যেখানে কয়েক মাস আগে ইলেকট্রিক স্মার্ট মিটার বসানো নিয়ে রাজ্য জুড়ে হৈচৈ শুরু হয়েছিল, এখন হঠাৎ করে সেই কাজ বন্ধ হল কেন? এমনই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে অনেকের মধ্যে। কারণ, কোথাও বিভ্রান্তি, কোথাও আতঙ্ক, কোথাও সরাসরি প্রতিবাদের সাক্ষী থেকেছিল এতদিন সাধারণ মানুষ। কিন্তু হঠাৎ করে যেন উধাও হয়ে গেলে স্মার্ট মিটার। আসল কারণ জানতে চোখ রাখুন প্রতিবেদনটির উপর।
কী এই ইলেকট্রিক স্মার্ট মিটার?
আসলে ইলেকট্রিক স্মার্ট মিটার সাধারণ মিটারের মতো হলেও আধুনিক আর উন্নত সংস্করণ। এটি শুধুমাত্র বিদ্যুৎ ব্যবহারের হিসাব রাখবে না, বরং রিয়েল টাইমে সেই তথ্য বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থার কাছে পৌঁছে দেবে। ফলে মিটার রিডিং নিতে আর কোনও কর্মীর বাড়িতে আসা লাগবে না। পাশাপাশি ভুল হিসেবের সম্ভাবনাও থাকবে না। আর গ্রাহকরা নিজেদের বিদ্যুৎ ব্যবহারের তথ্য লাইভে দেখতে পাবে।
উল্লেখ্য, ২০০৩ সালে সংসদে মিটার সংক্রান্ত যে আইন পাস করা হয়েছিল, তার ভিত্তিতে বহুবার সংশোধন হয়েছে। আর ২০২৪ সালে প্রকাশিত গেজেট বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী বিদ্যুৎ বিলকে আধুনিক করতে স্মার্ট মিটার বসানো হয়। এটি শুধুমাত্র প্রযুক্তিগত উন্নয়ন বলা চলে না, বরং বিলিং ব্যবস্থা আরও স্বচ্ছ করার উদ্যোগ।
তবে অনেকের ধারণা ছিল যে, স্মার্ট মিটার মানেই বাধ্যতামূলক প্রিপেইড প্ল্যান নিতে হবে। কিন্তু বাস্তব কথা বলছে অন্য। বিদ্যুৎ দপ্তর স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, প্রিপেইড বা পোস্টপেইড, দুটোই গ্রাহকদের পছন্দ অনুযায়ী হবে। কেউ চাইলে আগের মতো পোস্টপেইড বিলও পেতে পারেন।
শুরু হয়েও বন্ধ হল কেন ইলেকট্রিক স্মার্ট মিটার?
আসলে এর প্রধান কারণ ছিল সচেতনতার অভাব। স্মার্ট মিটারের সুবিধা সম্পর্কে গ্রাহকদের সেরকম ভাবে তথ্যই জানানো হয়নি। তার সুযোগে ভুল তথ্য, বিভ্রান্তি, ভুল ধারণা ইত্যাদি ছড়াতে থাকে। ফলে অনেক জায়গায় মানুষ ভেবেছিল যে, স্মার্ট মিটার মানেই বিল বাড়বে, আর সংযোগ কেটে দেওয়া হবে। তাই পরিস্থিতির উত্তপ্ততা রুখার আপাতত কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে।
ভবিষ্যতে কি তাহলে স্মার্ট মিটার বাধ্যতামূলক হবে?
যদিও এ বিষয়ে বিদ্যুৎ দপ্তর বা রাজ্য সরকার স্পষ্ট কোনও তথ্য বলেনি। তবে জানা যাচ্ছে, পুরনো অ্যানালগ মিটার তৈরি প্রায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। যেভাবে সাদাকালো টিভি এখন বিরল হয়ে গিয়েছে, ঠিক সেভাবেই আগের অ্যানালগ মিটার সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ হবে এবং স্মার্ট মিটারই হবে হয়তো ভবিষ্যতের মানদন্ড।
কিন্তু হ্যাঁ, কিছু কিছু এলাকায় মিটার বসানোর পর সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন রকম ভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ে। কোথাও জানা যায়, বিল বাড়ছে, কোথাও ভুল রিডিং দেখাচ্ছে, আবার কোথাও দাবি করা হচ্ছে যে অবিলম্বে সংযোগ কেটে দেওয়া হবে। কিন্তু বিদ্যুৎ দফতর তদন্ত করে দেখেছে যে, এই অভিযোগগুলির কোনটিই সত্যি নয়। উল্টে দেখা যায় যে, কিছু অসাধু ব্যক্তি নিজেদের বকেয়া বিলকে আটকাতে আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করছিল।
বিল কি তাহলে সত্যিই বাড়বে?
এ বিষয়ে রাজ্য সরকার স্পষ্ট বলে দিয়েছে যে, স্মার্ট মিটার বসালে কোনওরকম বিল বাড়বে না। গ্রাহকদের অতিরিক্ত কোনও খরচেরও দরকার নেই। প্রিপেইড মিটার ব্যাবহার করলে ৩% ছাড়ও পাওয়া যাবে। এমনকি সরকারি ভর্তুকি ও স্ল্যাব আগের মতোই থাকবে।
আরও পড়ুনঃ মাসে ২৫০ টাকা বিনিয়োগেই ১৭ লক্ষ টাকা রিটার্ন! গ্রাম থেকে শহর সবার জন্য এই স্কিম
যদিও সরকার বলছে, মিটার বাসনা থেকে রক্ষণাবেক্ষণ সবটাই সরকারি সংস্থার তত্ত্বাবধানে। কিন্তু কিছু সংগঠন অভিযোগ তুলছে যে, পরোক্ষভাবে এটি বেসরকারিকরণের পথে হাঁটতে চলেছে। তবে বিতর্ক আপাতত অব্যাহত রয়েছে। শুধু এটুকুই বলার, সাধারণ মিটারের তুলনায় স্মার্ট মিটার আরও বেশি সহজ এবং নির্ভরযোগ্য। এই মিটার বসানোর কাজ আবার কবে শুরু হয় সেটাই দেখার।














