TET Review Petition: শিক্ষকদের TET নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গ! দুটি সংগঠনের রিভিউ পিটিশন, কী ঘটতে চলেছে?

By Bangla News Dunia Desk - Pallab

Published on:

TET Review Petition: শিক্ষকদের যোগ্যতা নির্ণায়ক পরীক্ষা বা টেট (TET) সংক্রান্ত মামলা এক নতুন মোড় নিয়েছে। ২০২৫ সালের ১লা সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্ট এই বিষয়ে যে রায় ঘোষণা করেছিল, তার বিরুদ্ধে দেশজুড়ে একাধিক রিভিউ পিটিশন দাখিল করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত মোট ২৭টি রিভিউ, রিট পিটিশন এবং মডিফিকেশন অ্যাপ্লিকেশন জমা পড়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে। এই আবহে পশ্চিমবঙ্গের দুটি প্রভাবশালী শিক্ষক সংগঠনও এই রায়ের পুনর্বিবেচনার দাবিতে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে, যা রাজ্যের শিক্ষক মহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

রিভিউ পিটিশনের কেন্দ্রবিন্দুতে কারা?

পশ্চিমবঙ্গ থেকে যে দুটি সংগঠন এই আইনি লড়াইয়ে সামিল হয়েছে, তারা রাজ্যের শিক্ষক স্বার্থ রক্ষায় দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করে আসছে। সংগঠন দুটি হল:

  • অল পোস্ট গ্র্যাজুয়েট টিচারস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন: এই সংগঠনটি গত ১৩ই নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টে তাদের রিভিউ পিটিশন ফাইল করেছে। তারা সরাসরি ১লা সেপ্টেম্বর, ২০২৫-এর রায়টির পুনর্বিবেচনা দাবি করেছে।
  • বৃহত্তর গ্র্যাজুয়েট টিচারস অ্যাসোসিয়েশন (BGTA): এই সংগঠনটিও ‘চিন্ময় ঘোষ বনাম আঞ্জুমান ইশাদ ই তালিম ট্রাস্ট’ মামলায় পক্ষ নিয়েছে। যদিও এটি আপাতত একজন ব্যক্তিগত নামে করা হয়েছে, তবে সংগঠন সূত্রে খবর, রিভিউ পিটিশনের ফলাফলের উপর নির্ভর করে তারা সাংগঠনিকভাবে বৃহত্তর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবছে।

কেন এই রিভিউ পিটিশন দাখিল করা হল?

শিক্ষক সংগঠনগুলির দাখিল করা রিভিউ পিটিশনে মূলত দুটি প্রধান বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তাদের মূল দাবিগুলি হল:

১. পূর্ববর্তী নিয়োগপ্রাপ্তদের ছাড়: ২০১১ সালে যখন ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার এডুকেশন (NCTE) প্রথম টেট বাধ্যতামূলক করার নিয়ম চালু করে, তার আগে নিযুক্ত শিক্ষকদের যেন এই নিয়মের আওতায় না আনা হয়। সংগঠনগুলির যুক্তি, আইন কার্যকর হওয়ার আগের নিয়োগের ক্ষেত্রে নতুন নিয়ম প্রযোজ্য হতে পারে না।
২. ‘রেট্রোস্পেক্টিভ এফেক্ট’-এর বিরোধিতা: ২০১৭ সালের একটি সংশোধনীতে টেট সংক্রান্ত নিয়মকে ‘রেট্রোস্পেক্টিভ এফেক্ট’ বা পূর্ববর্তী সময় থেকে কার্যকর করার কথা বলা হয়েছিল। সংগঠনগুলি এই বিষয়টির তীব্র বিরোধিতা করেছে, কারণ এর ফলে বহু কর্মরত শিক্ষকের চাকরি নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হতে পারে।

সংগঠন দুটির গুরুত্ব এবং অতীত সাফল্য

এই দুটি সংগঠনের আইনি লড়াইয়ে নামা বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ অতীতেও তারা শিক্ষকদের স্বার্থ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য পেয়েছে। এর আগে যখন ‘রোস্টার অফ অ্যাপয়েন্টমেন্ট’ সংক্রান্ত জটিলতায় রাজ্যের নরমাল সেকশনের শিক্ষকদের পদাবনতির (Demotion) আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল, তখন এই সংগঠনগুলিই কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করে তা আটকে দিয়েছিল।

বিজিটিএ (BGTA) মামলা করে এই রায় পেয়েছিল যে, ২০১৬ সালের আগে নিযুক্ত নরমাল সেকশনের শিক্ষকদের কোনোভাবেই আপার প্রাইমারিতে নামিয়ে আনা যাবে না। একইভাবে, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট টিচারদের সংগঠনও নিজেদের সদস্যদের জন্য অনুকূল রায় হাসিল করেছিল। তাই তাদের এই পদক্ষেপে আশার আলো দেখছেন রাজ্যের বহু শিক্ষক।

মামলার বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ

সম্প্রতি আসামের একটি মামলায় (সজল দেবের কেস) মাননীয় বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত এই রিভিউ পিটিশনগুলির গুরুত্ব উল্লেখ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, এই পিটিশনগুলির ফলাফলের উপরই সমগোত্রীয় অন্যান্য অনেক মামলার ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে।

বর্তমানে রিভিউ পিটিশনগুলিতে থাকা পদ্ধতিগত ত্রুটি-বিচ্যুতি (Defects) সংশোধন বা ‘কিওর’ (Cure) করার প্রক্রিয়া চলছে। এই প্রক্রিয়া শেষ হলেই মামলাগুলি বিচারপতিদের চেম্বারে বিবেচনার জন্য পাঠানো হবে। বিচারপতিরাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন যে এই রিভিউগুলির শুনানি ‘চেম্বার হেয়ারিং’-এর মাধ্যমে হবে, নাকি গুরুত্ব বিচার করে ‘ওপেন কোর্ট হেয়ারিং’ হবে। সমস্ত শিক্ষক সমাজ এখন সুপ্রিম কোর্টের পরবর্তী নির্দেশের দিকেই তাকিয়ে রয়েছে।

Bangla News Dunia Desk - Pallab

মন্তব্য করুন