Primary Teachers Job: কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের সাম্প্রতিক একটি রায়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন রাজ্যের প্রায় ৩২,০০০ প্রাথমিক শিক্ষক। এই নির্দেশের মাধ্যমে সিঙ্গল বেঞ্চের চাকরি বাতিলের আদেশ খারিজ করে দেওয়া হয়েছে এবং শিক্ষকদের চাকরিতে বহাল রাখা হয়েছে। তবে আদালতের এই রায়ে তীব্র উষ্মা প্রকাশ করেছেন মামলাকারীদের আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য। তাঁর মতে, এই রায়ে আইনের চেয়ে আবেগকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে, যা ভবিষ্যতে দুর্নীতির পথকে আরও প্রশস্ত করতে পারে।
হাইকোর্টের এই রায় এবং তার পরবর্তী প্রতিক্রিয়া রাজ্য রাজনীতি ও শিক্ষা মহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্যের মন্তব্য এবং মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা নিচে করা হলো।
আইনের লড়াইয়ে আবেগের জয়?
বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে এই রায়কে ‘আশ্চর্যজনক’ বলে অভিহিত করেছেন। তাঁর যুক্তি অনুযায়ী, আদালতের বিচার প্রক্রিয়ায় যেখানে আইনের শাসন এবং সংবিধানের নিয়মাবলি শেষ কথা হওয়া উচিত ছিল, সেখানে মানবিকতা বা ‘হিউম্যানিটেরিয়ান গ্রাউন্ড’ বিচারকদের প্রভাবিত করেছে।
- মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি: বিচারকরা পর্যবেক্ষণ করেছেন যে, দীর্ঘ সময় ধরে চাকরি করার পর হঠাৎ চাকরি চলে গেলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক এবং তাঁদের পরিবারের ওপর অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিপর্যয় নেমে আসবে। এই বিষয়টিই রায় প্রদানের ক্ষেত্রে নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করেছে।
- আইনের অবমাননা? বিকাশ রঞ্জন বাবু মনে করেন, মানবিকতার খাতিরে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও, এতে আইনের কঠোরতা লঘু হয়েছে।
প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি ও ভবিষ্যতের আশঙ্কা
মামলাকারীদের প্রধান আইনজীবী হিসেবে বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য বারবার ‘প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি’ বা ইনস্টিটিউশনাল করাপশনের বিষয়টি সামনে এনেছেন। তাঁর আশঙ্কা, চাকরি বহাল থাকার ফলে দুর্নীতিগ্রস্তরা ভুল বার্তা পেতে পারেন।
বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্যের মূল বক্তব্যগুলো হলো:
- দুর্নীতিতে উৎসাহ: তিনি মনে করেন, এই ধরনের রায়ের ফলে অসাধু উপায়ে চাকরি প্রাপকরা বা দুর্নীতির কারিগররা ভাবতে পারেন যে, কোনোভাবে চাকরিটি কিছুদিন টিকিয়ে রাখতে পারলেই আর ভয়ের কিছু নেই।
- মেধার বঞ্চনা: যোগ্য প্রার্থীরা, যারা মেধা তালিকায় স্থান পাওয়ার যোগ্য ছিলেন কিন্তু দুর্নীতির কারণে চাকরি পাননি, তাঁদের প্রতি সুবিচার করা হলো না বলে তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করেন।
মামলা ও তদন্তের ভবিষ্যৎ
চাকরি বহাল থাকলেও আইনি লড়াই কিন্তু এখনই শেষ হচ্ছে না। বিকাশ রঞ্জন বাবু স্পষ্ট করেছেন যে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে চলা ফৌজদারি মামলা বা ক্রিমিনাল কেসগুলি তাদের নিজস্ব গতিতেই চলবে। সিবিআই বা ইডি-র তদন্ত প্রক্রিয়ায় এই রায় কোনো বাধা সৃষ্টি করবে না। তবে অভিযুক্তরা এই রায়ের ফলে মানসিকভাবে কিছুটা চাঙ্গা হতে পারেন বা ‘অতিরিক্ত বল’ পেতে পারেন।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও সুপ্রিম কোর্টের সম্ভাবনা
এই রায় রাজ্য সরকারের জন্য নিঃসন্দেহে একটি বড় রাজনৈতিক স্বস্তি। ৩২,০০০ শিক্ষকের চাকরি চলে গেলে রাজ্যে যে অস্থিরতা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হতো, বিধানসভা নির্বাচনের আগে তা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারত। সরকার আপাতত সেই বিপদ থেকে রক্ষা পেল।
অন্যদিকে, এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়া হবে কি না, তা নিয়ে এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলেননি বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য। তিনি জানান, এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করছে মামলাকারী বা বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের ওপর। তাঁরা চাইলে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হতে পারেন। তবে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই যে জারি থাকবে, সে বিষয়ে তিনি প্রত্যয়ী।














