Voter ID Correction: ভোটার তালিকার খসড়া প্রকাশ হওয়ার পরই অনেকের নজরে আসে পরিচয়পত্রে থাকা নানা ভুলভ্রান্তি। কারো নামের বানান ভুল, তো কারো জন্মতারিখ বা ঠিকানায় গরমিল। অতীতে এই সব ছোটখাটো ভুল সংশোধনের জন্য স্থানীয় বিএলও (BLO) বা সরকারি দপ্তরে লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হতো। কিন্তু এখন নির্বাচন কমিশন এই প্রক্রিয়াকে অত্যন্ত সহজ এবং প্রযুক্তি নির্ভর করে তুলেছে। এখন বাড়িতে বসেই নিজের স্মার্টফোন বা কম্পিউটারের মাধ্যমে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ভোটার কার্ড সংশোধন করা সম্ভব। বিশেষ করে আধার ওটিপি (Aadhaar OTP) ভিত্তিক ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া চালু হওয়ায় কাজটি এখন আরও দ্রুত ও স্বচ্ছ হয়েছে।
আজকের প্রতিবেদনে আমরা আলোচনা করব কীভাবে আপনি অনলাইনের মাধ্যমে ভোটার কার্ডের ভুল সংশোধন করবেন এবং এর জন্য কী কী নথিপত্র প্রয়োজন।
ভোটার সার্ভিস পোর্টালে লগইন পদ্ধতি
সংশোধনের কাজ শুরু করার জন্য প্রথমেই আপনাকে নির্বাচন কমিশনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট voters.eci.gov.in-এ প্রবেশ করতে হবে।
- ওয়েবসাইটে গিয়ে ডানদিকের কোণায় থাকা ‘Login’ অপশনে ক্লিক করুন।
- আপনার যদি আগে থেকেই অ্যাকাউন্ট থাকে, তবে রেজিস্টার্ড মোবাইল নম্বর এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করুন।
- যাঁরা নতুন ব্যবহারকারী, তাঁরা ‘Sign Up’ অপশনে গিয়ে নিজের মোবাইল নম্বর ও ইমেল আইডি দিয়ে খুব সহজেই অ্যাকাউন্ট তৈরি করে নিতে পারেন।
- লগইন সম্পন্ন হলে ড্যাশবোর্ডে বিভিন্ন পরিষেবার তালিকা দেখতে পাবেন।
ফর্ম ৮ নির্বাচন এবং সংশোধনের নিয়মাবলি
ভোটার কার্ডে কোনো তথ্য বদলানোর জন্য নির্বাচন কমিশনের নির্দিষ্ট ‘Form 8’ পূরণ করতে হয়।
১. পোর্টালের ড্যাশবোর্ড থেকে ‘Form 8’ (Correction of Entries) অপশনটি বেছে নিন।
২. এরপর সিস্টেম জানতে চাইবে আবেদনটি কার জন্য। নিজের কার্ড হলে ‘Self’ এবং পরিবারের অন্য কারো হলে ‘Other Elector’ সিলেক্ট করে এপিক (EPIC) নম্বর দিয়ে সাবমিট করুন।
৩. সাবমিট করার পর স্ক্রিনে চারটি অপশন ভেসে উঠবে। ভুল সংশোধনের জন্য আপনাকে দ্বিতীয় অপশনটি অর্থাৎ ‘Correction of Entries in Existing Electoral Roll’ বেছে নিতে হবে।
৪. মনে রাখবেন, একটি ফর্মের মাধ্যমে আপনি সর্বোচ্চ চারটি এন্ট্রি বা তথ্য সংশোধন করতে পারবেন।
কী কী তথ্য পরিবর্তন করা সম্ভব?
অনলাইন পোর্টালের মাধ্যমে আপনি নিম্নলিখিত তথ্যগুলি আপডেট করতে পারেন:
- নাম (Name) এবং লিঙ্গ (Gender)
- জন্ম তারিখ (Date of Birth)
- আত্মীয়ের নাম এবং সম্পর্কের ধরন (Relative Type and Name)
- ঠিকানা (Address)
- মোবাইল নম্বর (Mobile Number) এবং ছবি (Photo)
বিবাহিত মহিলাদের জন্য বিশেষ নির্দেশিকা: সদ্য বিবাহিত কোনো মহিলা যদি স্বামীর বাড়ির ঠিকানা এবং স্বামীর নাম ভোটার কার্ডে যুক্ত করতে চান, তবে প্রক্রিয়াটি একটু ভিন্ন। প্রথমে আপনাকে ‘Shifting of Residence’ অপশনটি ব্যবহার করে ঠিকানা পরিবর্তন করতে হবে। ঠিকানা আপডেট হয়ে যাওয়ার পর, দ্বিতীয়বার ফর্ম ৮ পূরণ করে স্বামীর নাম অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। একবারে দুটি কাজ করতে গেলে আবেদন বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
প্রয়োজনীয় নথিপত্র আপলোড (Supporting Documents)
সঠিক নথিপত্র ছাড়া আবেদন গ্রাহ্য হবে না। আপলোড করার জন্য নথির সাইজ অবশ্যই ২ এমবি (2 MB)-র নিচে এবং ফরম্যাট জেপিজি (JPG) বা পিডিএফ (PDF) হতে হবে।
- নাম সংশোধনের প্রমাণ: আধার কার্ড, প্যান কার্ড, পাসপোর্ট অথবা মাধ্যমিকের সার্টিফিকেট।
- জন্ম তারিখ পরিবর্তন: বার্থ সার্টিফিকেট, আধার কার্ড বা প্যান কার্ড।
- সম্পর্কের প্রমাণ: বিবাহিত মহিলাদের ক্ষেত্রে ম্যারেজ রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট।
- ছবি ও মোবাইল নম্বর: এই দুটি পরিবর্তনের জন্য কোনো অতিরিক্ত সাপোর্টিং ডকুমেন্টস আপলোড করার প্রয়োজন নেই।
আধার ই-সাইন (e-Sign) ও চূড়ান্ত সাবমিশন
ফর্মের সমস্ত ঘর সঠিকভাবে পূরণ করার পর এবং প্রয়োজনীয় নথি আপলোড করার পর ‘Preview’ অপশনে ক্লিক করে পুরো তথ্যটি একবার ঝালিয়ে নিন। সব ঠিক থাকলে ‘e-Sign and Submit’ বাটনে ক্লিক করুন।
এখানে আপনাকে আপনার আধার নম্বরটি দিতে হবে। এরপর আধারের সঙ্গে লিঙ্ক থাকা মোবাইল নম্বরে একটি ওটিপি (OTP) আসবে। সেই ওটিপি নির্দিষ্ট স্থানে বসালেই আপনার আবেদন সফলভাবে জমা পড়ে যাবে।
আবেদন জমা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনি একটি রেফারেন্স নম্বর (Reference Number) পাবেন। এই নম্বরটি যত্ন করে লিখে রাখুন। পরবর্তীতে পোর্টালের ‘Track Application Status’ অপশনে গিয়ে এই নম্বরটি দিলেই জানতে পারবেন আপনার ভোটার কার্ড সংশোধনের কাজ কতদূর এগুলো। বিএলও (BLO) ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হলেই আপনার সংশোধিত ভোটার কার্ড তৈরি হয়ে যাবে।














