ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পরিচয়পত্র হলো আধার কার্ড। ভারতের প্রত্যেকটি নাগরিকের আধার কার্ড থাকা বাধ্যতামূলক। এটি আজ শুধু একটি পরিচয়পত্র নয়, বরং প্রতিটি সরকারি ও বেসরকারি পরিষেবায় আধার কার্ড সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ নথি। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা থেকে শুরু করে মোবাইলের সিম কার্ড কেনা এবং স্কুল-কলেজে ভর্তি, সরকারি ভর্তুকি পাওয়া, সরকারি ভাতা পাওয়া—সব কিছুতেই আধার অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। অথচ এই আধার কার্ডে কোন সমস্যা থাকলে এতদিন ধরে বিভিন্ন পরিষেবা থেকে বঞ্চিত থাকতেন মানুষ। এবার সেই সমস্যার সমাধান করতে পারবেন আপনি ঘরে বসেই। আধার কার্ডে নাম ভুল লেখা হলে, ঠিকানা বদল হলে বা জন্ম তারিখে ভুল হলে তা সংশোধন করতে মানুষকে আধার সেবা কেন্দ্র বা পোস্ট অফিসে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হতো। এখন সেই অপেক্ষার দিন শেষ, এবার সেই ভোগান্তির অবসান ঘটাতে ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (UIDAI) নিয়ে আসছে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ—একটি নতুন মোবাইল অ্যাপ, যার মাধ্যমে ঘরে বসেই আধারের তথ্য সংশোধন করা
নতুন এই পদক্ষেপ এবার ভারতের কোটি কোটি মানুষকে ঘরে বসে পরিষেবা দেওয়ার জন্য আনা হয়েছে। UIDAI-এর পরিকল্পনা অনুযায়ী, একবার এই অ্যাপ চালু হয়ে গেলে সাধারণ মানুষ আর সেবা কেন্দ্রের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট করবেন না। বরং নিজের স্মার্টফোনেই কয়েকটি সহজ ধাপ মেনে আধারের তথ্য আপডেট করতে পারবেন। এই ঘোষণার পর থেকেই দেশের নানা প্রান্তে উচ্ছ্বাসের ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছে, কারণ এটি সত্যিই আধার ব্যবস্থাপনায় এক বড় বিপ্লব। এবার আধার কার্ড সংশোধন করতে আর কোথাও যেতে হবে না ঘরে বসে শুধুমাত্র কয়েক ক্লিকের মাধ্যমে আধার কার্ডের যে কোন ভুল সংশোধন করতে পারবেন।
কেন দরকার হলো নতুন আধার অ্যাপ?
এতদিন পর্যন্ত আধার কার্ডের যেকোনো তথ্য সংশোধন করা ছিল জটিলতম ব্যাপার। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, জন্মসনদ বা স্কুলের সনদপত্র অনুযায়ী নাম ও জন্ম তারিখ কিছুটা আলাদা হলেও আধারে তা সংশোধন করা ছিল ভীষণ কষ্টকর, আধার কার্ড সংশোধন করতে হলে আগে আপনার অন্যান্য ডকুমেন্টগুলো সংশোধন করা প্রয়োজন হয়ে পড়তো। কেউ যদি গ্রামে থাকেন, তবে তাঁকে ব্লকের আধার সেবা কেন্দ্রে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হতো। অনেক সময় আবার নথির ভুল বা সার্ভারের সমস্যায় দিন কয়েক বাদে আবার আসতে বলা হতো। ফলে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তির শেষ ছিল না। আধার কার্ডের সামান্য একটু ভুল সংশোধন করতে হলে মাসের পর মাস অপেক্ষা করে থাকতে হতো।
UIDAI বুঝতে পারে, আধারকে যদি সত্যিই সবার জন্য সহজ এবং কার্যকর করা যায়, তবে তথ্য সংশোধনের প্রক্রিয়াকেও আরও সরল করতে হবে। আধার কার্ড ছাড়া প্রত্যেকটি মানুষ কোন পরিষেবা পাচ্ছে না ভারতবর্ষে। সেই লক্ষ্যেই এবার তারা নতুন এই মোবাইল অ্যাপ বাজারে আনছে। এই অ্যাপ ব্যবহার করে নাম, ঠিকানা, জন্মতারিখ, মোবাইল নম্বরের মতো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মানুষ নিজেই আপডেট করতে পারবেন, কোনো মধ্যস্থতাকারী ছাড়াই।
নতুন অ্যাপ কিভাবে বদলে দেবে তথ্য সংশোধনের ধারা?
এখন পর্যন্ত তথ্য সংশোধনের জন্য যেভাবে মানুষকে আধার সেবা কেন্দ্র বা পোস্ট অফিসে যেতে হতো, তা অনেক সময় ও শ্রমসাপেক্ষ ছিল এবং ছিল অনেক জটিল প্রক্রিয়া। নতুন মোবাইল অ্যাপ চালু হলে এই ছবিই বদলে যাবে। UIDAI জানিয়েছে, অ্যাপে একটি নিরাপদ লগইন ব্যবস্থা থাকবে, যেখানে আধার নম্বর এবং OTP ব্যবহার করে প্রবেশ করতে হবে। এজন্য আপনার আধার কার্ড থেকে মোবাইল নাম্বারের সঙ্গে লিঙ্ক করে রাখতে হবে। একবার লগইন করলে ব্যবহারকারী সহজেই প্রয়োজনীয় তথ্য সংশোধনের জন্য আবেদন করতে পারবেন। নথি আপলোডের সুযোগও থাকবে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কারও ঠিকানা বদল হয়, তবে তিনি বৈদ্যুতিন বিল বা ভাড়া চুক্তিপত্র স্ক্যান করে সরাসরি অ্যাপে আপলোড করতে পারবেন। ।
এরপর UIDAI-এর সার্ভারে সেই নথি যাচাই হবে এবং কয়েক দিনের মধ্যেই সংশোধিত তথ্য ব্যবহারকারীর আধার প্রোফাইলে আপডেট হয়ে যাবে। অর্থাৎ, কয়েক ঘণ্টার কাজের জন্য আর সপ্তাহের পর সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে না।
পুরনো পদ্ধতি বনাম নতুন অ্যাপ: তুলনামূলক টেবিল
বিষয় | পুরনো পদ্ধতি | নতুন মোবাইল অ্যাপ |
---|---|---|
আবেদন করার মাধ্যম | আধার সেবা কেন্দ্র / পোস্ট অফিস | স্মার্টফোন অ্যাপ |
সময় ব্যয় | ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা | কয়েক মিনিটেই আবেদন |
নথি জমা | ফিজিক্যাল কপি জমা দিতে হতো | স্ক্যান করে অনলাইনে আপলোড |
খরচ | যাতায়াত + পরিষেবা চার্জ | শুধুমাত্র সরকারি নির্ধারিত ফি |
সুবিধা | সীমিত, কেবল অফিস সময়ে | ২৪x৭ অনলাইন সুবিধা |
ফলাফল পাওয়ার সময় | ৭-১৫ দিন | কয়েক দিনের মধ্যেই বা কয়েক ঘণ্টার মধ্যে |
নিরাপত্তা ও প্রযুক্তিগত দিক
অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে, এত গুরুত্বপূর্ণ একটি অ্যাপের নিরাপত্তা কতটা শক্তিশালী হবে। UIDAI জানিয়েছে, এই অ্যাপ তৈরির ক্ষেত্রে অত্যাধুনিক এনক্রিপশন সিস্টেম ব্যবহার করা হবে। তাই এটি অবশ্যই উন্নত সিকিউরিটি মাধ্যমে চালু করা হয়েছে। ব্যবহারকারীর তথ্য যাতে কোনোভাবেই ফাঁস না হয়, তার জন্য বহুস্তরীয় সিকিউরিটি ব্যবস্থা থাকবে। প্রতিবার লগইনের সময় আধার-লিঙ্কড মোবাইলে OTP যাবে। এছাড়াও ভবিষ্যতে বায়োমেট্রিক অথেনটিকেশনের সুবিধাও যুক্ত হতে পারে, যাতে অ্যাপটি আরও সুরক্ষিত হয়।
সাধারণ মানুষের জন্য কী কী বদল আসবে?
এই নতুন অ্যাপ চালু হলে মানুষের জীবনে এক বিশাল পরিবর্তন আসবে। এর ফলে সাধারণ মানুষের সময় অনেকটা সাশ্রয় হবে। এছাড়াও-
প্রথমত, গ্রাম থেকে শহরে এসে আধার সেবা কেন্দ্রের লাইনে দাঁড়ানোর ঝক্কি থাকবে না। ঘরে বসেই হবে সমস্ত কাজ।
দ্বিতীয়ত, অনেক প্রবীণ নাগরিক, যাঁরা একা একা দূরে যেতে পারেন না, তাঁরাও পরিবারের সদস্যদের সাহায্যে ঘরে বসেই তথ্য সংশোধন করতে পারবেন।
তৃতীয়ত, সময় ও অর্থ দুটোই সাশ্রয় হবে।
শুধু তাই নয়, এর ফলে প্রশাসনিক কাজও অনেক সহজ হয়ে যাবে। বর্তমান হচ্ছে ডিজিটাল যুগ তাই সরকার চাইছে সমস্ত কাজকর্ম যাতে ঘরে বসেই করা সম্ভব হয়।আগে যেখানে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ সেবা কেন্দ্রে ভিড় করতেন, এখন তাঁদের একটি বড় অংশ ঘরে বসেই কাজ সারতে পারবেন। এর ফলে কর্মচারীদের ওপর চাপ কমবে এবং পরিষেবার মানও বাড়বে। এখানে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না কারণ নিজেরাই নিজেদের ডকুমেন্টস ঠিক করবেন।