In-Service Teachers: পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ (WBBPE) দ্বারা পরিচালিত প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় এক নতুন আইনি জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। ইন-সার্ভিস বা বর্তমানে কর্মরত শিক্ষকদের নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ আটকাতে কলকাতা হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করা হয়েছে। এই মামলার ফলে আগামী দিনের নিয়োগ প্রক্রিয়ায়, বিশেষ করে ২০২৫ সালের সম্ভাব্য নিয়োগে কর্মরত শিক্ষকরা অংশগ্রহণ করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন দেখা দিয়েছে। মামলাকারীদের মূল লক্ষ্য হলো, যারা ইতিমধ্যেই সরকারি বা সরকার-পোষিত স্কুলে চাকরি করছেন, তাদের এই নতুন প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া থেকে বিরত রাখা।
মামলার প্রেক্ষাপট ও মূল বিষয়বস্তু
কলকাতা হাইকোর্টে দায়ের হওয়া এই মামলার মূলে রয়েছে কর্মরত শিক্ষকদের পোস্টিং সংক্রান্ত অসন্তোষ। দেখা যাচ্ছে, বহু ইন-সার্ভিস শিক্ষক তাদের বর্তমান কর্মস্থল বা পোস্টিং নিয়ে সন্তুষ্ট নন। মূলত বাড়ির কাছে বা পছন্দের জেলায় পোস্টিং পাওয়ার আশায় তারা নতুন করে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করছেন। মামলাকারীদের দাবি, এর ফলে নতুন এবং বেকার চাকরিপ্রার্থীদের অধিকার ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। সুভাষ চন্দ্র বাঘ, মোহিত করাতি, পার্থরজিত বনিং, বিদেশ গাজী এবং ইন্দ্রজিৎ পালের মতো মামলাকারীরা আদালতের দ্বারস্থ হয়ে এই প্রক্রিয়ার ওপর স্থগিতাদেশ বা নিষেধাঞ্জা দাবি করেছেন।
মামলাকারীদের প্রধান যুক্তি ও অভিযোগ
পিটিশনার বা মামলাকারীরা আদালতের সামনে বেশ কিছু শক্তিশালী যুক্তি পেশ করেছেন। তাদের মতে, ইন-সার্ভিস শিক্ষকদের অংশগ্রহণের ফলে সামগ্রিক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। নিচে একটি তালিকার মাধ্যমে তাদের প্রধান যুক্তিগুলি তুলে ধরা হলো:
| যুক্তি | বিস্তারিত ব্যাখ্যা |
|---|---|
| শূন্যপদ নষ্ট | কর্মরত শিক্ষকরা নতুন চাকরি পেলে তাদের পুরনো পদটি শূন্য হয়ে যায়, যা বর্তমান প্রক্রিয়ায় পূরণ করা হয় না। ফলে একটি সিট নষ্ট হয়। |
| সংবিধান লঙ্ঘন | এটি সংবিধানের ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদের পরিপন্থী, কারণ এতে যোগ্য বেকার প্রার্থীদের সুযোগ কমে যাচ্ছে। |
| অসম প্রতিযোগিতা | ইন-সার্ভিস ও প্যারা টিচাররা অভিজ্ঞতার জন্য অতিরিক্ত নম্বর বা ‘ওয়েটেজ’ পেতে পারেন, যা ফ্রেশ ক্যান্ডিডেটদের পিছিয়ে দেয়। |
| পদের সমতা | যেহেতু এটি কোনো পদোন্নতি বা উচ্চতর পদের পরীক্ষা নয়, তাই সমতুল্য পদে পুনরায় আবেদন করার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। |
ইন-সার্ভিস শিক্ষকদের ভবিষ্যৎ ও আইনি প্রভাব
এই মামলাটি যদি মামলাকারীদের পক্ষে যায়, তবে কর্মরত শিক্ষকরা আর নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবেন না। এর ফলে শুধুমাত্র বেকার পরীক্ষার্থীরাই সুযোগ পাবেন। অন্যদিকে, যদি রায় ইন-সার্ভিস শিক্ষকদের পক্ষে যায়, তবে তারা মেধার ভিত্তিতে সুযোগ পেলেও বেশ কিছু টেকনিক্যাল সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন।
রাজ্যে শিক্ষকদের জন্য ট্রান্সফার পলিসি বা বদলি নীতি থাকা সত্ত্বেও কেন শিক্ষকরা নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিচ্ছেন, সেটিই এখন বড় বিতর্কের বিষয়। এই মামলার রায় আগামী দিনে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। আদালতের পরবর্তী নির্দেশ বা চূড়ান্ত রায়ের ওপরই নির্ভর করছে হাজার হাজার ইন-সার্ভিস শিক্ষক এবং লক্ষ লক্ষ বেকার চাকরিপ্রার্থীর ভবিষ্যৎ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পুরনো চাকরি ছেড়ে নতুন চাকরিতে যোগ দিলে ‘সার্ভিস কন্টিনিউটি’ বা চাকরির ধারাবাহিকতা বজায় রাখা কঠিন হতে পারে। এতে তাদের এতদিনের অর্জিত ইনক্রিমেন্ট এবং বেতন সংক্রান্ত সুবিধাগুলি নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। উল্লেখ্য, ২০২২ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ার সময়েও আদালতের তরফ থেকে কিছু নির্দিষ্ট বিধিনিষেধ ছিল। বর্তমান মামলাটি মূলত ২০২৫ বা তার পরবর্তী নিয়োগ প্রক্রিয়াগুলিকে লক্ষ্য করেই করা হয়েছে, যাতে ইন-সার্ভিস শিক্ষকরা আর বসতে না পারেন।














