32000 Teacher Verdict: ৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বহাল, হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে বড় স্বস্তি

By Bangla News Dunia Desk - Pallab

Published on:

32000 Teacher Verdict: অবশেষে দীর্ঘ উৎকণ্ঠার অবসান। রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষা মহলে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বড় রায় ঘোষণা করল কলকাতা হাই কোর্ট। চাকরি হারানো বা চাকরি থাকার দোলাচলে বিগত কয়েক মাস ধরে যে মানসিক চাপের মধ্য দিয়ে ৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক যাচ্ছিলেন, বুধবার দুপুরে তার পরিসমাপ্তি ঘটল। কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ স্পষ্ট জানিয়ে দিল, ওই ৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বাতিল হচ্ছে না। প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের দেওয়া চাকরি বাতিলের নির্দেশ এদিন খারিজ করে দিয়েছে উচ্চ আদালত।

বুধবার দুপুরে হাই কোর্টের বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি ঋতব্রত কুমার মিত্রের ডিভিশন বেঞ্চ এই ঐতিহাসিক রায় দান করে। এজলাসে তখন তিল ধারণের জায়গা ছিল না। আইনজীবী থেকে শুরু করে চাকরিপ্রার্থী এবং মামলাকারী—সকলেই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য। ঘড়িতে তখন দুপুর ২টো বেজে ২৪ মিনিট, দুই বিচারপতির বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, ৩২ হাজার শিক্ষকের চাকরি বহাল থাকছে। এই রায়ের ফলে রাজ্যের হাজার হাজার পরিবারে খুশির হাওয়া বয়ে গিয়েছে।

মামলার প্রেক্ষাপট ও পূর্ববর্তী নির্দেশ

ঘটনার সূত্রপাত ২০১৪ সালের টেট (TET) পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে। এই পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে ২০১৬ সালে রাজ্যজুড়ে প্রায় ৪২,৫০০ প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ করা হয়। কিন্তু নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পরেই দুর্নীতির ভুরি ভুরি অভিযোগ উঠতে শুরু করে। মামলাকারীদের দাবি ছিল, যোগ্য প্রার্থীদের বঞ্চিত করে অযোগ্য এবং প্রশিক্ষণহীনদের চাকরি দেওয়া হয়েছে।

এই অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা গড়ায় কলকাতা হাই কোর্ট পর্যন্ত। ২০২৩ সালের ১২ মে, তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এক নজিরবিহীন রায়ে প্রায় ৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তাঁর যুক্তি ছিল, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে এবং সঠিক পদ্ধতি মেনে বাছাইন করা হয়নি। সেই নির্দেশের বিরুদ্ধেই ডিভিশন বেঞ্চে আপিল করা হয়েছিল, যার চূড়ান্ত ফয়সালা এল বুধবার।

আদালতের রায়ের মূল অংশ

ডিভিসন বেঞ্চের এই রায়ের ফলে কার্যত স্বস্তিতে রাজ্য সরকার এবং প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদও। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক আজকের রায়ের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলি:

বিষয় বিবরণ
বিচারপতির বেঞ্চ বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি ঋতব্রত কুমার মিত্র
মূল রায় ৩২ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশ খারিজ
পূর্ববর্তী নির্দেশ প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের রায় বাতিল
নিয়োগ সাল ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়া

অভিযোগকারীদের যুক্তি ও বিতর্ক

প্রিয়াঙ্কা নস্কর-সহ প্রায় ১৪০ জন চাকরিপ্রার্থী এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মামলা দায়ের করেছিলেন। তাঁদের অভিযোগ ছিল অত্যন্ত গুরুতর। মামলাকারীদের পক্ষের আইনজীবীরা আদালতে জানিয়েছিলেন যে, তাঁরা ২০১৪ সালের টেট উত্তীর্ণ এবং ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে ইন্টারভিউও দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁদের চাকরি দেওয়া হয়নি।

মূল অভিযোগগুলি ছিল নিম্নরূপ:

  • অ্যাপটিটিউড টেস্টের অভাব: অভিযোগ ছিল, নিয়োগের সময় নিয়ম মেনে কোনও অ্যাপটিটিউড টেস্ট নেওয়া হয়নি। এমনকি এর জন্য কোনও নির্দিষ্ট গাইডলাইনও ছিল না।
  • প্রশিক্ষণহীনদের অগ্রাধিকার: এনসিটিই (NCTE)-র নিয়ম অনুযায়ী প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা থাকলেও, প্যানেলে দেখা গিয়েছিল বহু প্রার্থী প্রশিক্ষণহীন।
  • সংরক্ষণ বিধির লঙ্ঘন: নিয়োগ প্রক্রিয়ায় এসসি, এসটি এবং ওবিসি প্রার্থীদের সংরক্ষণের নিয়ম ঠিকঠাক মানা হয়নি বলে অভিযোগ ওঠে।
  • প্যানেল বিভ্রাট: মামলাকারীদের দাবি, প্যানেলের নম্বর বিভাজন পরিষ্কার ছিল না। পর্ষদ আদালতে যে তথ্য পেশ করেছিল, তাতেও অসঙ্গতি ছিল বলে অভিযোগ করা হয়।

আইনি লড়াইয়ের ইতিবৃত্ত

শুনানি চলাকালীন আদালত প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের কাছে ২০১৬ সালের প্যানেলের বিস্তারিত তথ্য তলব করেছিল। পর্ষদ জানিয়েছিল, প্যানেলে সর্বনিম্ন নম্বর ১৪.১৯১। কিন্তু মামলাকারীরা দাবি করেন, তাঁদের প্রাপ্ত নম্বর এর চেয়ে বেশি হওয়া সত্ত্বেও তাঁরা চাকরি পাননি, অথচ কম নম্বর পেয়েও অনেকে নিয়োগপত্র পেয়েছেন। এই জটিলতার মাঝেই সিঙ্গল বেঞ্চ চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিল। তবে ডিভিশন বেঞ্চের এদিনের রায়ে আপাতত আইনি জট কাটল এবং ৩২ হাজার শিক্ষকের কর্মজীবন সুরক্ষিত হল।

Bangla News Dunia Desk - Pallab

মন্তব্য করুন