পরাগ মজুমদার, ডোমকল: পুলিশের স্টিকার লাগানো গাড়ি নিয়ে এক ব্যবসায়ীকে অপহরণ করার অভিযোগে গ্রেপ্তার হলেন এক সিভিক ভলান্টিয়ার। বুধবার রাতে ডোমকলের (Domkal) কর্মকারপাড়ার এই ঘটনায় নাম জড়িয়েছে প্রয়াত বিধায়কের আত্মীয় ওই সিভিকের।
অভিযোগ, বুধবার রাতে ডোমকলের কর্মকারপাড়ায় একটি মুদির দোকানের সামনে পুলিশের স্টিকার লাগানো কয়েকটি গাড়ি পরপর এসে দাঁড়ায়। সামনের গাড়ি থেকে চালক বাদে চারজন নেমে আসেন। এরপর লালচাঁদ মণ্ডল নামে এক ব্যক্তির নাম ধরে ডাকাডাকি শুরু হয়। পুলিশের ডাক শুনে জমি কেনাবেচার সঙ্গে যুক্ত ওই ব্যক্তি বেরিয়ে আসেন। তারপরেই তাঁকে কলার ধরে টেনে পুলিশের স্টিকার সাঁটানো একটি গাড়িতে তোলা হয়। স্বামীকে এভাবে আচমকা তুলে নিয়ে যেতে দেখে লালচাঁদের ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী শেফালি বিবি সহ পরিবারের সদস্যরা চিৎকার শুরু করে দেন।
বারবার জানতে চান, কেন তাঁকে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিন্তু কোনওরকম উত্তর না দিয়ে পরিবারকে বলা হয়, এখানে কোনও কথা হবে না, যা হবে থানাতে। তারপরে এলাকা ছেড়ে বেরিয়ে যায় গাড়িগুলি।
উদ্বিগ্ন পরিবারের লোক রাতে ডোমকল থানায় গিয়ে খোঁজখবর নিতেই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। জানা যায়, লালচাঁদ নামে কাউকে গ্রেপ্তারই করেনি পুলিশ। খোঁজখবরে বেরিয়ে আসে, এই ঘটনার নেপথ্যে রয়েছেন থানারই সিভিক ভলান্টিয়ার হুমায়ুন কবির। হুমায়ুন আবার সদ্য প্রয়াত ডোমকলের তৃণমূল বিধায়ক জাফিকুল ইসলামের আত্মীয়। হুমায়ুনই গাড়িভাড়া করে এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন।
পুলিশ অপহৃত ওই ব্যক্তির খোঁজে মাঝরাতেই অভিযান শুরু করে। প্রথমে ভাশসালা ও তার সংলগ্ন এলাকা থেকে পুলিশ গাড়িগুলি উদ্ধার করে। সেখান থেকে সূত্র পেয়ে বৃহস্পতিবার ভোরে পুলিশের একটি বিশেষ টিম নদিয়ার উদ্দেশে রওনা দেয়। লালচাঁদকে নদিয়ার চাপড়া থেকে উদ্ধার করা হয়। পাশাপাশি এই ঘটনায় অভিযুক্ত ওই সিভিক ভলান্টিয়ার সহ আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ধৃত সিভিকের বাড়ি গোবিন্দপুর এলাকায়।
পুলিশ ইতিমধ্যে অপহরণের জন্য ব্যবহৃত গাড়িটি উদ্ধার করতেই বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। দেখা যায়, অপহরণের জন্য ব্যবহৃত একটি গাড়ি ডোমকল টাউন তৃণমূল যুব সভাপতি সাজিবুল খান বাপনের নামে নথিভুক্ত। ঘটনায় মোট তিনটি গাড়ি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ধৃতদের মধ্যে হুমায়ুন ছাড়াও রয়েছেন মোমিনুল ইসলাম, সুমন মণ্ডল, আজমির মণ্ডল, এমানুয়েল কবির, আনসারুল আনসারি, নয়ন শেখ, মহম্মদ আলি মুবারক ওরফে রিঙ্কু।
লালচাঁদের সঙ্গে জমি সংক্রান্ত পুরোনো বিবাদের জেরেই ওই সিভিক ভলান্টিয়ার এই ছক কষেন। লালচাঁদের স্ত্রী শেফালি বলেন, ‘পুলিশের স্টিকার লাগিয়ে বাড়ি থেকে মারধর করে টানতে টানতে অপহরণ করে নিয়ে যায় স্বামীকে।’ অন্যদিকে, ধৃত ভলান্টিয়ারের বাবা রেজাউল শেখ বলেন, ‘লালনের পরিবারের সঙ্গে আমাদের জমি সংক্রান্ত কিছু সমস্যা রয়েছে। কিন্তু অপহরণের ব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই।’ এই ঘটনায় তৃণমূলের জেলা সভাপতি অপূর্ব সরকারের বক্তব্য, ‘আইন আইনের পথে চলবে। ঘটনার তদন্ত করছে পুলিশ।’ ধৃতদের এদিন বহরমপুর জেলা আদালতে পেশ করা হলে বিচারক তিনজনকে ২১ অক্টোবর পর্যন্ত ছয়দিনের পুলিশ হেপাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।