন্ডিয়ার লক্ষ্য পূরণ — সবদিক থেকেই এই স্কিম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাড়িয়েছে।