SSC Interview List: স্কুল সার্ভিস কমিশনের (SSC) প্রিলিমিনারি ইন্টারভিউ লিস্ট প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই রাজ্যজুড়ে ব্যাপক আলোচনা এবং বিতর্ক শুরু হয়েছে। একদিকে যেমন ফ্রেশার চাকরিপ্রার্থীরা রাস্তায় নেমে আন্দোলন করছেন, তেমনই ইন-সার্ভিস এবং অযোগ্য তকমা পাওয়া শিক্ষকরাও নিজেদের দাবি নিয়ে সরব হয়েছেন। এই জটিল আইনি পরিস্থিতি নিয়ে আইনজীবী আলি আহসান আলমগীর তাঁর বিশ্লেষণ তুলে ধরেছেন।
মূল বিতর্ক এবং সমাধানের পথ
আন্দোলনকারী চাকরিপ্রার্থীদের অন্যতম প্রধান অভিযোগ হলো, বহু ফ্রেশার ভালো নম্বর পেয়েও ইন্টারভিউ বা ভেরিফিকেশনের জন্য ডাক পাননি। এই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়নি, বরং একাধিক বিষয় এবং ক্যাটাগরিতে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে স্বীকার করা হয়েছে।
আইনজীবী আলমগীরের মতে, যদি সব পক্ষের স্বার্থ রক্ষা করতে হয়, তবে শূন্যপদ বাড়ানো একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিকল্প হতে পারে। সরকারের এই বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত, যাতে যোগ্য প্রার্থীদের মধ্যে একটি ভারসাম্য আনা যায় এবং অসন্তোষ কমানো যায়।
অযোগ্য শিক্ষকদের পূর্ববর্তী আইনি পদক্ষেপ
অযোগ্য বা ‘Tainted’ শিক্ষকরা অনেক আগেই কলকাতা হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দাখিল করেছিলেন। সেই মামলার মূল দাবি ছিল:
- ফ্রেশারদের জন্য পর্যাপ্ত শূন্যপদ দিয়ে একটি সম্পূর্ণ নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করা।
- ২০১৬ সালের অংশগ্রহণকারীদের জন্য অযোগ্য (Tainted) প্রার্থীদের বাদ দিয়ে একটি পৃথক প্রক্রিয়া চালানো।
তবে, হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্ট সেই সময় এই প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করেনি। আদালত জানিয়েছিল যে, নতুন নিয়ম অনুযায়ী যেভাবে প্রক্রিয়া চলছে, সেভাবেই চলবে।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ও সময়সীমা
মামলাটি যখন বিভিন্ন আদালতে ঘুরছিল, তখন সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শীর্ষ আদালত ৩১শে ডিসেম্বরের মধ্যে সমগ্র নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করার নির্দেশ দিয়েছিল। এই কারণেই আদালত এমন কোনো পদক্ষেপ নিতে চায়নি, যা প্রক্রিয়াটিকে আরও দীর্ঘায়িত করতে পারে। উল্লেখ্য, অযোগ্য শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদও ৩১শে ডিসেম্বর পর্যন্তই নির্ধারিত ছিল।
‘টেন্টেড’ (Tainted) প্রার্থী প্রসঙ্গ
বর্তমানে সবচেয়ে বড় অভিযোগগুলির মধ্যে একটি হলো, প্রকাশিত তালিকায় ‘টেন্টেড’ বা অভিযুক্ত প্রার্থীরাও স্থান পেয়েছেন। আইনজীবীর মতে, টেন্টেড প্রার্থীদের তালিকা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেই (বিজয় বিশ্বাস মামলা) প্রকাশ করা হয়েছিল। সেই তালিকাকে চ্যালেঞ্জ করা হলেও সিঙ্গেল বেঞ্চ, ডিভিশন বেঞ্চ এবং এমনকি সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত সেই আবেদন খারিজ হয়ে যায়।
রেহানা বেগমের মামলায় সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্টভাবে জানিয়েছিল যে, যদি কোনো টেন্টেড প্রার্থী ভুলবশত তালিকাভুক্ত হয়ে ভেরিফিকেশনের জন্য ডাক পান, তবে কমিশন তাঁকে অ্যাপয়েন্টমেন্টের পর্যায়ে গিয়েও আটকাতে বাধ্য। এমনকি, আদালত আইনজীবীদের অনুরোধ করেছিল টেন্টেড প্রার্থীদের চিহ্নিত করে কমিশনকে জানাতে। আইনজীবী আলমগীর জানিয়েছেন, যদি এমন কোনো প্রার্থী নজরে আসে, তবে তাঁরা অবশ্যই আদালতে বিষয়টি তুলবেন, তবে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে চলা এই প্রক্রিয়াকে মামলার মাধ্যমে থামিয়ে দেওয়া উচিত নয়।
টিচিং এক্সপেরিয়েন্স সংক্রান্ত অভিযোগ
টিচিং এক্সপেরিয়েন্স বা শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা নিয়েও কিছু অভিযোগ উঠেছে। এই প্রসঙ্গে SSC বরাবরই স্পষ্ট করেছে যে, অভিজ্ঞতাটি অবশ্যই সাবস্ট্যান্টিভ পোস্ট-এ হতে হবে। যদি কোনো প্রার্থী ভুল তথ্য দিয়ে বা অন্য কোনো চাকরির অভিজ্ঞতা দেখিয়ে আবেদন করেন, তবে কমিশনের পক্ষে প্রিলিমিনারি পর্যায়ে তা ধরা সম্ভব নয়। এটি একমাত্র ভেরিফিকেশনের সময়েই যাচাই করা হবে এবং অযোগ্য প্রার্থীদের বাতিল করা হবে।
চূড়ান্ত বক্তব্য: শূন্যপদ বৃদ্ধির দাবি
আইনজীবী আলি আহসান আলমগীর পুনরায় জোর দিয়ে বলেন যে, শূন্যপদ বাড়ানোটা এই মুহূর্তে একটি জ্বলন্ত ইস্যু এবং সরকারের এই দাবি বিবেচনা করা উচিত। প্রায় ১০ বছর পর এই নিয়োগ প্রক্রিয়া হচ্ছে, তাই বর্তমান আন্দোলনকে তিনি সাধুবাদ জানিয়েছেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, আদালত এমন কোনো পদক্ষেপকে প্রতিহত করবে যা এই প্রক্রিয়াটিকে ‘ফার্স্ট এসএলএসটি’-র মতো সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়ার দিকে ঠেলে দেয়। ফ্রেশাররা যাতে সমান সুযোগ পান, সেই দাবিও তিনি তুলে ধরেন।














