পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নতুন সিদ্ধান্তে রাজ্যের হাজার হাজার সাধারণ শ্রেণির ছাত্রছাত্রী ও চাকরিপ্রার্থীদের জন্য এক বিশাল স্বস্তির খবর এসেছে। দীর্ঘদিন ধরে যারা সরকারি চাকরি থেকে বঞ্চিত ছিলেন এবার তারাই পাবেন সরকারি চাকরিতে বিশেষ সংরক্ষণ। অন্যান্য সংরক্ষণের তুলনায় এই সংরক্ষণের কাট অফ সমগ্র ক্ষেত্রে অনেকটাই কম। তাই আপনি যদি জেনারেল প্রার্থী হয়ে থাকেন এবং আপনার অর্থনৈতিক অবস্থা যদি দুর্বল হয়ে থাকে তাহলে আপনিও বানাতে পারেন খুব সহজেই EWS সার্টিফিকেট। এখন থেকে আর লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হবে না বা ঘুরে বেড়াতে হবে না অফিসে অফিসে — কারণ সরকার শুরু করেছে EWS (Economically Weaker Section) সার্টিফিকেট প্রদান প্রক্রিয়াকে পুরোপুরি স্বচ্ছ, দ্রুত ও সহজ করার উদ্যোগ।
এই সার্টিফিকেটের মাধ্যমে সাধারণ শ্রেণির সেই সমস্ত মানুষ, যারা অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল, তারা এখন সরকারি চাকরি, কলেজে ভর্তি, এবং অন্যান্য কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারি সুযোগসুবিধার ক্ষেত্রে ১০% সংরক্ষণ পাবেন।
কেন এই সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ?
পশ্চিমবঙ্গের সরকারি চাকরির ক্ষেত্র বা শিক্ষাক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে SC, ST ও OBC শ্রেণির প্রার্থীরা সংরক্ষণের সুবিধা পেয়ে আসছেন। কিন্তু সাধারণ (General) ক্যাটাগরির প্রার্থীরা, যারা অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে, তারা এতদিন পর্যন্ত কোন বিশেষ সুবিধা পেতেন না। তাই সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে তারা সর্বপেক্ষা পিছিয়ে থাকতেন এবং তাদের সমগ্র জায়গায় কাট অফ সবার থেকে বেশি আসতো। এবার কেন্দ্র সরকার এদের জন্য এনেছে EWS সার্টিফিকেট এবং যারা এই সার্টিফিকেট বানাতে পারবেন তারা সরকারি চাকরিতে সবার থেকে কম কাটবে ১০% সংরক্ষণ নিয়ে চাকরি পাবেন।
এই অবস্থার পরিবর্তন আনতে কেন্দ্রীয় সরকার ২০১৯ সালে EWS সংরক্ষণ ব্যবস্থা চালু করে। আর এখন রাজ্য সরকারও সেই উদ্যোগের বাস্তবায়ন শুরু করেছে, যাতে রাজ্যের অসংখ্য সাধারণ শ্রেণির দরিদ্র মানুষও সমান সুযোগ পান।
কারা আবেদন করতে পারবেন?
EWS সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করতে পারবেন শুধুমাত্র General (Unreserved) ক্যাটাগরির নাগরিকরা, যারা SC, ST বা OBC সংরক্ষণের আওতায় পড়েন না। তবে আবেদন করার আগে কিছু নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করতে হবে।
যোগ্যতার মানদণ্ড (Eligibility Criteria) | বিবরণ |
---|---|
ক্যাটাগরি | কেবলমাত্র General (Unreserved) প্রার্থীরা |
পরিবারের বার্ষিক আয় | ₹8 লক্ষ টাকার নিচে হতে হবে |
কৃষিজমি মালিকানা | সর্বাধিক 5 একর পর্যন্ত |
বাসস্থান/ফ্ল্যাটের আয়তন | পৌরসভা এলাকায় 1000 sq. ft.-এর কম |
অন্যান্য সম্পত্তি | নির্ধারিত সীমার বেশি হলে আবেদন অগ্রাহ্য হবে |
এছাড়াও আবেদনকারীর পরিবারের মোট আয় হিসাব করা হবে সমস্ত উৎস থেকে — যেমন বেতন, ব্যবসা, কৃষি, এবং অন্যান্য আয় মিলিয়ে।
আবেদন পদ্ধতি
রাজ্য সরকার জানিয়েছে, এখন থেকে আবেদনকারীরা অনলাইনের মাধ্যমে EWS সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করতে পারবেন —
যারা অনলাইনে আবেদন করতে চান, তারা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের Backward Classes Welfare Department (wb.gov.in) পোর্টালে গিয়ে আবেদন করতে পারবেন। এক্ষেত্রে অনলাইনে আবেদন জানানোর আগে অবশ্যই আপনার প্রয়োজনীয় সমস্ত ডকুমেন্টস গুলো রেডি করে রাখতে হবে। অনলাইন ফর্মে প্রয়োজনীয় তথ্য যেমন— নাম, ঠিকানা, আয়, পরিবারের সদস্য সংখ্যা ইত্যাদি দিতে হবে এবং নথিগুলি স্ক্যান করে আপলোড করতে হবে।
এরপর আবেদন জমা হলে একটি Acknowledgment Number পাওয়া যাবে, যা দিয়ে আবেদনকারীরা পরে তাদের স্ট্যাটাস চেক করতে পারবেন।
প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টের তালিকা
EWS সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করার সময় নিচের নথিগুলি বাধ্যতামূলকভাবে জমা দিতে হবে —
ডকুমেন্টের নাম | বিবরণ |
---|---|
আধার কার্ড / ভোটার কার্ড | পরিচয় প্রমাণের জন্য |
রেশন কার্ড / প্যান কার্ড | পারিবারিক পরিচয়ের জন্য |
পরিবারের আয়ের সার্টিফিকেট | বার্ষিক আয় যাচাইয়ের জন্য |
জমির কাগজ / ভাড়ার চুক্তিপত্র | সম্পত্তির প্রমাণ |
পরিবারের সদস্যদের নামসহ ডকুমেন্ট | নির্ভরশীল সদস্য যাচাইয়ের জন্য |
আবেদনকারীর ছবি | ফর্মের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে |
সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী, প্রতিটি নথি সঠিকভাবে যাচাই করে জমা দেওয়া হলে আবেদনটি দ্রুত নিষ্পত্তি করা হবে।
আবেদন নিষ্পত্তির সময়সীমা
রাজ্য সরকারের নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী, আবেদন জমা দেওয়ার ১৫–৩০ দিনের মধ্যে নথি যাচাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে এবং যোগ্য প্রার্থীদের হাতে EWS সার্টিফিকেট পৌঁছে যাবে।
এর ফলে পূর্বের মতো মাসের পর মাস অপেক্ষা করার ঝামেলা থাকবে না।
কেন এই সার্টিফিকেট এত গুরুত্বপূর্ণ?
EWS সার্টিফিকেট থাকলে আবেদনকারী নিচের ক্ষেত্রগুলিতে সরাসরি ১০% সংরক্ষণ সুবিধা পাবেন —
- রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরি
- ইঞ্জিনিয়ারিং, মেডিকেল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি
- কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা যেমন UPSC, SSC, Railway, Banking ইত্যাদিতে আবেদন
- রাজ্য সরকারি স্কিম ও বৃত্তি কর্মসূচি
এই সার্টিফিকেটের মাধ্যমে সাধারণ শ্রেণির দরিদ্র মানুষও সরকারি সিস্টেমে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে আসতে পারবেন।
নতুন নির্দেশিকার মূল উদ্দেশ্য
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রকাশিত নির্দেশিকায় উল্লেখ করা হয়েছে—
এই প্রক্রিয়াটি যাতে স্বচ্ছ ও দ্রুত হয়, সেদিকে নজর রাখা হবে।
নতুন ব্যবস্থায়—
- ভুয়ো আবেদনকারীদের সংখ্যা কমবে,
- যাচাইকরণ ডিজিটালভাবে হবে,
- যোগ্য প্রার্থীরা দ্রুত সার্টিফিকেট পাবেন,
- প্রতারণা বা দালালচক্রের প্রবেশ বন্ধ হবে।
পশ্চিমবঙ্গের প্রেক্ষাপটে গুরুত্ব
রাজ্যে বর্তমানে হাজার হাজার চাকরিপ্রার্থী রয়েছেন যারা কোনও সংরক্ষণের আওতায় পড়েন না। বিশেষত WBCS, SSC, WBPSC বা বিভিন্ন শিক্ষা ও স্বাস্থ্য দপ্তরের চাকরির পরীক্ষায় EWS সংরক্ষণ থাকলে তারা অনেকটাই সুবিধা পাবেন।
২০২৫ সালের তথ্য অনুযায়ী, রাজ্যে EWS সার্টিফিকেটধারীর সংখ্যা এখনও তুলনামূলকভাবে খুবই কম। তাই সরকারের লক্ষ্য আগামী এক বছরের মধ্যে প্রত্যেক জেলার উপযুক্ত প্রার্থীকে এই সার্টিফিকেটের আওতায় আনা।
ভবিষ্যতে কী কী সুবিধা মিলতে পারে?
সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ভবিষ্যতে EWS সার্টিফিকেটধারীরা শুধু চাকরি ও ভর্তি নয়, বরং বৃত্তি, আবাসন প্রকল্প ও আর্থিক সহায়তার স্কিমেও সংরক্ষণ পাবেন।
EWS সার্টিফিকেট কেবল একটি নথি নয়, এটি রাজ্যের বহু সাধারণ পরিবারের নতুন আশার প্রতীক।
যে তরুণরা এতদিন অর্থনৈতিক দুর্বলতার কারণে পিছিয়ে পড়ছিলেন, তাদের সামনে এখন খুলে যাচ্ছে নতুন দিগন্ত।
রাজ্য সরকারের এই পদক্ষেপ শুধু চাকরি নয়, বরং সামাজিক ন্যায়বিচারের দিকেও এক বড় পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
তাই যদি আপনি General ক্যাটাগরির হন এবং অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল পরিবারের সদস্য হন, আজই আবেদন করুন EWS সার্টিফিকেটের জন্য।
কারণ এখন থেকেই শুরু হোক আপনার সুযোগের নতুন অধ্যায়।