Primary 32000 Case: পশ্চিমবঙ্গের ৩২,০০০ প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে সম্প্রতি সিবিআই চার্জশিটকে কেন্দ্র করে একটি নতুন বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। ২০১৪ টেট থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত চলা এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সিবিআই-এর সাম্প্রতিক চার্জশিটের সম্পর্ক নিয়ে অনেকেই চিন্তিত। অনেকেই মনে করছেন, এই চার্জশিট সমগ্র ৩২,০০০ প্যানেলকেই প্রভাবিত করতে পারে। কিন্তু আসল তথ্য কী বলছে? চার্জশিটের বিবরণ এবং বোর্ডের বয়ান বিশ্লেষণ করলেই আসল চিত্রটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী নিয়োগ প্রক্রিয়া
প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ কলকাতা হাইকোর্টে হলফনামা দিয়ে জানিয়েছিল যে, তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া এপ্রিল ২০১৭-এর মধ্যেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসের পর পর্ষদ সরাসরি আর কোনো প্যানেল প্রকাশ বা নিয়োগ করেনি। যদি এরপরে কোনো নিয়োগ হয়েও থাকে, তা আদালতের নির্দেশেই হয়েছে। এই তথ্যটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ দুর্নীতির সময়কাল বোঝার জন্য এটি একটি মূল ভিত্তি।
সিবিআই চার্জশিটে দুর্নীতির বিবরণ
সিবিআই তাদের সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি (Primary Teacher Recruitment Scam) নিয়ে একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এনেছে। তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী এবং পর্ষদের সভাপতি এই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ। চার্জশিট অনুযায়ী, দুর্নীতির মূল ঘটনাগুলি ঘটেছিল পর্ষদের নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরে।
- অকৃতকার্য প্রার্থীদের নম্বর দান: একটি ফাইল উদ্ধার করা হয়েছে যেখানে অকৃতকার্য প্রার্থীদের ১ নম্বর করে অতিরিক্ত দেওয়ার অনুমোদন ছিল।
- প্রভাবশালীদের তালিকা: ২৮/০৬/২০২২ তারিখের একটি মেমোতে ৩৪ জন প্রার্থীর রোল নম্বর এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নাম পাওয়া গিয়েছে।
- ৭৫২ জনের তালিকা: তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রীর OSD প্রবীর ব্যানার্জীর ইমেল থেকে ৭৫২ জন অযোগ্য প্রার্থীর একটি তালিকা পাওয়া যায়। এই প্রার্থীদের ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন এবং ইন্টারভিউ নেওয়া হয়েছিল ১১/০৫/২০১৭ থেকে ১৬/০৫/২০১৭-এর মধ্যে।
চার্জশিট ও ৩২,০০০ প্যানেলের সম্পর্ক
এখানেই মূল বিষয়টি লুকিয়ে আছে। পর্ষদের মতে, নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে ১৭/০৪/২০১৭ তারিখে। অথচ, সিবিআই চার্জশিটে উল্লেখিত ৭৫২ জন অযোগ্য প্রার্থীর নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতি শুরু হয়েছে ১১ই মে, ২০১৭ থেকে। অর্থাৎ, পর্ষদের অফিসিয়াল প্যানেল প্রকাশের প্রায় এক মাস পরে এই দুর্নীতিমূলক কার্যকলাপগুলি সংঘটিত হয়েছিল।
এই তথ্যের ভিত্তিতে বলা যায়, যে দুর্নীতি সিবিআই চার্জশিটে প্রমাণিত হয়েছে, তা মূল ৩২,০০০ প্যানেলের অংশ নয়। এই দুর্নীতিগ্রস্ত নিয়োগগুলি পর্ষদের অফিসিয়াল নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী এবং পর্ষদ সভাপতির অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের ফল। সুতরাং, অ্যাডভোকেট বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য যে দুটি বিষয়কে গুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ, তার ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
সিবিআই চার্জশিট থেকে এটা স্পষ্ট যে দুর্নীতি হয়েছে, কিন্তু তার সময়কাল এপ্রিল ২০১৭-এর পরে। বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ৩২,০০০ নিয়োগের মূল প্রক্রিয়া তার আগেই সম্পন্ন হয়েছিল। তাই যারা মূল প্যানেলের মাধ্যমে চাকরি পেয়েছেন, তাদের এই চার্জশিট নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার বিশেষ কারণ নেই। দুর্নীতি প্রমাণিত হওয়ায় অভিযুক্তদের নিয়ে আইনি প্রক্রিয়া চলবে, কিন্তু এর সঙ্গে মূল ৩২,০০০ প্যানেলের সরাসরি কোনো যোগসূত্র এখনো পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।














