32000 Teacher Case: পশ্চিমবঙ্গের আলোড়ন সৃষ্টিকারী ৩২,০০০ প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বাতিলের মামলায় একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠেছে। ২০১৭ সালে এই অপ্রশিক্ষিত (non-trained) শিক্ষকদের নিয়োগের সময় কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের (MHRD) কোনো ছাড় বা রিলাক্সেশন কি আদৌ ছিল? মামলাকারীদের পক্ষ থেকে আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য মহাশয় অভিযোগ করেছেন যে, অপ্রশিক্ষিত শিক্ষক নিয়োগের ছাড়ের শেষ তারিখ ছিল ৩১শে মার্চ, ২০১৫। কিন্তু আসল তথ্য কী? সত্যিই কি নিয়ম ভেঙে এই নিয়োগ হয়েছিল?
কেন্দ্রীয় সরকারের গ্যাজেট নোটিফিকেশন এবং নিয়মাবলী বিশ্লেষণ করলে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র উঠে আসে। এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার বৈধতা নির্ভর করছে The Right of Children to Free and Compulsory Education (Amendment) Act, 2017-এর ওপর।
কী বলছে কেন্দ্রীয় সরকারের আইন?
১৭ই অক্টোবর, ২০১৭ তারিখে মিনিস্ট্রি অফ হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট (MHRD) একটি গুরুত্বপূর্ণ নোটিফিকেশন জারি করে, যা RTE Act, 2009-এর সংশোধন করে। এই সংশোধনীতে শিক্ষকদের ন্যূনতম যোগ্যতার বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশিকা দেওয়া হয়।
- সংশোধনীর মূল বিষয়: এই আইনে বলা হয় যে, যে সমস্ত শিক্ষক ৩১শে মার্চ, ২০১৫ তারিখে নিযুক্ত ছিলেন বা কর্মরত ছিলেন কিন্তু তাঁদের ন্যূনতম যোগ্যতা (NCTE নিয়ম অনুযায়ী উচ্চমাধ্যমিকে ৫০% নম্বর, D.El.Ed এবং TET পাশ) ছিল না, তাঁদের সেই যোগ্যতা অর্জন করতে হবে।
- সময়সীমা: সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো, এই যোগ্যতা অর্জনের জন্য চার বছরের সময়সীমা দেওয়া হয়।
- কার্যকর হওয়ার তারিখ: এই আইনটি পূর্ববর্তী তারিখ থেকে (retrospective effect) অর্থাৎ ১লা এপ্রিল, ২০১৫ থেকে কার্যকর করা হয়।
তাহলে ছাড়ের শেষ তারিখ কবে?
হিসাবটা খুবই সহজ। যেহেতু আইনটি ১লা এপ্রিল, ২০১৫ থেকে কার্যকর হয়েছে এবং যোগ্যতা অর্জনের জন্য চার বছরের ছাড় দেওয়া হয়েছে, তাই অপ্রশিক্ষিত শিক্ষকদের ন্যূনতম যোগ্যতা অর্জনের শেষ তারিখ দাঁড়ায় ১লা এপ্রিল, ২০১৯।
এর অর্থ হলো, ১লা এপ্রিল, ২০১৯ পর্যন্ত অপ্রশিক্ষিত শিক্ষকদের নিয়োগ করতে আইনত কোনো বাধা ছিল না। যেহেতু ৩২,০০০ শিক্ষকের নিয়োগ প্রক্রিয়া ২০১৬-১৭ সালে হয়েছিল, তাই MHRD-র নিয়ম অনুযায়ী তা সম্পূর্ণ বৈধ ছিল। এই শিক্ষকরা পরবর্তীকালে NIOS-এর মাধ্যমে ২০১৯ সালের মার্চের মধ্যে তাঁদের D.El.Ed কোর্স সম্পন্ন করেন, যা নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যেই ছিল।
আদালতের প্রশ্নের উত্তর
কলকাতা হাইকোর্টের মাননীয় বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তী মহাশয় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের কাছে যে পাঁচটি প্রশ্ন রেখেছেন, তার মধ্যে প্রথম প্রশ্নটিই ছিল MHRD-র ছাড় সংক্রান্ত। উপরের তথ্য থেকে এটা স্পষ্ট যে, ২০১৭ সালে ৩২,০০০ অপ্রশিক্ষিত শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দিষ্ট ছাড় ছিল এবং পর্ষদ বা রাজ্য সরকার কোনো নিয়ম ভঙ্গ করেনি। ফলে, মামলাকারীদের তোলা অভিযোগ গ্যাজেটের তথ্যের সামনে দুর্বল হয়ে পড়ছে।














