ইরানকে কোণঠাসা করতে আমেরিকার সাম্প্রতিক পদক্ষেপ নয়াদিল্লির জন্য এক নতুন মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তেহরানের উপর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ‘সর্বোচ্চ চাপ’(maximum pressure) নীতির অংশ হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের চাবাহার বন্দরের উপর থেকে ২০১৮ সালে দেওয়া কিছু ছাড় প্রত্যাহার করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সূত্রের খবর, এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে ২০২৫ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে। এর ফলে এই বন্দর ব্যবহারকারী দেশগুলোকে (যার মধ্যে ভারতও আছে) জরিমানার মুখে পড়তে হবে। এই পদক্ষেপ শুধু বাণিজ্যিক নয় বরং ভারতের ভূ-রাজনৈতিক কৌশলগত পরিকল্পনাতেও বড়সড় ধাক্কা দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
মার্কিন বিদেশ দপ্তর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এই পদক্ষেপ ইরানের “অবৈধ আর্থিক পরিকাঠামো” ভেঙে ফেলার লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে। এর আগে, গত জুন মাসে ইরানের তিনটি পারমাণবিক কেন্দ্রে আমেরিকার সেনাবাহিনী হানা দেয়। তাদের দাবি ছিল, ইরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে। এই ঘটনার পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চরমে। এই নতুন নিষেধাজ্ঞা সেই উত্তেজনারই প্রতিফলন বলে মনে করা হচ্ছে।
অপরদিকে ভারতের কাছে চাবাহার বন্দর কেবল একটি বাণিজ্যিক পথ নয়, এটি একটি কৌশলগত লাইফলাইনও বটে। পাকিস্তানের গোয়াদর বন্দরের ঠিক ১৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই বন্দরটি ভারতের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। চাবাহার ভারতকে পাকিস্তানের পাশ কাটিয়ে আফগানিস্তান এবং পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে স্থলপথে বাণিজ্যিক সংযোগ স্থাপন করতে সাহায্য করে। এটি ভারত থেকে রাশিয়া ও ইউরোপ পর্যন্ত সংযোগকারী আন্তর্জাতিক উত্তর-দক্ষিণ পরিবহন করিডোরের (International North-South Transport Corridor) সঙ্গেও যুক্ত। বন্দরটি ইতিমধ্যে আফগানিস্তানে গম ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী পাঠানোর জন্যও ব্যবহৃত হয়েছে। অপরদিকে পাকিস্তানের গোয়াদর বন্দর পরিচালনা করে চিন। ফলে চাবাহার বন্দরের ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখে ভারত আরব সাগরে চিনের ক্রমবর্ধমান আধিপত্য মোকাবিলা করতে পারে।
২০০৩ সাল থেকেই ভারত এই বন্দর উন্নয়নে আগ্রহী ছিল। সম্প্রতি, গত ১৩ মে, ২০২৪-এ ইরান বন্দরের সঙ্গে ১০ বছরের জন্য বন্দর পরিচালনার চুক্তিও স্বাক্ষর করেছে ভারত। এই চুক্তির অধীনে ভারত প্রায় ১২০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এখন এই নতুন নিষেধাজ্ঞার ফলে সেই বিশাল বিনিয়োগ ঝুঁকির মুখে।
আমেরিকার এই সিদ্ধান্তে ভারত এক কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছে। এক দিকে, দীর্ঘদিনের বন্ধু ইরানের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক, অন্যদিকে আমেরিকার সঙ্গে তাদের কৌশলগত অংশীদারিত্ব। একই সময়ে, ইজরায়েল এবং উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গেও সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করছে নয়াদিল্লি। এখন ভারতকে যেমন তার বিনিয়োগ রক্ষা করতে হবে, একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক কূটনীতিতেও ভারসাম্যও বজায় রাখতে হবে। এই পরিস্থিতিতে ভারত কী পদক্ষেপ নেয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।