সকলে জানি, বর্তমানে ভারতে ডিজিটাল লেনদেনের বিপ্লব ঘটেছে। নগদ টাকা ব্যবহারের বদলে বর্তমানে অধিকাংশ মানুষ ফোনের মাধ্যমে অর্থ আদানপ্রদান করছেন। বিশেষ করে UPI (Unified Payments Interface) এমন একটি ব্যবস্থা, যা সহজ, দ্রুত এবং নিরাপদ ভাবে করা সম্ভব হয়েছে। তবে সম্প্রতি একটি খবর নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। শোনা যাচ্ছে, নির্ধারিত টাকার বেশি UPI লেনদেনের ওপর GST (Goods and Services Tax) আরোপ হতে পারে বলে জানা যাচ্ছে।
আজকের দিনে শহর তো বটেই, গ্রামের মানুষও UPI ব্যবহার করছেন ধুমধড়ক্কাতে। টাকা পাঠানো, দোকানে পেমেন্ট করা, বিল মেটানো— সব কিছুই এখন UPI এ নির্ভরশীল হয়েছে। ২০২৫ সালে এসে UPI ব্যবস্থায় প্রতিদিন কোটি কোটি ট্রানজ্যাকশন হচ্ছে। এর মাধ্যমে সরকার ডিজিটাল ইন্ডিয়ার লক্ষ্যে অনেকটাই এগিয়ে গেছে বলে জানা যায়।
UPI ব্যবহার করার জন্য শুধু একটি স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট কানেকশন হলেই যথেষ্ট । Google Pay, PhonePe, Paytm, BHIM ইত্যাদি অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে এই পরিষেবা মিলছে সহজে। এতদিন পর্যন্ত এই পরিষেবার জন্য কোনো আলাদা চার্জ দিতে হয়নি গ্রাহকদের।
সম্প্রতি বিভিন্ন মিডিয়ায় দাবি করছে, ২০০০ টাকার ওপরে যেসব UPI লেনদেন করা হচ্ছে, তাতে এবার থেকে GST বসতে পারে বলে জানা যাচ্ছে। এই খবর ছড়িয়ে পড়ার পর অনেকেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন দেশজুড়ে। কারণ, তারা ভাবছেন এর ফলে তাদের লেনদেনে অতিরিক্ত খরচ গুনতে হবে গ্রাহকদের।
আসলে RBI-র গভর্নর কিছুদিন আগেই এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “এই ধরনের প্রযুক্তি চালাতে সরকার বা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর একটা ভালো খরচ হয়। সেই খরচ কোথা থেকে আসবে, তা ভাবতে অবশ্যই হবে।” এই মন্তব্যের পরই জল্পনা শুরু হয়।
এই বিষয়ে সম্প্রতি অর্থ প্রতিমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরী একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবৃতি দিয়েদেন। তিনি জানান, এখন পর্যন্ত GST কাউন্সিলের কাছ থেকে এমন কোনো পরামর্শ আসেনি, যার মাধ্যমে বলা হয়েছে ২০০০ টাকার ওপরে UPI লেনদেনে GST আরোপ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, “GST সংক্রান্ত যেকোনো সিদ্ধান্ত GST কাউন্সিল নেয়। তাদের সুপারিশ ছাড়া এমন কোনো নিয়ম চালু করা যায় না।” অর্থাৎ এখনই এই নিয়ম কার্যকর হচ্ছে না এটা স্পষ্ট হচ্ছে।
অনেকে ভাবছেন, GST ছাড়া অন্য কোনো চার্জ কি বসানো হতে পারে? এটি একেবারে অসম্ভব বিষয় নয়। UPI পরিষেবা অনেকটাই ফ্রি হলেও, এটি চালাতে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ খরচ হচ্ছে সংশ্লিষ্ট সংস্থার। ব্যাংক, NPCI, পেমেন্ট গেটওয়ে এই পরিষেবা অব্যাহত রাখতে প্রযুক্তিগত অবকাঠামো বজায় রাখে। তাই ভবিষ্যতে কোনো ফিক্সড চার্জ বা নির্দিষ্ট সীমার পরে চার্জ বসতে পারে— এমন ভাবনা উঠে আসছে বলে জানা যায়।
তবে এখনও পর্যন্ত সরকার এই বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। ব্যবহারকারীদের স্বস্তিতে রাখতেই এই মুহূর্তে চার্জ বসানো হচ্ছে না বলে জানা যায়।
যদি ভবিষ্যতে ২০০০ টাকার ওপরে UPI লেনদেনে GST আরোপ করা হয়, তবে তা সাধারণ মানুষের ওপর কিছুটা হলেও চাপ সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষত:
- ছোট ব্যবসায়ী, যারা প্রতিদিন মোবাইলে লেনদেন করে থাকেন
- মধ্যবিত্ত যারা ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য UPI নির্ভর হয়েছে
- স্টুডেন্ট বা বেকার যারা অনলাইনে পেমেন্ট করেন
বর্তমানে এই খবর নিয়ে যা গুজব ছড়াচ্ছে, তার অনেকটাই ভিত্তিহীন বলে জানা যাচ্ছে। অর্থ প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী, GST আরোপের জন্য সরকার এখনো কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। তাই গ্রাহকদের এখনই চিন্তিত হওয়ার দরকার নেই। আগামী দিনে যদি এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তাহলে তা নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করে জানানো হবে।
বর্তমানে ভারতে প্রায় ৩৫০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ সক্রিয়ভাবে UPI ব্যবহার করছেন। দিনে গড়ে ৪০ কোটি লেনদেন সম্পন্ন হচ্ছপ। এত বড় স্কেল পরিচালনা করতে প্রযুক্তি, সাইবার নিরাপত্তা, সার্ভার ইত্যাদির জন্য বিশাল ব্যয় প্রয়োজন হচ্ছে। এই খরচ কে বহন করবে — এটাই মূল বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু।
এখানে দুটি দিক থাকতে পারে:
- ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকগুলো চার্জ বহন করবে
- গ্রাহকের থেকে সামান্য চার্জ নেওয়া হতে পারে
এই সিদ্ধান্ত এখনও আলোচনার স্তরেই আছে বলে জানা যায়।
যদিও সরকার এখনও কোনও চূড়ান্ত দিন বা নিয়ম ঘোষণা করেনি, তবে অর্থনীতি বিশ্লেষকদের মতে ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ বা ২০২৬ সালের প্রথম দিকে এই নিয়ম বাস্তবায়ন হতে পারে বলে জানা যায়। তবে এটি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে GST কাউন্সিলের সিদ্ধান্তের ওপর ভিত্তি করে।