Digital Gold Risk: ডিজিটাল গোল্ডে বিনিয়োগে বড় ঝুঁকি! SEBI-এর সতর্কবার্তায় নতুন আতঙ্ক, টাকা ডোবার আগে জানুন সুরক্ষিত পথ

By Bangla News Dunia Desk - Pallab

Published on:

Digital Gold Risk: আজকাল বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে মাত্র এক ক্লিকে সোনা কেনা খুবই সাধারণ একটি বিষয় হয়ে উঠেছে। Paytm, PhonePe বা বিভিন্ন জুয়েলারি ব্র্যান্ডের অ্যাপে মাত্র ১০ টাকাতেও সোনা কেনার এই সুবিধাকে ‘ডিজিটাল গোল্ড’ (Digital Gold) বলা হয়। সহজে বিনিয়োগের সুযোগ থাকায় এটি দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। কিন্তু এই জনপ্রিয় বিনিয়োগ পদ্ধতির মধ্যেই লুকিয়ে আছে বড়সড় ঝুঁকি। সম্প্রতি ভারতের বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা SEBI (সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া) ডিজিটাল গোল্ডে বিনিয়োগের বিপদ সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করেছে।

ডিজিটাল গোল্ড কী এবং এটি কীভাবে কাজ করে?

ডিজিটাল গোল্ড হল অনলাইনে সোনা কেনার একটি সহজ পদ্ধতি। যখন আপনি কোনও প্ল্যাটফর্ম থেকে ডিজিটাল গোল্ড কেনেন, তখন সেই কোম্পানি দাবি করে যে তারা আপনার হয়ে সমপরিমাণ ২৪-ক্যারেট খাঁটি সোনা কিনে তাদের সুরক্ষিত ভল্টে (Vault) জমা রাখছে। আপনাকে এর প্রমাণ হিসেবে একটি ডিজিটাল রসিদ বা সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। এর প্রধান আকর্ষণগুলি হলো:

  • খুব অল্প পরিমাণে, যেমন ₹১০ বা ₹৫০ দিয়েও সোনা কেনা যায়।
  • সোনা নিজের কাছে রাখা বা তার সুরক্ষার কোনও চিন্তা করতে হয় না।
  • যখন খুশি অনলাইনে বিক্রি করা যায় বা এটিকে আসল গয়না বা সোনার কয়েনে রূপান্তরিত করার (Redeem) সুবিধা থাকে।

Tanishq, MMTC-PAMP, Paytm, PhonePe-এর মতো বড় ব্র্যান্ডগুলি এটি অফার করায় মানুষের মধ্যে এর প্রতি বিশ্বাস তৈরি হয়েছে।

SEBI-এর সতর্কতা: আসল ঝুঁকি কোথায়?

SEBI-এর মূল উদ্বেগের কারণ হল ডিজিটাল গোল্ড কোনও নিয়ন্ত্রিত (Regulated) বিনিয়োগ পণ্য নয়। SEBI স্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে ডিজিটাল গোল্ডকে ‘সিকিউরিটি’ হিসেবে গণ্য করা হয় না, তাই এটি তাদের আওতার বাইরে। এর ফলে বিনিয়োগকারীদের জন্য একাধিক ঝুঁকি তৈরি হয়:

  • বিনিয়োগকারী সুরক্ষার অভাব: মিউচুয়াল ফান্ড বা গোল্ড ETF-এর ক্ষেত্রে SEBI-এর সুরক্ষা কবচ থাকে। কিন্তু ডিজিটাল গোল্ডের ক্ষেত্রে তা নেই। যদি কোনও কারণে বেসরকারি কোম্পানিটি দেউলিয়া হয়ে যায়, তবে আপনার সম্পূর্ণ বিনিয়োগ ডুবে যেতে পারে।
  • কাউন্টারপার্টি রিস্ক: আপনার বিনিয়োগ সম্পূর্ণভাবে ওই বেসরকারি কোম্পানির বিশ্বাসযোগ্যতার উপর নির্ভরশীল। তারা যদি ব্যবসা বন্ধ করে দেয়, আপনার সোনা ফেরত পাওয়ার কোনও গ্যারান্টি নেই।
  • অস্বচ্ছতা: কোম্পানিগুলি সত্যিই আপনার জন্য ভল্টে সোনা রাখছে কিনা, তার কোনও নির্ভরযোগ্য অডিট রিপোর্ট সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাছে থাকে না। পুরোটাই বিশ্বাসের উপর চলে।
  • বিভ্রান্তিকর ধারণা: বড় ব্র্যান্ডের নাম যুক্ত থাকায় সাধারণ মানুষ এটিকে একটি সুরক্ষিত ও সরকার-অনুমোদিত বিনিয়োগ বলে মনে করেন, যা আসলে সত্যি নয়।
  • অতিরিক্ত চার্জ: ডিজিটাল গোল্ডকে আসল সোনায় রূপান্তরিত করার সময় কোম্পানিগুলি নিজেদের ইচ্ছেমতো মেকিং চার্জ বা অন্য ফি চাপাতে পারে, কারণ এর উপর কোনও সরকারী নিয়ন্ত্রণ নেই।

ডিজিটাল গোল্ড কি বেআইনি?

না, SEBI এটিকে বেআইনি বলেনি। এটি একটি ‘বাণিজ্যিক পণ্য’, কিন্তু ‘নিয়ন্ত্রিত বিনিয়োগ পণ্য’ নয়। অর্থাৎ, এটি কিনলে আপনি আইন ভাঙছেন না, কিন্তু এর সম্পূর্ণ ঝুঁকি আপনার নিজের।

বিনিয়োগকারীদের এখন কী করা উচিত?

SEBI এই ঝুঁকির পাশাপাশি সুরক্ষিত বিকল্পের কথাও বলেছে।

যারা ইতিমধ্যে বিনিয়োগ করেছেন: আতঙ্কিত না হয়ে আপনার ডিজিটাল রসিদ ও স্টেটমেন্ট ডাউনলোড করে রাখুন। সম্ভব হলে, সুযোগ বুঝে আপনার ডিজিটাল গোল্ড বিক্রি করে বা আসল সোনা নিয়ে কোনও নিয়ন্ত্রিত মাধ্যমে বিনিয়োগ করুন।

যারা নতুন বিনিয়োগ করতে চান: ডিজিটাল গোল্ডের পরিবর্তে SEBI-অনুমোদিত সুরক্ষিত বিকল্পগুলি বিবেচনা করুন।

সুরক্ষিত বিকল্প কী?

সোনায় বিনিয়োগের জন্য SEBI এই মাধ্যমগুলিকে সুরক্ষিত মনে করে:

  • গোল্ড ইটিএফ (Gold ETFs): এটি শেয়ারের মতো স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে কেনা যায় এবং SEBI দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
  • সার্বভৌম গোল্ড বন্ড (Sovereign Gold Bonds – SGB): এটি সরাসরি ভারত সরকার জারি করে এবং সবচেয়ে সুরক্ষিত। এতে বছরে ২.৫% অতিরিক্ত সুদও পাওয়া যায়।
  • ইলেকট্রনিক গোল্ড রসিদ (EGR): এটিও স্টক এক্সচেঞ্জে ট্রেড হয় এবং SEBI-এর আওতাধীন।

ডিজিটাল গোল্ডে বিনিয়োগ সুবিধাজনক হলেও, এতে সুবিধার চেয়ে ঝুঁকি অনেক বেশি। কষ্টার্জিত অর্থ বিনিয়োগের আগে সেটি কতটা সুরক্ষিত এবং সরকারীভাবে নিয়ন্ত্রিত, তা যাচাই করা অত্যন্ত জরুরি।

Disclaimer: এই প্রতিবেদনটি শুধুমাত্র তথ্যের উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে। এটি কোনও বিনিয়োগের পরামর্শ নয়। বিনিয়োগ করার আগে অনুগ্রহ করে একজন আর্থিক উপদেষ্টার সঙ্গে পরামর্শ করুন।

Bangla News Dunia Desk - Pallab

মন্তব্য করুন