বহরমপুর: ঋণের টাকা পরিশোধ করা তো দূরের কথা, ওই টাকা চাওয়ায় প্রতিবেশী তরুণকে খুন করেছিল এক দম্পতি। শুধু খুন করাই নয়, দেহ লোপাটের জন্য নিজেদের বাড়িতে গর্ত করে দেহ পুঁতে দিয়েছিল ওই দম্পতি। নৃশংস এই খুনের ঘটনার ছয় বছর পর দোষী সাব্যস্ত করা হল সাবিনা বিবি ও তার স্বামী কামালউদ্দিন মণ্ডলকে। দুজনের বিরুদ্ধেই খুনের জন্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, দেহ লোপাটের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ৪ বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন মুর্শিদাবাদের লালবাগ মহকুমার অতিরিক্ত জেলা বিচারক (লালবাগ সেকেন্ড কোর্ট)। খুনের ক্ষেত্রে ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাস কারাবাস, প্রমাণ লোপাটের জন্য এক হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ২ মাসের কারাবাসের নির্দেশও দিয়েছেন বিচারক। শুক্রবার আদালতের এই রায় শোনার পর খুশি ওই তরুণের পরিবার। আইনজীবী মহম্মদ নকিবউদ্দিন বলেন, ‘টানা ৬ বছর ধরে মামলা চলার পর বিচারপ্রার্থীরা আদালতের রায়ে ন্যায়বিচার পেলেন। এতে সাধারণ মানুষের বিচার ব্যবস্থার ওপর আস্থা অটুট থাকবে।’
২০১৯-এর মে মাসে খুন হয়েছিলেন ভগবানগোলার বাসিন্দা পেশায় কৃষক লালচাঁদ শেখ। পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিবেশী সাবিনা বিবিকে কিছু টাকা ঋণ দিয়েছিলেন লালচাঁদ। ওই টাকা সাবিনা বিবি পরিশোধ করার পরিবর্তে লালচাঁদকে নানাভাবে হয়রান করত। হঠাৎই একদিন লালচাঁদের বাড়িতে এসে তাঁকে তাদের বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে আসার কথা বলে সাবিনা। দিন দুয়েক পরে ওই তরুণ জমির কাজ সেরে সাবিনার বাড়িতে বকেয়া টাকা আনার জন্য হাজির হন। এরপরই আচমকা নিখোঁজ হয়ে যান তিনি। পরিবারের লোকজন দীর্ঘ খোঁজাখুঁজির পর তাঁর কোনও হদিস না পেয়ে সাবিনার বাড়িতে হাজির হন। সাবিনা উলটে ওই তরুণের বাড়ির লোকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে তাঁদের বাড়ি থেকে বের করে দেয়। এরপরই লালচাঁদের পরিবারের লোকজন পুলিশের দ্বারস্থ হন। লালচাঁদের স্ত্রী চম্পা বিবি সাবিনার নামে অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ তদন্ত নেমে সাবিনাদের ঘরে মাটি খুঁড়ে লালচাঁদের দেহ উদ্ধার করতেই চোখ কপালে ওঠে সকলের। তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, লালচাঁদকে মাথায় ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করে খুন করা হয়। এরপরই লালচাঁদকে খুনের অভিযোগে সাবিনা, তার স্বামী কামালউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। যদিও পরবর্তীতে দুজন জামিন পায়। টানা ছয় বছর ধরে শুনানি ও ৩৪ জন সাক্ষীর বক্তব্য ও কিছু তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে বিচারক দুজনকে দোষী সাব্যস্ত করে এই সাজা ঘোষণা করেন। এদিন মৃতের স্ত্রী চম্পা বলেন, ‘আদালত ন্যায়বিচার দেওয়ায় দুজনের শাস্তি হল।’