Google Calendar: বর্তমান যুগে প্রত্যেকেই নিজেদের কাজের গতি এবং দক্ষতা বা ‘প্রোডাক্টিভিটি’ বাড়ানোর জন্য সর্বদা সচেষ্ট। এর জন্য আমরা অনেকেই বিভিন্ন ধরণের প্রোডাক্টিভিটি টুল, টু-ডু লিস্ট অ্যাপ, হ্যাবিট ট্র্যাকার বা ডিজিটাল প্ল্যানার ব্যবহার শুরু করি। কিন্তু সমস্যা হলো, কিছুদিন পরেই এই জটিল অ্যাপগুলির ব্যবহার আমরা বন্ধ করে দিই। ফলস্বরূপ, কাজ জমতে থাকে এবং মোবাইলে নোটিফিকেশনের পাহাড় তৈরি হয়। অথচ, আপনার হাতের স্মার্টফোনটিতেই এমন একটি সহজ সমাধান রয়েছে যা আপনি হয়তো এড়িয়ে যাচ্ছেন—তা হলো Google Calendar।
অধিকাংশ অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারী সপ্তাহে কয়েকবার গুগল ক্যালেন্ডার ওপেন করেন ঠিকই, কিন্তু এর প্রকৃত ক্ষমতা সম্পর্কে অনেকেই অজ্ঞাত। মিটিং শিডিউল করা বা কারও জন্মদিনের রিমাইন্ডার সেট করার বাইরেও এই অ্যাপটি আপনার সম্পূর্ণ কাজের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নিতে পারে। এটি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পাওয়া যায় এবং Gmail ও Google Tasks-এর মতো পরিষেবার সাথে নিঁখুতভাবে কাজ করে।
টাস্ক ম্যানেজমেন্ট এবং টাইম ব্লকিংয়ের সুবিধা
অন্যান্য টু-ডু লিস্ট অ্যাপ যেখানে ব্যর্থ হয়, গুগল ক্যালেন্ডার সেখানে সফল। এর মূল কারণ হলো মনস্তত্ত্ব। সাধারণ টু-ডু লিস্টে আপনি সারাদিনের জন্য ২০টি কাজ লিখে রাখতে পারেন, কিন্তু আপনার হাতে হয়তো সময় আছে মাত্র ৬ ঘণ্টা। এই অবাস্তব তালিকা শেষমেশ হতাশার সৃষ্টি করে।
২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে আসা আপডেটের পর গুগল ক্যালেন্ডার এবং গুগল টাস্কস-এর ইন্টিগ্রেশন বা সমন্বয় আরও শক্তিশালী হয়েছে। এখন আপনি ক্যালেন্ডারের নির্দিষ্ট সময়ের স্লটে আপনার টাস্ক বা কাজ যুক্ত করতে পারেন। এর জন্য যা করতে হবে:
- ক্যালেন্ডারের একটি ফাঁকা স্লট সিলেক্ট করুন।
- ‘Task’ অপশনে ট্যাপ করুন।
- কাজের শিরোনাম এবং বিবরণ যোগ করুন।
এর ফলে আপনার কাজগুলি কেবল “আজ করবো” এমন ইচ্ছার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে, একটি নির্দিষ্ট সময়ের প্রতিশ্রুতিতে বা ‘Time Block’-এ পরিণত হয়। স্ক্রিনে কাজের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা বরাদ্দ করার ফলে আপনি বুঝতে পারবেন কোন কাজ করতে কত সময় লাগবে এবং ভুলবশত একই সময়ে একাধিক কাজ রাখা বা ‘Overbooking’ এড়ানো সম্ভব হবে।
সঠিক রুটিন এবং অভ্যাসের গঠন
গুগল ক্যালেন্ডারে আপনি কাজগুলিকে বারবার রিপিট করার অপশন সেট করতে পারেন, যা নতুন অভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য করে। তবে মনে রাখবেন, কাজের বিবরণ লেখার সময় আলসেমি করবেন না। শুধুমাত্র “Work” বা “কাজ” লিখে রাখলে, কাজ শুরু করার সময় সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে পারেন। তার পরিবর্তে নির্দিষ্ট করে লিখুন কী কাজ করতে হবে। যখন ক্যালেন্ডারের নোটিফিকেশন আসবে, তখন আপনি চিন্তা করতে সময় নষ্ট না করে সরাসরি কাজ শুরু করতে পারবেন।
কালার কোডিং: বার্নআউট এড়ানোর সেরা উপায়
আপনার ক্যালেন্ডারের দিকে একবার তাকান। যদি সব এন্ট্রি ডিফল্ট নীল রঙের হয়, তবে আপনি নিজের কাজের ধরণ সম্পর্কে ভুল ধারণা পোষণ করছেন। সব কাজকে একই রঙে রাখার অর্থ হলো, আপনি একটি কঠিন ৩ ঘণ্টার প্রোজেক্ট এবং ১৫ মিনিটের চা-পানের বিরতিকে সমান গুরুত্ব দিচ্ছেন।
গুগল ক্যালেন্ডারের Color Coding ফিচার ব্যবহার করে আপনি সহজেই আপনার এনার্জি লেভেল ট্র্যাক করতে পারেন:
- উজ্জ্বল লাল (Red): যে কাজগুলোতে প্রচুর মনোযোগ এবং মস্তিষ্কের শক্তি প্রয়োজন, সেগুলোর জন্য লাল রঙ ব্যবহার করুন।
- সবুজ (Green): জিম, লাঞ্চ ব্রেক বা বিশ্রামের সময়ের জন্য সবুজ রঙ বেছে নিন।
- হলুদ (Yellow): বিভিন্ন মিটিং বা আলোচনার জন্য হলুদ রঙ ব্যবহার করতে পারেন।
- নীল (Blue): কম গুরত্বপূর্ণ বা অ্যাডমিন কাজের (যেমন ইমেল চেক করা) জন্য নীল রঙ রাখুন।
যখন আপনি ‘Week View’ বা সাপ্তাহিক ভিউতে ক্যালেন্ডারটি দেখবেন, তখন এটি আর কেবল টেক্সট থাকবে না, বরং একটি ড্যাশবোর্ডে পরিণত হবে। যদি দেখেন পুরো দিনটি লাল রঙে ভরে আছে এবং কোথাও সবুজের ছোঁয়া নেই, তবে আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন যে আপনি ক্লান্তির দিকে এগোচ্ছেন। তখন আপনি সময় থাকতেই কাজের চাপ কমিয়ে রুটিন ঠিক করে নিতে পারবেন।
সুতরাং, জটিল সব অ্যাপের পেছনে না ছুটে গুগল ক্যালেন্ডারের এই সহজ অথচ শক্তিশালী ফিচারগুলি ব্যবহার করে আপনার দৈনন্দিন জীবনকে আরও গুছিয়ে নিন।














