WBSSC Recruitment: পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ার আইনি জটিলতার আবহে ফের একবার বিক্ষোভের আগুন জ্বলে উঠেছে। স্কুল সার্ভিস কমিশন (SSC) কর্তৃক একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশের পরেই নতুন করে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে। অভিযোগ উঠেছে, লিখিত পরীক্ষায় প্রায় পূর্ণমান পেয়েও হাজার হাজার নতুন চাকরিপ্রার্থী ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাক পাননি। এই ‘বঞ্চনা’র বিরুদ্ধেই সুবিচারের দাবিতে সোমবার বিকাশ ভবন অভিযানের ডাক দিয়েছেন তাঁরা।
সদ্য প্রকাশিত ফলাফল অনুযায়ী, বহু নতুন প্রার্থী লিখিত পরীক্ষায় ৬০ নম্বরের মধ্যে ৬০, ৫৮ বা ৫৯-এর মতো ঈর্ষণীয় স্কোর করেছেন। স্বাভাবিকভাবেই আশা করা হয়েছিল যে, তাঁরা ইন্টারভিউয়ের জন্য নির্বাচিত হবেন। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, তালিকায় তাঁদের নাম নেই। এই ঘটনায় হতাশ ও ক্ষুব্ধ চাকরিপ্রার্থীদের প্রশ্ন, মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ হলে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েও কেন তাঁরা সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন?
বিতর্কের কেন্দ্রে অভিজ্ঞতার ১০ নম্বর
বিক্ষুব্ধ চাকরিপ্রার্থীদের অভিযোগের তীর মূলত অভিজ্ঞতার জন্য বরাদ্দ অতিরিক্ত ১০ নম্বরের দিকে। তাঁদের দাবি, কমিশন অভিজ্ঞ শিক্ষক এবং পার্শ্বশিক্ষকদের যে ১০ নম্বর ‘গ্রেস’ বা ‘ওয়েটেজ’ হিসেবে দিচ্ছে, তা-ই নতুন মেধাবী প্রার্থীদের পিছিয়ে পড়ার মূল কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এক নতুন চাকরিপ্রার্থী বলেন, “অভিজ্ঞদের জন্য যে নম্বর দেওয়া হচ্ছে, তা শুধুমাত্র ২০১৬ সালের চাকরিহারাদের জন্য নয়, পার্শ্বশিক্ষকদেরও দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে আমরা যারা শুধুমাত্র মেধার জোরে ভালো ফল করেছি, তারা এক অসম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হয়েছি।” তাঁদের স্পষ্ট দাবি, এই বৈষম্যমূলক নিয়ম অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।
আন্দোলনকারীদের প্রধান ৩টি দাবি
বিকাশ ভবন অভিযানে নামার আগে চাকরিপ্রার্থীরা তাঁদের মূল তিনটি দাবি সামনে এনেছেন। দাবিগুলি হল:
- অভিজ্ঞতার নম্বর বাতিল: নিয়োগ প্রক্রিয়ায় মেধার স্বচ্ছ মূল্যায়ন নিশ্চিত করতে অভিজ্ঞতার জন্য বরাদ্দ ১০ নম্বর বাতিল করে নতুন করে তালিকা প্রকাশ করতে হবে।
- স্বচ্ছতা ও OMR শিট প্রকাশ: সমস্ত প্রার্থীর OMR শিট প্রকাশ্যে আনতে হবে, যাতে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় পূর্ণ স্বচ্ছতা বজায় থাকে এবং কেউ নিজের মূল্যায়ন নিয়ে অন্ধকারে না থাকেন।
- শূন্যপদ বৃদ্ধি: নবম-দশম এবং একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে শূন্যপদের সংখ্যা বাড়িয়ে মোট এক লক্ষ করতে হবে, যাতে আরও বেশি যোগ্য প্রার্থী চাকরি পেতে পারেন।
আন্দোলনকারীদের হুঁশিয়ারি, তাঁদের এই দাবিগুলি দ্রুত মেনে না নেওয়া হলে আগামী দিনে আরও বৃহত্তর আন্দোলনের পথে হাঁটতে বাধ্য হবেন তাঁরা।
শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাস ও পরিসংখ্যান
এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির মাঝে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু সোশ্যাল মিডিয়ায় চাকরিপ্রার্থীদের আশ্বস্ত করেছেন। তিনি লিখেছেন, “ডিসেম্বরের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করা আমাদের অঙ্গীকারের স্বচ্ছ, সুদৃঢ় ও দায়বদ্ধতার আরেকটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তাই চাকরিপ্রার্থীদের প্রতি আমাদের আন্তরিক বার্তা—ভরসা রাখুন, ভরসা থাকুক।”
অন্যদিকে, কমিশন সূত্রে খবর, প্রায় ২০,৫০০ জন প্রার্থীকে ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাকা হয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ৯,৫০০ জন নতুন। অর্থাৎ, নতুনদের একেবারে সুযোগ দেওয়া হয়নি, তা নয়। কিন্তু বিক্ষুব্ধদের পাল্টা যুক্তি, মেধা তালিকায় এগিয়ে থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র অভিজ্ঞতার নম্বরের মারপ্যাঁচেই তাঁরা পিছিয়ে পড়েছেন। এখন সকলের নজর সোমবারের বিকাশ ভবন অভিযানের দিকে, যার পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন বা শিক্ষা দপ্তর কী পদক্ষেপ গ্রহণ করে।














