ভারতের সংরক্ষণ নীতির ইতিহাসে এবার এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় নিয়ে এলো সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক এই নির্দেশ। এদিন বিচারপতি সূর্য কান্ত ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর বেঞ্চের একটি রায়ে নির্দেশ দেওয়া হয়, সংরক্ষিত শ্রেণির কোনো প্রার্থী যদি সাধারণ (General) শ্রেণির ক্যান্ডিডেটদের চেয়েও বেশি নম্বর পেয়ে থাকেন তবুও তিনি জেনারেল আসনের দাবিদার হবেন না – যদি সংশ্লিষ্ট চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে এমন বিধিনিষেধ উল্লেখ করা থাকে।
তবে সুপ্রিম কোর্টের এই রায় বহু চাকরিপ্রার্থীর কাছে চমকপ্রদ হলেও, এটি সরকারি চাকরির প্রক্রিয়ায় নির্দিষ্ট নীতি ও নিয়ম মেনে নিয়োগের স্বচ্ছতা বজায় রাখার উদ্দেশ্যে এটি করা হয়েছে।
মেধা বনাম সংরক্ষণ: সুপ্রিম কোর্টের ভারসাম্যের চেষ্টা
অনেক দিন ধরেই চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে একটি ট্রেন্ড চলে আসছে – সংরক্ষিত প্রার্থীরা যদি মেধার ভিত্তিতে ভালো নম্বর পেলে, তারা সরাসরি জেনারেল কোটায় সুযোগ পেতেন। কিন্তু এই নতুন রায়ে সেই ধারণায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে।
এদিন সুপ্রিম কোর্ট বলেছে – মেধা নয়, মূল নিয়ামক হবে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির নিয়মাবলী অনুসারে।
রায় অনুযায়ী মূল বিষয়বস্তু:
১. নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি যা বলবে, সেটাই চূড়ান্ত
যে কোনো সরকারি চাকরির নিয়োগের ক্ষেত্রে বিজ্ঞপ্তিতে কী শর্ত রয়েছে – সেটাই শেষ চুড়ান্ত হবে। যদি কোনো বিজ্ঞপ্তিতে বলা থাকে যে সংরক্ষিত শ্রেণির প্রার্থী Relaxation গ্রহণ করলে তাঁরা General কোটার জন্য যোগ্য হবে তবে সেই শর্ত বাধ্যতামূলক করা হবে ।
অর্থাৎ, বিজ্ঞপ্তির নিয়ম অনুযায়ী যাঁরা সংরক্ষিত সুবিধা নিয়েছেন, তাঁরা মেধা দিয়েও জেনারেল আসনের দাবিদার করতে পারবেন না।
২. Relaxation বা ছাড় গ্রহণ করলে সীমাবদ্ধতা তৈরি হয়
প্রার্থীরা যদি বয়স, পরীক্ষা ফি, যোগ্যতা বা অন্য কোনো Relaxation গ্রহণ করে থাকেন এবং বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ থাকে যে Relaxation গ্রহণকারীরা জেনারেল কোটায় বিবেচিত হবে না – তাহলে তাঁরা সাধারণ কোটা থেকে চাকরির কোনো সুযোগ পাবেন না।এই নিয়ম এখন থেকে সর্বজনীনভাবে প্রযোজ্য হতে পারে ।
চাকরিপ্রার্থীদের জন্য নতুন বার্তা
এই রায়ের ফলে চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে বহু দিনের বিভ্রান্তি দূর হতে চলেছে । এখন থেকে সরকারি চাকরির আবেদন করার সময় কেবল মেধার দিকে তাকিয়ে থাকলেই চলবে না, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ভালোভাবে পড়ে শর্তাবলী বুঝে তারপর আবেদন করতে হবে ।
অনেক সময় সংরক্ষিত শ্রেণির প্রার্থীরা সাধারণ কোটার জন্য আবেদন করে থাকেন কিন্তু বিজ্ঞপ্তিতে শর্ত থাকে – Relaxation গ্রহণ করলে তাঁরা General কোটায় বিবেচিত হবে না। এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য না জানার ফলে তাঁরা চাকরি থেকে বঞ্চিতও হতে পারেন।
কেন এই রায় গুরুত্বপূর্ণ?
এই রায়ের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্ট একটি স্বচ্ছ ও সুসংগঠিত নিয়োগ ব্যবস্থার পথ তৈরি করতে চলেছে বলে জানা যায়। চাকরিতে সংরক্ষণ একটি সাংবিধানিক অধিকার হলেও, সেটি যেন তার সীমার মধ্যে ও সুনির্দিষ্ট নিয়ম মেনেই প্রয়োগ করা হয়ে থাকে, সেই বিষয়টিকেই গুরুত্ব দিয়েছে শীর্ষ আদালত।
সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের ফলে ভবিষ্যতের সমস্ত সরকারি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিকে কেন্দ্র করে সিদ্ধান্ত হবে, এবং Court-এ মামলা হলে সেক্ষেত্রেও বিজ্ঞপ্তির নিয়মই চূড়ান্ত বলে ধরা হবে বলে জানানো হয়।
সংরক্ষিত শ্রেণির মেধাবীদের কী করণীয়?
এই রায়ের পর সংরক্ষিত শ্রেণির মেধাবীদের জন্য দুটি দিক উঠে এসেছে:
- যদি আপনি কোনো ছাড় না নেন (বয়সে, ফিতে, পরীক্ষার রিল্যাক্সেশনে), তাহলে আপনি জেনারেল কোটায় বিবেচিত হতে পারেন, যদি ওই বিজ্ঞপ্তিতে বাধা না থাকে।
- যদি আপনি Relaxation নিয়ে আবেদন করে থাকেন, তাহলে আপনাকে শুধুমাত্র সংরক্ষিত কোটায় সুযোগ দেওয়া হবে।
তাই, আবেদন করার আগে সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্টভাবে দেখে নেওয়া উচিত – “Whether SC/ST/OBC candidates availing relaxation can be considered under unreserved category or not” – এই বিষয়ে কোনো নোট দেওয়া রয়েছে কি না তা দেখে নিতে হবে ।
মেধার অপচয় নয়, নিয়মের সুরক্ষা
এদিকে অনেকে ভাবছেন, এই নিয়মে সংরক্ষিত শ্রেণির মেধাবীদের অপমান করা হচ্ছে কি না। কিন্তু আসলে এটি মেধার অপচয় নয়, বরং সংরক্ষণের নিয়মিত প্রয়োগও বটে। যারা সংরক্ষণের সুবিধা নিচ্ছেন, তাঁরা সংরক্ষিত আসনের জন্য বিবেচিত তো হবেনই– এটিই যুক্তিপূর্ণ ও ন্যায়সঙ্গত হতে পারে ।
মেধা সম্পন্ন সংরক্ষিত প্রার্থীরা যদি ছাড় না নিয়ে আবেদন করে থাকেন তাহলে তাঁরা জেনারেল কোটায় নিশ্চয়ই বিবেচিত হতে পারেন। কিন্তু যারা সুবিধা নিয়েছেন, তাঁদের জন্য আলাদা শর্ত থাকা অস্বাভাবিক নয় এখানে ।
নিয়োগের নিয়ম পড়ুন, তারপর সিদ্ধান্ত নিন
এই রায়ের পরবর্তী প্রভাব হবে সুদূরপ্রসারী। সবার আগে চাকরিপ্রার্থীদের বুঝে নিতে হবে:
- আপনি কোন সংরক্ষণ শ্রেণির প্রার্থী?
- আপনি কোনো Relaxation নিচ্ছেন কিনা?
- নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে General কোটার জন্য আলাদা শর্ত আছে কি না তাও দেখতে হবে ?
পরিশেষে বলা যায়, এই বিষয়গুলি মাথায় রেখে সঠিক সিদ্ধান্ত নিলে, আপনি যেমন আপনার অধিকার রক্ষা করতে সচেষ্ট হবেন সঙ্গে চাকরি পাওয়ার সুযোগও নিশ্চিত হতে পারে।