Primary Teachers Job: প্রাথমিকে ৩২ হাজার চাকরি বহাল রাখল হাইকোর্ট, পাল্টা প্রশ্ন তুললেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়

By Bangla News Dunia Desk - Pallab

Published on:

Primary Teachers Job: রাজ্যের শিক্ষা নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এক বড়সড় মোড়। প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলায় কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ এক ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করেছে। এই রায়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন প্রায় ৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক ও তাঁদের পরিবার। কলকাতা হাই কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এর আগে যে ৩২ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন, বুধবার সেই নির্দেশকে কার্যত খারিজ করে দিল হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ।

তবে আদালতের এই নতুন রায়ের পর চুপ করে বসে নেই তমলুকের বর্তমান বিজেপি সাংসদ তথা প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি আদালতের এই রায়ের ভিত্তি বা ‘গ্রাউন্ড’ নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন তুলেছেন এবং এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতির প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন।

আদালতের ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ

বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের একক বেঞ্চের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে মামলাটি ডিভিশন বেঞ্চে গিয়েছিল। বুধবার সেই মামলার শুনানিতে ডিভিশন বেঞ্চ স্পষ্ট জানিয়েছে যে, ওই ৩২ হাজার শিক্ষকের চাকরি বহাল থাকবে। আদালতের পর্যবেক্ষণে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ মানবিক ও আইনি দিক উঠে এসেছে:

  • দীর্ঘ সময়ের চাকরি: আদালত জানিয়েছে, ২০১৬ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত, অর্থাৎ প্রায় ৯ বছর ধরে এই শিক্ষকরা চাকরি করছেন। এত দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করার পর হঠাৎ করে চাকরি বাতিল হলে তা ওই ব্যক্তি এবং তাঁদের পরিবারের ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
  • কর্মজীবনে অভিযোগহীনতা: আদালতের মতে, চাকরি করার সময় এই সমস্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কর্মক্ষেত্রে কোনও নির্দিষ্ট অভিযোগ ওঠেনি।
  • সামগ্রিক প্রক্রিয়া: গুটিকয়েক অনিয়মের অভিযোগের জন্য গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়া বা হাজার হাজার মানুষের জীবিকা নষ্ট করা যায় না বলে আদালত মনে করেছে।

প্রাক্তন বিচারপতির প্রতিক্রিয়া ও প্রশ্ন

ডিভিশন বেঞ্চের এই রায়ের পর স্বাভাবিকভাবেই নজর ছিল প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের দিকে। তিনি সংবাদমাধ্যমের সামনে এই রায়ের যুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর মতে, যে যুক্তিতে বা ‘গ্রাউন্ডে’ এই চাকরিগুলি বহাল রাখা হল, তা নিয়ে তর্কের অবকাশ রয়েছে।

তিনি এসএসসি (SSC) মামলার উদাহরণ টেনে এনে বলেন, স্কুল সার্ভিস কমিশনের দুর্নীতি মামলায় ২৬ হাজার চাকরি বাতিল হয়েছিল। সেই ২৬ হাজার কর্মীও তো বহু বছর ধরে চাকরি করেছিলেন। অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, “তা হলে কি সেই রায় ভুল ছিল? আমার মনে হয় দীর্ঘ দিন চাকরি করাটা কোনও দুর্নীতির সাফাই বা চাকরি বহাল রাখার গ্রাউন্ড হতে পারে না।”

যদিও তিনি আদালতের প্রতি সম্মান জানিয়ে বলেছেন যে ডিভিশন বেঞ্চের বিচার করার ক্ষমতা রয়েছে এবং তাঁরা যা ভালো মনে করেছেন, সেই রায় দিয়েছেন। এ বিষয়ে তিনি আর বিশেষ কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

এসএসসি বনাম প্রাথমিক: একটি তুলনামূলক চিত্র

প্রাক্তন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বারবার এসএসসি মামলার সঙ্গে এই মামলার তুলনা টেনেছেন। তথ্য অনুযায়ী, দুই মামলার পরিস্থিতির একটি তুলনা নিচে দেওয়া হলো:

বিবরণ প্রাথমিক শিক্ষক মামলা এসএসসি (SSC) মামলা
চাকরি বাতিলের নির্দেশ তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ৩২ হাজার চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় ২৬ হাজার চাকরি বাতিলের রায় দিয়েছিলেন।
বর্তমান স্থিতি ডিভিশন বেঞ্চ চাকরি বহাল রেখেছে। সুপ্রিম কোর্ট ২০১৬ সালের পুরো প্যানেল বাতিল করে নতুন নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছে।
যুক্তির ভিত্তি মানবিক দিক ও দীর্ঘ ৯ বছরের কর্মজীবন বিবেচনা করা হয়েছে। দুর্নীতির কারণে পুরো প্যানেল বাতিল করা হয়েছিল।

ভবিষ্যৎ কোন পথে?

এসএসসি মামলার ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছিল যে বিষয়টি কলকাতা হাই কোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়ায় এবং শেষমেশ পুরো প্যানেল বাতিল করে নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়। কমিশন সেই মতো কাজও করছে। কিন্তু প্রাথমিকের ক্ষেত্রে চিত্রটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখানে ডিভিশন বেঞ্চ মানবিক দিক এবং দীর্ঘ কর্মজীবনকে প্রাধান্য দিয়েছে।

অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নিজের অবস্থানে অনড় থেকে বুঝিয়ে দিয়েছেন, বিচারক হিসেবে তিনি যা সঠিক মনে করেছিলেন, সেই রায়ই দিয়েছিলেন। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে ৩২ হাজার শিক্ষকের চাকরি বেঁচে যাওয়া নিঃসন্দেহে রাজ্য রাজনীতির পাশাপাশি শিক্ষা মহলে এক বিরাট আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

Bangla News Dunia Desk - Pallab

মন্তব্য করুন