সিউড়িঃ অনুব্রতর হাতে গড়া জেলা কমিটিতেই সিলমোহর দিল রাজ্য কমিটি। ফের বীরভূম ব্লক ও শহর কমিটির তালিকাতে জ্বলজ্বল করছে কেষ্টর অনুগামীদের নাম। রবিবার জেলা কমিটির তালিকা প্রকাশ হতেই খুশি অনুব্রত মণ্ডল। তবে বিধানসভা নির্বাচন হোক, কিংবা লোকসভা নির্বাচনে বীরভূমে জেলায় শহরাঞ্চলে লিড না পাওয়ায় কমিটিতে ব্যাপক রদবদল করা হয়েছে।
যদিও, তৃণমূলের বীরভূম জেলা কোর কমিটির আহ্বায়ক অনুব্রত মণ্ডল বলেন, “আজ কলকাতা থেকে দলের পক্ষ থেকে যে তালিকা পাঠিয়েছে, খুব সুন্দর তালিকা করেছে। এটা দলের পক্ষে ভালো হবে৷ যা ছিল তাই রেখেছে। সবাই তৃণমূলের হয়েই কাজ করবে৷ সকলকে ধন্যবাদ জানাই।”
তিনি আরও বলেন, “কালী পুজো, ছট পুজো, জগদ্ধাত্রী পুজো যাক তারপর সবাইকে নিয়ে বৈঠক করব। নতুন মুখ নেই, যা ছিল তাই আছে। যুবতে পরিবর্তন হয়েছে কিছু, বয়স হলে তো হবেই৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আছেন, তাঁরা যা করবেন তাই হবে।”
প্রসঙ্গত, লোকসভা নির্বাচনে আগেই সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন ফল খারাপ হলে পদ খোয়াতে হবে। যদিও, পরবর্তীতে তা খুব একটা কার্যকরী হয়নি৷
অন্যদিকে, ২০২১ সালে অনুব্রত মণ্ডলের নেতৃত্বে বিধানসভা নির্বাচনে বীরভূম জেলার ১১ টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ১০ টি জয়ী হয়েছে তৃণমূল। তবে বোলপুর, সিউড়ি, রামপুরহাট, দুবরাজপুর শহরে লিড পেয়েছিল বিজেপি৷ একই ভাবে অনুব্রতর অনুপস্থিতিতে কোর কমিটির নেতৃত্বে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বীরভূমের দুটি লোকসভাতেই জয়ী তৃণমূল-কংগ্রেসের প্রার্থীরা৷ কিন্তু, এক্ষেত্রেও জেলার ৪ শহরে লিড পেয়েছে রাজ্যের বিরোধী দল বিজেপি৷
এদিন সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে বীরভূম জেলার ব্লক ও শহর কমিটির পদাধিকারীদের তালিকা প্রকাশিত হয়৷ উল্লেখযোগ্য ভাবে তাতে দেখা যাচ্ছে ব্লক স্তরের তুলনায় শহরাঞ্চলের বেশকিছু পদে রদ বদল করা হয়েছে, অনেকক্ষেত্রে নতুন মুখ নিয়ে আসা হয়েছে৷ যেমন, রামপুরহাট শহর সভাপতির পদ থেকে সৈয়দ সিরাজ জিম্মিকে সরিয়ে সভাপতি করা হল সাংসদ শতাব্দী রায় ঘনিষ্ঠ অর্ণব গঙ্গোপাধ্যায়কে৷
সিউড়ি শহর সহ-সভাপতি পদে পুরনো তৃণমূল নেতা রমারঞ্জন চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে আসা হল। পাশাপাশি বোলপুর শহর সভাপতি পদে ছিলেন কাউন্সিলার সুকান্ত হাজরা। তাঁকে সরিয়ে সভাপতি করা হয়েছে সুব্রত হাজরা ওরফে ডালিমকে। বোলপুর শহর যুব সভাপতি পদে নতুন মুখ সৌরভ চক্রবর্তী।
দুবরাজপুরের দলের দুই সদস্যের ব্লকের আহ্বায়কের জায়গায় ৫ সদস্যের আহ্বায়ক করা হয়েছে। দুবরাজপুর শহরে নতুন করে শেখ আনোয়রকে যুব সহ সভাপতি করে আনা হয়েছে। পাশাপাশি মহিলা সভানেত্রী করা হয়েছে নতুন মুখ রীনি দত্ত’কে।
তবে সিউড়ি ২ নম্বর ব্লক সভাপতি নিয়ে নজর ছিল সবার। ওই ব্লকে তৃণমূল ভারসাম্যের রাজনীতি করেছে। কারণ জেলার সিংহভাগ ব্লকে অনুব্রত মণ্ডলের অনুগামীদের বসানো হয়েছে। নতুন পদে আসা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ও প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে কেষ্টকে। তবে সিউড়ি ২ নম্বর ব্লকে এই মুহূর্তে পাল্লা ভারী কাজল শেখের। এরই মধ্যে ইস্তফা দেওয়ার পরেও ব্লক সভাপতির পদে রাখা হল নুরুল ইসলামকে। ব্লকের কোনও দায়িত্বেই রাখা হল না অনুব্রত ঘনিষ্ঠ অশ্বিনী মণ্ডলকে। তা নিয়ে চাপানউতোর তৈরি হতেই তাঁর বিরুদ্ধে বোলপুর থেকে কলকাঠি নাড়া হয়েছিল বলে খোঁচা নুরুলের। নুরুল বলছেন, “শেষ সাত থেকে আট মাস ধরে একটা সমস্যা তৈরি করা হয়েছে। এটা বোলপুর থেকে যে করানো হয়েছে এ কথা আমি অনেকবার বলেছি। লোভ ও ভয় দুটোই দেখানো হয়েছে।” দলের এই সিদ্ধান্তকে রাজনৈতিক মহলের মতে ভারসাম্যের রাজনীতি বলে অবহিত করা হয়েছে।