Bangla News Dunia , পল্লব চক্রবর্তী : কেউ বলেন গণেশের পাশে থাকে বলে গণেশের বউ বা কলাবউ। আসলে সেটি নবপত্রিকা। দেবী দুর্গার পূজার সঙ্গেই জড়িয়ে এই নবপত্রিকার পূজা। নবপত্রিকার পূজা আসলে ইঙ্গিত দেয় মানুষের উৎসব পালন এবং ধর্মাচরণের বহু প্রাচীন রীতির। তাই দুর্গাপুজোর মাহাত্ম্য, তেমনই স্বতন্ত্র তাৎপর্য আছে নবপত্রিকা এবং তার পুজোরও।
প্রথমেই দেখে নেওয়া যাক, কী কী থাকে এই নবপত্রিকায়।
কলাগাছ, গুঁড়ি-কচুর গাছ, হলুদ গাছ, জয়ন্তীর ডাল, বেলের ডাল, ডালিম গাছ, অশোকের ডাল, মানকচুর গাছ ও ধানের গাছ। এই ন-টি গাছ আবশ্যক নবপত্রিকা রচনায়। বেলতলায় যেমন দেবী দুর্গার অধিবাস হয়, নবপত্রিকারও অধিবাস হয়। কলাগাছ হন ব্রাহ্মণী। ব্রাহ্মণীর বিভূতি লক্ষ করা যায় কলাগাছের মধ্যে, তাই হয়তো এইরকম সংযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গুঁড়ি-কচু হন দেবী কালিকা। হরিদ্রা হন দেবী দুর্গা স্বয়ং। এক্ষেত্রে গাত্রবর্ণ তুলনীয়। বর্ষাশেষে সতেজ হলুদ গাছ যে উৎসবের অঙ্গীভূত হয়ে উঠতে পারে। জয়ন্তীর অধিষ্ঠাত্রী দেবী কার্তিকী। দেবসেনাপতি কার্তিক থেকে দেবতাদের জয় সূচিত হয়, সেই অর্থে জয়ন্তী আর দেবী কার্তিকী মিলেমিশে একীভূত হয়ে গিয়েছেন। বেল গাছ শিবের প্রিয়, তা আমরা সকলেই জানি। বেলের অধিষ্ঠাত্রী তাই শিবা। ডালিম গাছে রক্তদন্তিকার অধিষ্ঠান। দাড়িমের রং এবং আকারের সঙ্গে এহেন সংযোগের সাদৃশ্য লক্ষিত হয়।
অশোকের অধিষ্ঠাত্রী দেবী শোকরহিতা। মানকচুগাছে অধিষ্ঠাত্রী দেবী চামুণ্ডা। আর ধানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী লক্ষ্মী। দেবী দুর্গার পুজো শুরু হয় সপ্তমীর দিন। সেদিন সকালে হয় নবপত্রিকার স্নান। পাট অর্থে রেশমের দড়ি বোঝায়, যদিও এখন নিয়ম অনুযায়ী সামান্য রেশম রাখা হয়। সেটিকে নিয়ে যাওয়া হয় বেলতলায়। নানা ঘটের জলে স্নান করানো হয় নবপত্রিকাকেও। বিধিমতে পুজো করে সেটিকে স্থাপন করা হয় দুর্গাপ্রতিমার ডান পাশে। গণেশের ঠিক পাশটিতে থাকে বলে কেউ কেউ একে বলে থাকেন কলাবউ।
শরৎকালে দুর্গাপুজোর প্রচলন রামচন্দ্রের হাত ধরে, এমনটাই আমরা জানি। চণ্ডীতে উল্লেখ আছে, শরৎকালের এক মহাপুজোর কথা। সেখানে দেবীমাহাত্ম্য পাঠের উল্লেখও আছে। কিন্তু পূজাটি সঠিক যে কী, তা স্পষ্ট নয়। বিশেজ্ঞদের মতে, এই পূজাই হল নবপত্রিকা পূজা।
আরও খবর পেতে ফলো করুন আমাদের চ্যানেল