উমার কাছে বিচার চায় পাঁচ পরিবার !

By Bangla News Dunia Dinesh

Published on:

 আকাশে উৎসবের রং। আলো ছড়িয়ে আসছে শারদোৎসব। উজ্জ্বল সেই আলোর ছটা চরাচর বিস্তৃত হলেও পৌঁছোবে না বগুলা, পানিহাটি, পাটুলি, বেহালার কয়েকটি বাড়িতে। বিষাদের অন্ধকারেই ডুবে থাকবে বিতান অধিকারী, সমীর গুহ, অভয়া, ঝন্টু আলি ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে নিহত পড়ুয়ার পরিবার। দুর্গার কাছেও শুধু বিচারের অপেক্ষা।

কেটে গিয়েছে আরও একটি বছর। অভয়ার ছোট ছোট স্মৃতি এখনও টাটকা আরজি কর মেডিকেল কলেজে ধর্ষিতা ও নিহত চিকিৎসক পড়ুয়ার বাবা-মায়ের। বাড়ির সামনেই আগের মতোই দুর্গামণ্ডপ আছে। আগে যেখানে পুজো এলে আপ্যায়ন থেকে শুরু করে আলপনা, পুজোর জোগাড় সবই নিজের হাতে করতেন অভয়া। বাড়ির গ্যারাজে দেবীর আবাহন করতেন।

২০২৪ সালের ৮ অগাস্ট বদলে দিয়েছে সবকিছু। গত বছর কন্যাহারা বাবা-মায়ের কাছে উৎসব এসেছিল দ্রোহের মেজাজে। বাড়ির সামনে ধর্নামঞ্চ তৈরি করে আলো নিভিয়ে চারটি দিন নীরবে কাটিয়েছিলেন তাঁরা। ব্যতিক্রম হবে না এবছরও। অভয়ার মায়ের কথায় আগমনীর বদলে বিসর্জনের সুর ভাসে, ‘মেয়েই ছিল আমার দুর্গা। ও চলে গিয়েছে। আর কীসের উৎসব!’

বিষাদের সঙ্গে ক্ষোভ অভয়ার বাবার কথায়, ‘ক্ষমতা থাকলে পুজোর ক’টা দিন নবান্নের ১৪ তলার সামনে ধর্না দিতাম। যতদিন বেঁচে থাকব, ততদিন মেয়ের বিচারের জন্যই বাঁচব।’

বগুলা স্টেশনে নেমে একটু এগিয়ে গেলে পশ্চিমমুখো পাঁচিল ঘেরা একতলা বাড়িতেও আনন্দের লেশ নেই। অন্য বছর পুজো আসার আগে ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত পোশাকের তালিকা তৈরি করে রাখতেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে র‌্যাগিংয়ে নিহত পড়ুয়া। পুজোয় তিনি বাড়িতে গেলে শোরগোল পড়ে যেত। এখন রং চটে যাওয়া বাড়ির দেওয়ালের মতো সেই স্মৃতিগুলি আছে বটে, তবে ক্ষতবিক্ষত হয়ে।

২০২৩ সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার দু’দিনের মধ্যে মৃত্যু হয়েছিল ওই বাড়ির বাসিন্দা পড়ুয়ার। তাঁর বাবার গলায় প্রার্থনা, ‘মায়ের কাছে প্রার্থনা করি, ওই অসুরগুলোর যাতে বিনাশ হয়। পুজো এলে ছেলেটা কত খুশি হত। ভাইয়ের সঙ্গে পছন্দ করে জামাকাপড় কিনত। ওর মা এখন আর কথা বলে না। ওর ভাইও আর নতুন পোশাকের জন্য আবদার করে না।’

সন্তানের কাঁধে চেপে বাবা-মায়ের শেষ বিদায় স্বাভাবিক। কিন্তু সন্তানের শব কাঁধে নেওয়ার মতো হৃদয়বিদারক ঘটনার সাক্ষী পাটুলির বিতান অধিকারীর পরিবার। চলতি বছরের এপ্রিলে পহলগামে জঙ্গি হামলায় স্ত্রী-সন্তানের সামনে মৃত্যু হয়েছিল বিতানের। কান্না জড়ানো গলায় তাঁর মা বলেন, ‘আমার সন্তান যেখানেই থাকুক, ভালো থাকুক। ও যেন শান্তি পায়।’

বিতানের পরিবার অভিযোগের আঙুল তুলেছিল তাঁর স্ত্রী সোহিনী অধিকারীর দিকে। কেমন আছেন তিনি? বিতানের ভায়রাভাই কীর্তি ফার্মার বলেন, ‘সোহিনী এখনও কথা বলার মতো পরিস্থিতিতে নেই। ছোট সন্তানকে নিয়ে কোনওভাবে দিন কাটাচ্ছে। ওর কাছে উৎসব বলে আর কিছু নেই। বাড়ির কোনও অনুষ্ঠানেও আর যোগ দেয় না।’

পহলগামের হামলায় মৃত্যু হয়েছিল বেহালার সমীর গুহরও। তাঁর স্ত্রী শবরী গুহর জীবনটাই যেন অর্থহীন হয়ে উঠেছে। হতাশার সুরে শবরী বলেন, ‘এত বছরের বৈবাহিক জীবনে পুজোয় অনেক সুমধুর স্মৃতি। মেয়েকে নিয়ে কত আনন্দ করত। মেয়ে এখন কলেজে পড়ছে। পুজো আসছে। কিন্তু আমাদের পরিবারে সেই উচ্ছ্বাসটাই আর নেই।’

শারদীয়ার আগমনে জাত-ধর্ম-বর্ণের ভেদাভেদ আর থাকে না। পহলগামে নিহত জওয়ান ঝন্টু আলি শেখের পরিবারও পুজোর আনন্দে শামিল হত। তাঁর কাকা সানাউল্লা শেখ বলেন, ‘পুজোর সময় ঝন্টু বাড়ি ফিরলে ছেলেমেয়েদের জামাকাপড় কিনে দিত। পুজোয় নিয়ে বেরোত। এবছর আর কিছুই হবে না।’

Bangla News Dunia Dinesh

মন্তব্য করুন