Job Security: ৮ বছর চাকরির পর ছাঁটাই নয়, সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়! নতুন আশা পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষকদের

By Bangla News Dunia Desk - Pallab

Published on:

Job Security: ৮ বছর নিরবচ্ছিন্ন চাকরির পর কোনও কর্মীকে ছাঁটাই করা “অযৌক্তিক” (unjustified)। সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশের একটি মামলায় এমনই এক যুগান্তকারী রায় দিল ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। গত ১৭ই অক্টোবর, ২০২৫-এ, মহামান্য প্রধান বিচারপতি বি.আর. গাভাই এবং বিচারপতি কে. বিনোদ চন্দ্রন-এর বেঞ্চ এই ঐতিহাসিক নির্দেশ দেন। উত্তরপ্রদেশের জেলা বিচার বিভাগের চারজন চতুর্থ শ্রেণীর কর্মীর মামলায় এই রায় দেওয়া হয়, যা সারা দেশের কর্মচারী মহলে, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে, যেখানে নিয়োগ সংক্রান্ত জটিলতা চলছে, সেখানে নতুন করে আশার সঞ্চার করেছে।

মামলার পটভূমি কী ছিল?

এই মামলার শুরু ২০০০ সালে। ওই বছর ১৮ই অক্টোবর উত্তরপ্রদেশের আম্বেদকর নগরের জেলা জজশিপে ১২টি চতুর্থ শ্রেণীর পদের জন্য বিজ্ঞাপন বের হয়। সেই বিজ্ঞাপনে একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত উল্লেখ করা ছিল: “শূন্যপদের সংখ্যা বাড়তে বা কমতে পারে”।

২০০১ সালের ফেব্রুয়ারি ও জুলাই মাসে আবেদনকারীদের (সঞ্জয় কুমার মিশ্র ও অন্যান্য) নিয়োগ করা হয়। তাঁরা ৮ বছর ধরে কাজ করেন। কিন্তু ৮ বছর পর তাঁদের এই যুক্তিতে ছাঁটাই করা হয় যে, বিজ্ঞাপিত ১২টি পদের বাইরে “অতিরিক্ত” (excess) পদে তাঁদের নিয়োগ করা হয়েছিল।

হাইকোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্ট

এই ছাঁটাইয়ের বিরুদ্ধে কর্মীরা প্রথমে এলাহাবাদ হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। কিন্তু হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ এবং পরে ডিভিশন বেঞ্চ -উভয়েই ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্তকে বৈধ বলে রায় দেয়। এরপরই কর্মীরা সুপ্রিম কোর্টের কাছে আবেদন করেন। দীর্ঘ ১৭ বছর তাঁরা চাকরির বাইরে ছিলেন।

সুপ্রিম কোর্টের যুগান্তকারী পর্যবেক্ষণ

সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্টের রায়কে সম্পূর্ণ খারিজ করে দিয়ে কর্মীদের পক্ষে দাঁড়ায়। শীর্ষ আদালতের বেঞ্চ কয়েকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে, যা কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে নীতিগতভাবে খুব জরুরি:

  • ওয়েটিং লিস্টের বৈধতা: আদালত জানায়, বিজ্ঞাপনে “পদ বাড়তে পারে” লেখার অর্থই হলো, নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ একটি ওয়েটিং লিস্ট বা অপেক্ষমান তালিকা রাখতে চেয়েছিল, যা নিয়ম অনুযায়ী সম্পূর্ণ বৈধ।
  • শূন্যপদ সত্যিই ছিল: আদালত তথ্য খতিয়ে দেখে যে, ২০০০ সালের পর পরবর্তী বিজ্ঞাপন বের হয় ২০০৮ সালে (২৯টি পদের জন্য)। এর থেকেই প্রমাণ হয় যে এই মধ্যবর্তী (২০০০-২০০৮) সময়ে ২৯টি নতুন শূন্যপদ তৈরি হয়েছিল।
  • নিয়োগ “অতিরিক্ত” নয়: আবেদনকারীদের সেই নতুন তৈরি হওয়া শূন্যপদেই নিয়োগ করা হয়েছিল। তাই এই নিয়োগকে কোনওভাবেই “অতিরিক্ত” বা “বেআইনি” বলা যায় না।
  • ৮ বছরের পরিষেবা: সবশেষে, আদালত স্পষ্টভাবে জানায় যে, ৮ বছর ধরে নিরবচ্ছিন্ন পরিষেবা দেওয়ার পর কর্মীদের ছাঁটাই করার সিদ্ধান্ত “সম্পূর্ণ অযৌক্তিক” এবং তা সমর্থনযোগ্য নয়।

আদালত কী নির্দেশ দিল?

সুপ্রিম কোর্ট আবেদনকারীদের অবিলম্বে চাকরিতে পুনর্বহালের নির্দেশ দিয়েছে। আদালত জানিয়েছে যে, আবেদনকারীদের মধ্যে দুজন ইতিমধ্যেই ৬০ বছর (অবসরের বয়স) পার করে ফেলেছেন।

  • যাঁরা এখনও অবসর নেননি, তাঁদের অবিলম্বে অম্বেদকর নগরের জেলা জজশিপে চতুর্থ শ্রেণীর বিদ্যমান শূন্যপদে পুনর্বহাল করতে হবে।
  • যদি বর্তমানে কোনও শূন্যপদ না থাকে, তবে তাঁদের জন্য “সুপারনিউমারারি পোস্ট” (Supernumerary Post) বা অতিরিক্ত পদ তৈরি করতে হবে। এই পদ তাঁদের অবসরের পর বা ভবিষ্যতের শূন্যপদের সঙ্গে সামঞ্জস্য (adjust) করা হবে।
  • কর্মীরা যে ১৭ বছর চাকরির বাইরে ছিলেন, সেই সময়ের জন্য কোনও বকেয়া বেতন (back wages) বা সিনিয়রিটি (seniority) পাবেন না।
  • তবে, তাঁদের পূর্বের ৮ বছরের চাকরি এবং বর্তমান পরিষেবা “ন্যূনতম পেনশন” (pension at the minimum) পাওয়ার জন্য অবশ্যই গণ্য করা হবে।

পশ্চিমবঙ্গের প্রেক্ষাপটে এই রায়ের গুরুত্ব

যদিও এই মামলাটি উত্তরপ্রদেশের, কিন্তু এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী। পশ্চিমবঙ্গেও শিক্ষক বা অন্যান্য কর্মচারী নিয়োগে বিভিন্ন সময়ে “অতিরিক্ত” পদে নিয়োগ বা প্রক্রিয়ার ত্রুটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এই রায়টি একটি শক্তিশালী আইনি দৃষ্টান্ত (legal precedent) স্থাপন করল। এটি প্রমাণ করে যে, দীর্ঘ সময় ধরে পরিষেবা দেওয়ার পর, নিছক পদ্ধতিগত ত্রুটির কারণে কর্মীদের ছাঁটাই করা মানবিক বা আইনি – কোনও দিক থেকেই সমর্থনযোগ্য নয়। এই রায় দীর্ঘ সময় ধরে কর্মরত কর্মীদের আইনি লড়াইয়ে নতুন শক্তি জোগাবে।

Bangla News Dunia Desk - Pallab

মন্তব্য করুন