যাঁরা ভাবছেন নেপালের মতো পরিস্থিতি ভারতেও আসতে পারে তাঁরা ঠিক ভাবছেন না। নেপালে যা ঘটেছে তার পুনরাবৃত্তি কোথাও করা উচিত নয় ও ভাবা উচিত নয়। পুরীর পীঠাধীশ্বর শংকরাচার্য স্বামী শ্রী নিশ্চলানন্দ সরস্বতী জি মহারাজ মঙ্গলবার আসানসোলের (Asansol) পাঁচগাছিয়ায় আনন্দম রেসিডেন্সিতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে সাংবাদিক মুখোমুখি হয়ে এমনটা বলেন। ধর্ম থেকে শুরু করে রাজনীতি এবং বিদেশনীতি সহ একাধিক বিষয়ে মতামত প্রকাশ করেন তিনি। সাম্প্রতিককালে প্রতিবেশী দেশ নেপালের সংকট সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে শংকরাচার্য বলেন, ‘নেপালে যাই পরিস্থিতি হোক না কেন, তা দুর্ভাগ্যজনক। শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমেই এর সমাধান করা উচিত। এভাবে বিদ্রোহ করে কোনও সমস্যার সমাধান করা যাবে না। এটি সমাধান নয়।’
দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (PM Narendra Modi) সম্পর্কে নিজের মতামত ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সারা বিশ্বে বিখ্যাত। কিন্তু তিনি যদি তথাকথিত ধর্মীয় নেতাদের মতো নিজেকে তুলে ধরার চেষ্টা বন্ধ করেন, তাহলে তিনি আরও প্রভাবশালী ভূমিকায় আসতে পারেন।’ অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রীর বয়স সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে শংকরাচার্য বলেন, ‘যদি তিনি আগে বলেছিলেন যে একটি নির্দিষ্ট বয়সের পরে রাজনীতিতে প্রবেশ করা উচিত নয়, তাহলে তাঁর নিজের উপরও এটি প্রয়োগ করা উচিত।’
ভিন রাজ্যে বাঙালি হেনস্তা প্রসঙ্গে শংকরাচার্য বলেন, ‘যদি পশ্চিমবঙ্গে অন্যান্য রাজ্যের মানুষ অপমানিত ও নিপীড়িত না হন, তাহলে এখানকার মানুষকেও অন্যান্য রাজ্যে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়া উচিত নয়।’ অযোধ্যায় রাম মন্দিরের প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে শংকরাচার্য বলেন, ‘৫০০ বছরের সমস্যার সমাধান হয়েছে, এটি অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। তবে এটা যে পদ্ধতিতে করা হয়েছে তা নিয়েও চিন্তা করা দরকার।’ তিনি বলেন, ‘এই কাজটি কেবল একজন অনুমোদিত ব্যক্তির দ্বারাই করা উচিত ছিল। প্রধানমন্ত্রী এই কাজটি করার জন্য অনুমোদিত কিনা তা বিবেচনা করতে হবে। এর সঙ্গে, তিনি মন্দিরের প্রতিষ্ঠার জন্য শুভ সময়টি মাথায় রাখার কথাও বলেন।’ শংকরাচার্য স্পষ্টভাবে বলেন, রাম মন্দির প্রতিষ্ঠার পিছনে তাঁর (প্রধানমন্ত্রী) একটা উদ্দেশ্য ছিলো, বিজেপি নির্বাচনে এর সুবিধা নিতে পারে। ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত নরসিংহ রাও সম্পর্কে শংকরাচার্য বলেন, ‘তিনি চেয়েছিলেন যে অযোধ্যায় একটি নির্দিষ্ট স্থানে রাম মন্দির তৈরি করা হোক। কিন্তু মসজিদগুলিও এর চারপাশে তৈরি করা হোক। আমি স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করায় আমাকে অপহরণ করে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছিলো।’ আরেক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত অটল বিহারী বাজপেয়ীর কথা বলতে গিয়ে শংকরাচার্য বলেন, ‘অটল বিহারী বাজপেয়ী যখন প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন, তখন তিনি এই পুরো বিষয়টিতে খুব বেশি আগ্রহ দেখাননি। শুধু তাই নয়, তিনি একজন সন্ত্রাসীকে পুরীর শংকরাচার্য হিসেবে নিয়োগ করেছিলেন। তাকে পদোন্নতিও দিয়েছিলেন। তিনি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সম্পর্কে বলেছিলেন যে তিনি সেই সন্ত্রাসীকে আশ্রয় দিচ্ছেন। তবে, যখন তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে সেই ব্যক্তির নাম কি? তার উত্তরে তিনি বলেন যে আমি সেই ব্যক্তির নাম নিতে চাই না।’ গোহত্যা সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, তখন তিনি তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাও সম্পর্কে বলেছিলেন যে তাঁর গোহত্যা নিষিদ্ধ করা উচিত। কিন্তু আজ তিনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ১১ বছর হয়ে গিয়েছে, তিনি এই বিষয়ে সিরিয়াস হন, তাহলে কেন তিনি এখনও পর্যন্ত গোহত্যা নিষিদ্ধ করেননি?’।
ধর্ম ও রাজনীতি আলাদা রাখার বিষয়ে কিছু রাজনীতিবিদদের মতামত সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে শংকরাচার্য বলেন, ‘ধর্মকে কখনোই রাজনীতি থেকে আলাদা করা যায় না। তার কারণ রাজনীতিকে রাজধর্ম বলা হয়। তাই যাঁরা বলেন যে ধর্মকে রাজনীতি থেকে আলাদা করা উচিত, তারা কি রাজনীতিকে ধর্মের সঙ্গে যুক্ত করতে চান? তিনি স্পষ্টভাবে বলেছিলেন যে রাজনীতি ও রাজধর্ম এগুলি এমন একটা বিষয় যে কখনই আলাদা করা যাবে না।’ গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে আসানসোলে আছেন পুরীর শংকরাচার্য। ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি থাকবেন। এই কদিন তিনি ভক্তদের দর্শন ও দীক্ষা দেবেন।