SSC SLST Experience Case: এসএসসি শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অভিজ্ঞ শিক্ষকদের জন্য বরাদ্দ ১০ নম্বর নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত। এই নম্বরটি কখন যোগ করা হবে, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে জটিলতা। আজ কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসে এই সংক্রান্ত একাধিক মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে বিভিন্ন পক্ষের আইনজীবীরা নিজেদের যুক্তি তুলে ধরেন। এই শুনানির ওপরেই নির্ভর করছে নিয়োগ প্রক্রিয়ার ভবিষ্যৎ।
মামলার মূল বিষয়বস্তু
আজকের শুনানিতে মূলত তিনটি ভিন্ন মামলা একত্রিত করে শুনানি করা হয়, যার সবকটিই টিচিং এক্সপেরিয়েন্সের ১০ নম্বর সংক্রান্ত।
- প্রথমত, অভিজ্ঞ শিক্ষকদের এই ১০ নম্বর প্রদান করা যাবে না, এই দাবিতে একটি মামলা করা হয়।
- দ্বিতীয়ত, যদি এই নম্বর দেওয়াই হয়, তবে তা সাক্ষাৎকারের (Interview) আগে যোগ হবে নাকি পরে, সেই সংক্রান্ত একটি মামলা।
- তৃতীয়ত, নবম-দশম স্তরের শিক্ষকরা যাতে একাদশ-দ্বাদশ স্তরে নিয়োগের ক্ষেত্রে এই অভিজ্ঞতার সুবিধা না পান, সেই মর্মে আরও একটি মামলা ছিল।
আদালতে আইনজীবীদের সওয়াল-জবাব
শুনানির শুরুতে এসএসসির আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, এই সমস্ত বিষয়গুলি আগেই সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল এবং শীর্ষ আদালত সেই মামলাগুলি খারিজ করে নিয়োগ প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। তাঁর মতে, যেহেতু সুপ্রিম কোর্ট নিয়মে কোনো অসঙ্গতি পায়নি, তাই হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চে এই মামলার গ্রহণযোগ্যতা নেই।
অন্যদিকে, মামলাকারীদের আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য দাবি করেন, সুপ্রিম কোর্টে ১০ নম্বর আগে না পরে যোগ হবে, সেই বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো চ্যালেঞ্জ করা হয়নি। তিনি বলেন, “আমরা সম্পূর্ণ নিয়মকে চ্যালেঞ্জ করিনি, শুধু ১০ নম্বর কখন দেওয়া হবে, সেই বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ করেছি।”
রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) কিশোর দত্ত জানান, এই নিয়মটি “কোয়ালিটি এডুকেশন” বা গুণগত মানের শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তৈরি করা হয়েছে। তাঁর মতে, অভিজ্ঞ শিক্ষকদের অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্যই সাক্ষাৎকারের আগে লিখিত পরীক্ষার নম্বরের সাথে অভিজ্ঞতার নম্বর যোগ করার নিয়ম করা হয়েছে। যদি এটি পরে যোগ করা হয়, তবে অনেক অভিজ্ঞ শিক্ষক সাক্ষাৎকারের সুযোগ থেকেই বঞ্চিত হবেন।
রুলসের বিভ্রান্তি এবং বিচারপতির পর্যবেক্ষণ
শুনানিতে রুলসের ‘Academic’ এবং ‘Academics’ শব্দ দুটি নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। একজন আইনজীবীর মতে, রুলসে ‘Academic’ বলা হয়েছে, যার সাথে টিচিং এক্সপেরিয়েন্স যুক্ত নয়। কিন্তু ‘Academics’ হলে তার মধ্যে অভিজ্ঞতার নম্বর যুক্ত হয়।
বিচারপতি অমৃতা সিনহা রুলসের এই অস্পষ্টতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, “আপনাদের রুলস নিয়ে এত বিভ্রান্তি কেন? একটি ছোট ‘s’ অক্ষরের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে।”
এসএসসির আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট করেন যে, লিখিত পরীক্ষা এবং ‘Academic’ স্কোরের (যার মধ্যে একাডেমিক ও টিচিং এক্সপেরিয়েন্স উভয়ই রয়েছে) ভিত্তিতে ইন্টারভিউ লিস্ট তৈরি হবে। এই নম্বর দুবার যোগ করার কোনো প্রশ্নই নেই।
পরবর্তী শুনানি কবে?
সমস্ত পক্ষের সওয়াল-জবাব শোনার পর বিচারপতি জানান, আগামী ২৪ তারিখে সুপ্রিম কোর্টে এই সংক্রান্ত একটি মামলার শুনানি রয়েছে। যদি শীর্ষ আদালত অভিজ্ঞতার নম্বর দেওয়ার বিরুদ্ধেই রায় দেয়, তবে হাইকোর্টের এই মামলাগুলির আর কোনো প্রাসঙ্গিকতা থাকবে না। কিন্তু যদি নম্বর দেওয়ার পক্ষে রায় আসে, তবেই তা কখন যোগ হবে সেই প্রশ্ন উঠবে। তাই এই মামলার পরবর্তী বিস্তারিত শুনানির জন্য ২৮ তারিখ দিন ধার্য করা হয়েছে। ওই দিনের রায়ের পরই এই জট কাটার সম্ভাবনা রয়েছে।














