পোস্ট অফিস দিচ্ছে মাসিক ₹৯,২৫০ ! কীভাবে সুযোগ নিবেন ? দেখে নিন বিস্তারিত

By Bangla News Dunia Dinesh

Published on:

পোস্ট অফিস এমআইএস অর্থাৎ মাসিক ইনকাম স্কিম হল এমন এক সরকারি সঞ্চয় সুবিধা, যেখানে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ এককালীন জমা করলে প্রতি মাসে নির্ধারিত হারে মাসিক টাকা পাওয়া যায় যায়। এটি মূলত সেইসব বিনিয়োগকারীদের জন্য তৈরি করা হয়েছে, যারা ঝুঁকিবিহীন, নিরাপদ এবং নিরবচ্ছিন্ন মাসিক আয় করতে ইচ্ছুক ।

বড় কথা হলো, এটি সরকারি গ্যারান্টিযুক্ত হওয়ায় এর ঝুঁকি প্রায় শূন্য থাকে। রিটায়ার্ড ব্যক্তি, গৃহিণী কিংবা মধ্যবয়সী সাধারণ নাগরিকদের জন্য এটি একটি কার্যকরী বিরাট সুসংবাদ হতে পারে।

যৌথ অ্যাকাউন্টে বাড়তি সুবিধা কী?

পোস্ট অফিস এমআইএস স্কিমে দুই ধরণের অ্যাকাউন্ট খোলা সম্ভব—একক এবং যৌথ। একক অ্যাকাউন্টে সর্বাধিক বিনিয়োগ সীমা ৯ লক্ষ টাকা রাখা হয়েছে , যৌথ অ্যাকাউন্টে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ স্ত্রীর সঙ্গে জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট খুললে আপনি অতিরিক্ত ৬ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করার সুযোগ পাবেন।

যেহেতু সুদ নির্দিষ্ট হারে ধার্য হয়, বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়লে মাসিক সুদের অঙ্কও বাড়ে। সেই হিসেবে যৌথ অ্যাকাউন্ট খুললে মাসিক আয় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়।

এককালিন বিনিয়োগে মাসে কত টাকা পাওয়া যাবে?

বর্তমানে পোস্ট অফিস এমআইএস স্কিমে বার্ষিক সুদের হার ৭.৪ শতাংশ দেওয়া হয়ে থাকে। সেই অনুযায়ী, যদি একজন ব্যক্তি ও তার স্ত্রী যৌথভাবে ১৫ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করে থাকেন, তাহলে বার্ষিক সুদ দাঁড়ায় ১,১১,০০০ টাকা।

এই বার্ষিক সুদকে যদি ১২ মাসে ভাগ করা হয় তাহলে মাসিক সুদ দাঁড়ায় প্রায় ৯,২৫০ টাকা । অর্থাৎ পাঁচ বছরের জন্য প্রতিমাসে ৯,২৫০ টাকা পর্যন্ত নিশ্চিত আয় করা সম্ভব।

সুদ পাওয়ার প্রক্রিয়া কেমন?

এই স্কিমে পাওয়া মাসিক সুদ সরাসরি বিনিয়োগকারীর সেভিংস অ্যাকাউন্টে জমা হতে থাকে। ভালো কথা হলো একবার অ্যাকাউন্ট খোলার সময়েই আপনি যেকোনো পোস্ট অফিস সেভিংস অ্যাকাউন্ট লিঙ্ক করতে পারেন, যেখানে সুদের টাকা আসবে।

সাধারণত, প্রতিমাসের একটি নিদিষ্ট তারিখে এই সুদ জমা হয়। এতে বিনিয়োগকারীদের হাতে নগদ টাকা জমা হবে এবং প্রয়োজনীয় খরচ নির্বাহ করা সহজ হয়ে যাবে।

কাদের জন্য এই স্কিম সবচেয়ে উপযোগী?

এই স্কিমে মূলত সেই ব্যক্তিরা বিনিয়োগ করতে পারেন যারা নির্দিষ্ট মাসিক ইনকামের উপর নির্ভর করে থাকেন। বিশেষ করে অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণ ব্যাক্তি, গৃহিণী, বা মধ্যবিত্ত শ্রেণির আয় নির্ভরশীল পরিবারদের জন্য এটি যথাযথ সুযোগ হতে চলেছে।

এছাড়া যারা কোনও ঝুঁকি ছাড়াই দীর্ঘমেয়াদে টাকা জমা রাখতে ইচ্ছুক এবং মাসে নির্ধারিত আয় চাই, তাঁদের জন্যও এটি উপযুক্ত বিনিয়োগ পদ্ধতি হতে পারে।

MIS স্কিমে অ্যাকাউন্ট খোলার প্রক্রিয়া কী?

এই স্কিমে অংশ নিতে হলে প্রথমে নিকটস্থ পোস্ট অফিস ব্রাঞ্চে যেতে হবে। সেখানে অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য নির্ধারিত আবেদন করে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট জমা করতে হবে।

আর বেশ কিছু প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টের মধ্যে রয়েছে প্যান কার্ড, আধার কার্ড, ঠিকানার প্রমাণ এবং দুই কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি। যৌথ অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রে দুজনের কেওয়াইসি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা দরকার।

মেয়াদ ও পূর্বতন বন্ধ করার নিয়ম কী?

ডাক বিভাগের এমআইএস স্কিমে বিনিয়োগের মেয়াদ সাধারণত ৫ বছর হয়। পাঁচ বছর পর আপনি আপনার পুরো মূলধন ফেরত নিতে পারেন কিংবা পুনরায় স্কিমটি নবায়ন করতে পারেন। তবে এখানে এক বছর পূর্ণ হওয়ার আগে অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা যায় না।

যদি আপনি ১ থেকে ৩ বছরের মধ্যে অ্যাকাউন্ট বন্ধ করতে ইচ্ছুক হন , তাহলে কিছু শতাংশ টাকা কেটে নেওয়া হয়ে থাকবে। ৩ বছর পর বন্ধ করলে সেই কাটছাঁটের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম হয়ে থাকে।

কর সুবিধা রয়েছে কি?

পোস্ট অফিস এমআইএস স্কিমে প্রাপ্ত সুদ আয়ের অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে, অর্থাৎ এটি করযোগ্য হয়। এই সুদের উপর ইনকাম ট্যাক্স দিতে হবে, যদি আপনার বার্ষিক আয় করযোগ্য সীমার মধ্যে পড়ে থাকে তাহলে।

তবে এতে কোনও TDS জমা দিতে হয় না। যার ফলে আপনি হাতে সম্পূর্ণ টাকা পাবেন, যদিও বার্ষিক আয়কর রিটার্নে সেটি উল্লেখ করতে হয়। কর সংক্রান্ত বিষয়ে অভিজ্ঞ কাউন্সেলরের পরামর্শ নেওয়া অবশ্যই জরুরি।

MIS স্কিমে বিনিয়োগের সঠিক সময় কবে?

যেহেতু এই স্কিমটি নির্দিষ্ট সুদ দেয় এবং বাজারের পরিস্থিতির উপর নির্ভরশীল হয়না, তাই বছরের যেকোনো সময়েই এই স্কিমে বিনিয়োগ করা সম্ভব। যেকোনো সময় এককালীন টাকা হাতে এলে, সেটিকে এই স্কিমে লগ্নি করতে পারবেন।

তবে সুদের হার সময় সময় পরিবর্তিত হয়ে থাকে। তাই পোস্ট অফিসে গিয়ে বর্তমান সুদের হার যাচাই করে তারপর বিনিয়োগ করাই যুক্তিযুক্ত হবে।

স্ত্রীর সঙ্গে যৌথ অ্যাকাউন্ট কেন উপকারী?

স্ত্রীর সঙ্গে যৌথ অ্যাকাউন্ট খোলার সবচেয়ে বড় সুবিধা হল বিনিয়োগ সীমা বৃদ্ধি পায়। যেখানে একক অ্যাকাউন্টে সীমা ₹৯ লক্ষ হয়ে থাকে, যৌথ অ্যাকাউন্টে তা বেড়ে দাঁড়ায় ₹১৫ লক্ষ পর্যন্ত। এতে মাসিক সুদের অঙ্কও অনেক বেশি হয়ে থাকে।

বিশেষ করে সংসারের দুই সদস্য এই অ্যাকাউন্টে নাম থাকলে উভয়ের জন্যই এটি একটি ভবিষ্যৎ সুরক্ষার দিশা হয়ে থাকে। গৃহিণী বা অবসরপ্রাপ্ত স্ত্রীর জন্য এটি একটি নির্ভরযোগ্য ইনকাম সাপোর্ট হতে পারে।

Bangla News Dunia Dinesh

মন্তব্য করুন