SIR 2026: ২০২৫ সালে সারা ভারতজুড়ে শুরু হয়েছে দ্বিতীয় দফার এসআইআর (SIR) বা স্পেশাল সামারি রিভিশন ২০২৬-এর কাজ। বিহারে এই প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ সম্পন্ন হওয়ার পর বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে জোরকদমে চলছে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ। তবে শুরুর দিকে নির্বাচন কমিশনের সঠিক পরিকল্পনার অভাবে সাধারণ ভোটারদের চরম ভোগান্তির মুখে পড়তে হয়েছিল। অবশেষে নিজেদের ভুল শুধরে নিয়ে কমিশন একটি নতুন বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে, যা রাজ্যের লক্ষ লক্ষ সাধারণ মানুষকে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে সাহায্য করেছে।
কেন তৈরি হয়েছিল চরম বিভ্রান্তি?
এই সমস্যার মূল কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ২০০২ সালের ভোটার তালিকার তথ্যের গরমিল। নির্বাচন কমিশন ২০০২ সালের হার্ড কপি বা ছাপানো ভোটার তালিকার পিডিএফ (PDF) থেকে সফট কপিতে ডেটা কনভারশন করার সময় যান্ত্রিক ত্রুটির সম্মুখীন হয়। এর ফলে অনলাইনে তথ্যের ব্যাপক অসামঞ্জস্য দেখা দেয়।
মূলত যে সমস্যাগুলি সাধারণ মানুষকে নাজেহাল করেছে:
- বিএলও (BLO) অ্যাপ বা অনলাইন পোর্টালে বহু পুরনো ভোটারের নাম খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না।
- নামের বানানে মারাত্মক ভুল এবং ওলটপালট তথ্য প্রদর্শিত হচ্ছিল।
- সাধারণ মানুষ বা ক্যাফে থেকে চেষ্টা করেও প্রয়োজনীয় ‘ম্যাপিং’ (Mapping) করা সম্ভব হচ্ছিল না।
- বাড়িতে থাকা ২০০২ সালের হার্ড কপিতে নাম থাকা সত্ত্বেও অনলাইনে নাম না থাকায় ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
নির্বাচন কমিশনের নতুন নির্দেশিকা
ভোটারদের এই হয়রানি বন্ধ করতে এবং প্রক্রিয়াটিকে সহজ করতে নির্বাচন কমিশন তড়িঘড়ি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। এই নতুন নির্দেশিকায় বলা হয়েছে:
১. শুনানি বাতিল: যদি কোনো ভোটারের নাম বিএলও অ্যাপে ‘আনম্যাপড’ (Unmapped) দেখায়, কিন্তু ২০০২ সালের হার্ড কপি বা ছাপানো তালিকায় তাঁর নাম থাকে, তবে সেই ভোটারের কোনো হিয়ারিং বা শুনানির প্রয়োজন নেই।
২. নোটিশ প্রত্যাহার: ইতিমধ্যেই যদি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে কোনো বৈধ ভোটারের নামে শুনানির নোটিশ জেনারেট হয়ে থাকে, তবে তা অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। কোনোভাবেই সেই নোটিশ ভোটারের কাছে পাঠানো যাবে না।
৩. এক্সট্রাক্ট কপির ব্যবহার: ডিইও (DEO)-দের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তাঁরা যেন ২০০২ সালের ভোটার তালিকার এক্সট্রাক্ট কপি ব্যবহার করে যাচাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন।
আধিকারিকদের প্রতি বিশেষ নির্দেশ
সমস্যার দ্রুত সমাধানের লক্ষ্যে কমিশন বিএলও (BLO) এবং ডিইও (DEO)-দের জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু গাইডলাইন বেঁধে দিয়েছে। নিচে ছকের মাধ্যমে তা তুলে ধরা হলো:
| আধিকারিক | করণীয় কাজ |
|---|---|
| ডিইও (DEO) | ২০০২ সালের ভোটার তালিকার মূল এক্সট্রাক্ট কপি ব্যবহার করে তথ্য যাচাই করবেন এবং নিশ্চিত করবেন যাতে কোনো বৈধ ভোটার বাদ না পড়েন। |
| বিএলও (BLO) | ভোটারদের বাড়ি বাড়ি (Field Visit) গিয়ে তাঁদের সাম্প্রতিক ছবি এবং প্রয়োজনীয় নথিপত্র সংগ্রহ করবেন এবং তা পোর্টালে আপলোড করবেন। |
নির্বাচন কমিশনের এই সময়োপযোগী সিদ্ধান্তে সেই সমস্ত লক্ষ লক্ষ মানুষ স্বস্তি পেলেন, যারা নথিপত্র ঠিক করতে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে ছোটাছুটি করছিলেন। তবে ওয়াকিবহাল মহলের মতে, এনুমারেশন বা তালিকা তৈরির প্রাথমিক পর্যায়েই যদি এই বাস্তবতা খতিয়ে দেখা হতো, তবে সাধারণ মানুষকে এই চরম ভোগান্তির শিকার হতে হতো না। পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতার অভাব এবং যান্ত্রিক ত্রুটির কারণেই এই অচলাবস্থা তৈরি হয়েছিল, যা দেরিতে হলেও সমাধানের পথে।








