8th Pay Commission: কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের জন্য বছরটা (২০২৫) বেশ ঘটনাবহুল। চলতি মাসেই, অর্থাৎ ৩১শে ডিসেম্বর ২০২৫-এ সপ্তম পে কমিশনের মেয়াদ শেষ হতে চলেছে। স্বাভাবিকভাবেই লক্ষ লক্ষ সরকারি কর্মী এবং পেনশনভোগীরা আশা করে বসে আছেন যে, ২০২৬-এর পয়লা জানুয়ারি থেকেই হয়তো অষ্টম পে কমিশনের (8th Pay Commission) সুপারিশ কার্যকর হবে এবং বেতনে একটা বড়সড় লাফ দেখা যাবে। কিন্তু বাস্তব চিত্রটা কি এতটাই সরল? সরকারি দপ্তরের অন্দরমহলের খবর এবং অতীতের পরিসংখ্যান কিন্তু অন্য কথা বলছে।
বিচারপতি রঞ্জনা দেশাইয়ের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের প্যানেল ইতিমধ্যেই গঠিত হয়েছে। কিন্তু কমিশনের ‘টার্মস অফ রেফারেন্স’ বা কার্যপরিধি চূড়ান্ত করতেই সরকারের প্রায় ১০ মাস সময় লেগেছে। গত ২৮শে অক্টোবর, ২০২৫-এ এটি অনুমোদিত হয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো, নতুন বেতন কাঠামো কবে নাগাদ কার্যকর হতে পারে?
রিপোর্ট জমা পড়তেই কেন দেরি হবে?
অষ্টম পে কমিশন গঠনের ঘোষণা করা হয়েছিল ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে। কিন্তু এর রূপরেখা তৈরি করতেই বছরের শেষ প্রান্তিক চলে এসেছে। নিয়ম অনুযায়ী, কমিশনকে রিপোর্ট জমা দেওয়ার জন্য ১৮ মাস সময় দেওয়া হয়েছে। সেই হিসেবে, ২০২৭ সালের এপ্রিল মাসের আগে রিপোর্ট জমা পড়ার সম্ভাবনা খুবই কম। রিপোর্ট জমা পড়ার পরেই যে সঙ্গে সঙ্গে বেতন বাড়বে, এমনটা ভাবাও ভুল। সরকারের উচ্চপর্যায়ে সেই রিপোর্ট খতিয়ে দেখতে আরও বেশ কিছুটা সময় অতিবাহিত হবে।
অতীত কী বলছে? পে কমিশনের ইতিহাসের দিকে নজর
ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, পে কমিশনের সুপারিশ কার্যকর হতে বরাবরই দীর্ঘ সময় লাগে। ৫ম, ৬ষ্ঠ এবং ৭ম পে কমিশনের সময়সীমা বিশ্লেষণ করলে একটি পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়।
নিচের টেবিলে পূর্ববর্তী কমিশনগুলোর সময়কাল তুলে ধরা হলো:
| পে কমিশন | শুরুর সময় | রিপোর্ট জমা | কার্যকরের সময়কাল |
|---|---|---|---|
| পঞ্চম | এপ্রিল ১৯৯৪ | জানুয়ারি ১৯৯৭ | সাড়ে ৩ বছর |
| ষষ্ঠ | অক্টোবর ২০০৬ | মার্চ ২০০৮ | প্রায় ২ বছর |
| সপ্তম | ফেব্রুয়ারি ২০১৪ | নভেম্বর ২০১৫ | ২৬ মাস |
উপরের পরিসংখ্যান স্পষ্ট করে দিচ্ছে যে, কমিশন গঠন থেকে বেতন হাতে পাওয়া পর্যন্ত গড়পড়তা ২ থেকে ৩ বছর সময় লেগেই যায়।
দীর্ঘসূত্রিতার নেপথ্যে ১০টি ধাপ
অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে, কেন এত দেরি হয়? আসলে এটি একটি অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়া। কেবল ঘোষণা করলেই কাজ শেষ হয় না, এর পেছনে ১০টি সুনির্দিষ্ট ধাপ বা ‘প্রটোকল’ থাকে:
- কমিশন গঠন ও সদস্য নিয়োগ: প্রথমে সরকার বিজ্ঞপ্তি জারি করে কমিশন গঠন করে।
- তথ্য সংগ্রহ: বিভিন্ন মন্ত্রক থেকে বর্তমান বেতন ও ভাতার তথ্য নেওয়া হয়।
- আলোচনা ও বৈঠক: কর্মী সংগঠন ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক করে দাবি-দাওয়া শোনা হয়।
- খসড়া তৈরি: অসংগতি দূর করে নতুন বেতন কাঠামোর নকশা তৈরি করা হয়।
- আর্থিক প্রভাব মূল্যায়ন: নতুন বেতনে সরকারের কোষাগারে কতটা চাপ পড়বে, তা হিসেব করা হয়।
- চূড়ান্ত রিপোর্ট পেশ: কমিশন তাদের সুপারিশ সরকারের কাছে জমা দেয়।
- ক্ষমতায়ন কমিটির (ECoS) পর্যালোচনা: সচিব পর্যায়ের কমিটি রিপোর্টটি খতিয়ে দেখে।
- আন্তঃমন্ত্রণালয় পরামর্শ: অর্থ, রেল, প্রতিরক্ষা ইত্যাদি মন্ত্রকের মতামত নেওয়া হয়।
- ক্যাবিনেট কমিটির অনুমোদন: অর্থনৈতিক বিষয়ক ক্যাবিনেট কমিটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়।
- বিজ্ঞপ্তি জারি: রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর নতুন বেতন বিধি চালু হয়।
কবে মিলবে বর্ধিত বেতন?
বর্তমান গতিপ্রকৃতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে, ২০২৭ সালের শেষের দিকে অথবা ২০২৮ সালের শুরুতে অষ্টম পে কমিশনের সুপারিশ কার্যকর হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও বিষয়টি সরকারি কর্মীদের জন্য কিছুটা হতাশার, তবুও আশার আলো এটাই যে, সরকার সাধারণত পেছনের তারিখ থেকে (Retrospective Effect) বকেয়া বা এরিয়ার মিটিয়ে দেয়। তাই ২০২৬-এর জানুয়ারিতে বেতন না বাড়লেও, পরবর্তীতে সেই টাকা একলপ্তে পাওয়ার সুযোগ থাকছে।














